হাহাকারদীর্ণ ইয়ারমুক ও বিশ্ব মানবতা
১৯৪৮ সালে ইসরাইল অস্তিত্বে আসার পর থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ফিলিস্তিনী প্রাণ রক্ষার্থে এসে আশ্রয় নেন সিরিয়ায়। তাদের বসবাস সিরিয়ায় খুব সুখকর সাব্যস্ত হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রতি মুহূর্তে শত্রুর হামলায় মৃত্যুর ভয় থেকে তারা নিষ্কৃতি পান। দারিদ্র্যের মধ্যেও মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন তারা যাপন করতে থাকেন। কিন্তু এই শরণার্থীর জীবনযাত্রাও তাদের ভাগ্যে সয়নি। সিরিয়ার শাসক বাশার আসাদ ২০১২ ডিসেম্বরে শুরু করেন স্বদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ইয়ারমুক ছিল সিরিয়ায় ফিলিস্তিনীদের বসবাসস্থল। বিদ্রোহীদের গোপন আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে অভিযোগ তুলে আসাদ ইয়ারমুক অবরোধ করেন।
ইয়ারমুকে খাদ্য, পানি ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অনাহার-ক্লিষ্ট ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনীদের হাহাকারে ভরে যায় ইয়ারমুকের আকাশ-বাতাস।
অসংখ্য শিশু-মৃত্যুর এবং অনাহারে নেতিয়ে পড়া ফিলিস্তিনীদের মর্মান্তিক করুণ জীবনাবস্থা বিবিসি ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ক্যামেরাবন্দি করে ছড়িয়ে দিতে থাকে বহির্বিশ্বে। মাত্রাধিক পুষ্ট ভোজনে স্থূলতা সমস্যায় আক্রান্ত পাশ্চাত্য আরামকেদারায় শুয়ে বসে উপভোগ করতে থাকে মানুষরূপী ফিলিস্তিনীদের মানবেতর জীবনের দুর্দশার চিত্র-সিনেমার দৃশ্যের মতো। নীতিবোধ ও ঔচিত্য চেতনার অধিকারী মানুষের বসবাসস্থল এই বিশ্ব সত্যিই এক অদ্ভূত স্থান বটে।
ইয়ারমুকের ৯০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে আইএস-এর দখলে। বহু ফিলিস্তিনী মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্যেরা যে যেদিকে সম্ভব পালিয়েছেন। ইয়ারমুকে বর্তমানে রয়ে গেছেন ১৮ হাজার ফিলিস্তিনী। এই ফিলিস্তিনীদের ইয়ারমুক থেকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত এক শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি বর্তমানে ইয়ারমুক সফর করছেন ফিলিস্তিনীসহ অন্যান্য সিরীয় শরণার্থীদের সম্মুখীন সংকটে জাতিসংঘের করণীয় স্থির করার জন্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএস-এর মতো কথিত জঙ্গি সংগঠনের অভ্যুদয় যেখানে সম্ভব হতে পেরেছে সেই মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক সংকটকে গৌনে রেখে শুধুমাত্র শরণার্থীদের অস্তিত্ব সংকট নিরসনে নিজেকে ব্যস্ত রেখে জাতিসংঘের বিশেষ দূত মহোদয় যথাকর্তব্য সমাধান করেছেন-দাবি করতে পারবেন না।
নিরাপত্তা পরিষদ ইতোমধ্যে সোমবার এক জরুরি বৈঠক ডেকেছে। পর্যবেক্ষকরা প্রস্তাব করেছেন, ফ্রি সিরিয়ান আর্মিসহ আসাদ বিরোধী অন্যান্য গোষ্ঠীকে বৈঠকে যেন আহ্বান জানানো হয়। তাদের মতে, সিরীয় যুদ্ধে জড়িত বিভিন্ন প্রবল পক্ষকে সংকট লাঘব চেষ্টায় অন্তর্ভুক্ত না করলে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকের সমস্যার কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যেই সাড়ে তিন হাজার শিশুর জীবন বিপন্ন প্রায়। জর্দান, লেবানন ও মিসর সবাই সিরিয়া ছেড়ে পলায়নপর ফিলিস্তিনীদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ইরাকে প্রবেশও তাদের জন্য নিরাপদ নয়, কারণ ইরাকের বিস্তৃত এলাকা এখনও আইএস অধ্যুষিত।
শরণার্থীদের জন্য নিজের দরজা উন্মুক্ত রেখেছে একমাত্র তুরস্ক।