জয় দিয়ে শুরু করল বাংলাদেশ
৩৩০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৫০ রানে গুটিয়ে গেছে পাকিস্তান। ফলে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানের বিশাল জয় পেয়েছে টাইগাররা।
সেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার পথে এগিয়ে যাওয়া। টেস্ট ক্রিকেটের দশম সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অনেক স্মরণীয় জয়ের আনন্দে মেতেছে, হারিয়েছে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াসহ প্রতিটি টেস্ট দলকে। শুধু পাকিস্তানকে হারানো যাচ্ছিল না। বছর তিনেক আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে জিততে-জিততেও মাত্র দুই রানে হেরে যাওয়ার দুঃখ আজও ভুলতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেট-ভক্তরা। অবশেষে সেই মিরপুরেই পাকিস্তান পরাজিত। প্রথম ওয়ানডে ৭৯ রানে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৩৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে গেছে পাকিস্তান।
অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে ভালোই খেলেছেন আজহার আলী। ৭৩ বলে ৭২ রান করেছেন তিনি। হারিস সোহেল করেছেন ৫১ রান। তৃতীয় উইকেটে তাঁরা গড়েছিলেন ৮৯ রানের জুটি। এই দুজনই ফিরে গেছেন তাসকিন আহমেদের শিকার হয়ে। পরে আট রান করা ওয়াহাব রিয়াজের উইকেটও তুলে নিয়েছেন এই তরুণ ডানহাতি পেসার।
তাসকিনের পাশাপাশি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের ভালোই ভুগিয়েছেন আরাফাত সানি। ৪০তম ওভারে পাকিস্তান শিবিরে জোড়া আঘাত হেনেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। তাঁর ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেছেন ফাওয়াদ আলম (১৪) ও সাদ নাসিম (০)। তার আগে ২৪ রান করা ওপেনার সরফরাজ আহমেদের উইকেটও গেছে সানির ঝুলিতে। ৫৮ বলে ৬৭ রান করা মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট নিয়েছেন রুবেল হোসেন। শেষ ব্যাটসম্যান জুনায়েদ খানকে এলবিডব্লিউ করে পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছেন সাকিব।
৩৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয়েছিল পাকিস্তানের। তবে উদ্বোধনী জুটিতে ৫৩ রান ওঠার পর পাকিস্তান হারায় প্রথম উইকেট। একাদশ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে নাসির হোসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়েছেন সরফরাজ আহমেদ (২৪)। সানির পরের ওভারে আবার সাফল্য। সৌম্য সরকারের দারুণ থ্রোয়ে রানআউট হয়ে গেছেন মোহাম্মদ হাফিজ (৪)। তারপরও ভালোই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক আজহার ও হারিস সোহেল। তৃতীয় উইকেটে তাঁরা গড়েছিলেন ৮৯ রানের জুটি। তবে ২৮তম ওভারে তাঁকে কট বিহাইন্ড করে বাংলাদেশ দলে স্বস্তি ফিরিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ৩২তম ওভারে আবার পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হেনেছেন এই ডানহাতি পেসার। এবার তাঁর শিকার হয়েছেন হারিস সোহেল।
এর আগে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত শতকে ছয় উইকেটে ৩২৯ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের রেকর্ডেও প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। গত বছরের এশিয়া কাপে যে ম্যাচে ৩২৬ রান করেও হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার পথে তামিম-মুশফিক গড়েছেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭৮ রানের জুটি।
বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রান ছাড়া বলার মতো তেমন কিছু করতে পারেননি তামিম। এ নিয়ে কম সমালোচনা সইতে হয়নি তাঁকে। শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক করে সব সমালোচনার জবাব দিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ১৩৫ বলে ১৩২ রানের দারুণ ইনিংসটি খেলার পথে তিনি মেরেছেন ১৫টি চার ও তিনটি ছয়। তামিমের পর শতকের দেখা পেয়েছেন মুশফিকও। ৭৭ বলে ১০৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পথে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৩টি চার ও দুটি ছয়। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতকের জন্য মুশফিক অবশ্য ধন্যবাদ দিতে পারেন জুনায়েদ খানকে। ২৯তম ওভারে আজহার আলীর বলে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন জুনায়েদ। সে সময় মুশফিক ব্যাট করছিলেন ৩৫ রান নিয়ে।
তৃতীয় উইকেটে তামিম-মুশফিকের ১৭৮ রানের রেকর্ড জুটিই বাংলাদেশের বিশাল সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছে। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে ১৭৫ রানের জুটি গড়া রাজিন সালেহ ও হাবিবুল বাশারের দখলে এতদিন ছিল রেকর্ডটা।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটাও ভালোই হয়েছিল। ১৪তম ওভারে সৌম্য সরকার রানআউট হয়ে যাওয়ায় প্রথম ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৮ রান ওঠার পর দুর্ভাগ্যবশত রানআউটের ফাঁদে পড়েন সৌম্য। আউট হওয়ার আগে তিনি ৩৬ বলে করেছেন ২০ রান। রাহাত আলীর করা ২০তম ওভারের শেষ বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ আউট হয়েছেন মাত্র পাঁচ রান করে। শেষ দিকে সাকিবের ২৭ বলে ৩১ রানের ‘ক্যামিও’ ইনিংস সোয়া তিনশর ওপরে নিয়ে গেছে বাংলাদেশকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩২৯/৬ (তামিম ১৩২, সৌম্য ২০, মাহমুদউল্লাহ ৫, মুশফিক ১০৬, সাকিব ৩১, সাব্বির ১৫, নাসির ৩*; ওয়াহাব ৪/৫৯, রাহাত ১/৫৬)
পাকিস্তান : ৪৫.২ ওভারে ২৫০ (আজহার ৭২, সরফরাজ ২৪, হাফিজ ৪, হারিস ৫১, রিজওয়ান ৬৭, ফাওয়াদ ১৪, নাসিম ০, ওয়াহাব ৮, আজমল ০, জুনায়েদ ০, রাহাত ১*; সানি ৩/৪৭, তাসকিন ৩/৪২, সাকিব ১/৪৫, রুবেল ১/৪৫)
ফল : বাংলাদেশ ৭৯ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম