মাঠে নেমে ভোট চাইলেন খালেদা জিয়া
সরকারি দল কর্তৃক হত্যা, গুম, লুটতরাজ, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদ এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার থেকে অনেকটা হঠাৎ করেই তিনি ঢাকায় জোটের দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও মির্জা আব্বাসের জন্য আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ শুরু করেছেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০ দল সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে বিজয়ী করার জন্য ‘বাস’ মার্কার পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগে নিজেই মাঠে নেমে জনে জনে ভোট চাইলেন বেগম খালেদা জিয়া। নিজের হাতে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তাবিথের লিফলেটও বিতরণ করেছেন তিনি। সবাইকে সরকারের আগ্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ ও আগামীতে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে তাবিথকে বিজয়ী করার অনুরোধ জানান। এ ছাড়া অন্যদিনের ন্যায় গতকালও জোটের মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নগরীর বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ করেছেন। এসব প্রচারণায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। গণসংযোগকালে প্রার্থীরা সরকারি দল ও পুলিশের পক্ষ থেকে হয়রানি ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান। এমনকি ভোটের আগে নেতাকর্মী গুমের আশংকার কথাও জানান। প্রচারণায় প্রার্থীরা আবারো নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান।
সূত্র মতে, শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কাউকে কিছু না জানিয়েই বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসা থেকে বের হন। এরপর ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন তিনি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও থামার লক্ষণ দেখা যায়নি তার। রাতেও চালিয়েছেন জোটের এই শীর্ষ নেতা।
বিকেলে শুরু করেন গুলশান-২ নম্বর এলাকায়। এই এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে গণসংযোগে তাবিথের পক্ষে ভোট চান খালেদা জিয়া। দোকানে দোকানে লিফলেটও বিতরণ করেন নিজ হাতে। হঠাৎ নির্বাচনে মাঠে খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় ব্যাপক জনসমাগম দেখা যায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তাবিথের পক্ষে লিফলেট বিতরণসহ সব কাজ চলে জমজমাটভাবে। জনগণের মাঝেও ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা যায়। এরপর গুলশান ২ নম্বর থেকে গুলশান ১ নম্বরে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কিছু সময় যানজটে আটকা পড়ে। পরে গুলশান ১ নম্বরের নাভানা টাওয়ারে গিয়ে জনগণের কাছে ভোট চান তিনি। তিনি সবার হাতে হাতে তাবিথের পোস্টার তুলে দেন। সেখান থেকে বেরিয়ে বাড্ডা লিংক রোডে যান। এরপর মার্কিন দূতাবাসের সামনে দিয়ে গুলশান ২ নম্বরের ডিসিসি মার্কেটে যান। সেখানেও জনে জনে ভোট চান বেগম জিয়া। তার এমন প্রচারণায় অনেকেই আর্শ্চয্য হয়ে উঠেন। বেগম জিয়াকে কাছে পেয়ে অনেকেই কুশল বিনিময় করেন। অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, বেগম জিয়া তাদের কাছে ভোট চাইতে আসবেন।
খালেদা জিয়া এরপর যান বনানী সুপার মার্কেটে। সেখান থেকে বনানী ১১ নম্বরের দিকে রওয়ানা দেন। সেখানে তাবিথ আউয়াল তার সঙ্গে মিলিত হয়ে যৌথভাবে গণসংযোগ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণসংযোগকালে খালেদা জিয়া হাত নেড়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি কখনো হেঁটে আবার কখনো গাড়িতে দাঁড়িয়ে প্রচারণায় অংশ নেন। সন্ধ্যা ৭টার পর তিনি মহাখালী এলাকায় গণসংযোগ করেন। সেখানে বাস টার্মিনালে গিয়ে ভোট চান খালেদা জিয়া। সেখানে কয়েকজন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকার অন্যতম স্থান হাতিরঝিলে যান খালেদা জিয়া। সেখানে উপস্থিত জনসাধারণের কাছে ভোট চাইছেন তিনি। জনগণকে তাবিথকে বিজয়ী করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। এ সময় খালেদা জিয়ার দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার তাবিথের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়ায় দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন মাস পর প্রথমবারের মতো কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেখা গেল খালেদা জিয়াকে। এর আগে গত ১৪ এপ্রিল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।