বাংলাদেশের সিরিজ জয়
জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডের পর এবার ‘শিকার’-এর তালিকায় যোগ হল পাকিস্তানের নাম, রচিত হল বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরেকটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৬ বছর পর পাকিস্তানকে হারানোর আনন্দ উপভোগ করতে-করতে সিরিজও জিতে নিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের টানা দ্বিতীয় শতক এবং মুশফিকুর রহিমের আরেকটি চমৎকার ইনিংসের সুবাদে দ্বিতীয় ওয়ানডেও সহজেই সাত উইকেটে জিতে নিয়েছে মাশরাফির দল। আগামী বুধবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেও জিততে পারলে পাকিস্তানকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করার উচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেও থেমে নেই তামিম ইকবালের ব্যাট। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ‘ম্যাজিক ফিগার’ স্পর্শ করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তামিমের শতকের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতকের সুবাদে সহজ জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। ২৪০ রানের জয়ের জন্য লক্ষ্যে ৭১ বল হাতে রেখে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। মুশফিক ৬৫ রান করে আউট হয়ে গেলেও ১১৬ বলে ১৭টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ১১৬ রানের চমৎকার ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তামিম।
বাংলাদেশকে ঝড়ো সূচনা এনে দেয়ার কৃতিত্ব সৌম্য সরকারের। জুনায়েদ খানের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে টানা তিনটি চার মেরে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি উত্তাল করে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ১১ বলে সৌম্যর সংগ্রহ ১৭ রান। ১৫তম ওভারে সাঈদ আজমলের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহও। বিশ্বকাপে দুটো সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহর অবদানও ১৭ রান। এরপর তৃতীয় উইকেটে ১১৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে সহজ জয়ের পথে নিয়ে যান মুশফিক ও তামিম।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ছয় উইকেটে ২৩৯ রান করেছে পাকিস্তান। ৭৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া অতিথিদের উদ্ধার করার কৃতিত্ব সাদ নাসিম আর ওয়াহাব রিয়াজের। নাসিম ৭৭ আর ওয়াহাব অপরাজিত ছিলেন ৫১ রানে।
পাকিস্তান শুরুটা করেছিল সতর্কতার সাথে। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৬ রান যোগ করেন সরফরাজ আহমেদ ও আজহার আলী। অষ্টম ওভারে বোলিং করতে এসেই আঘাত হেনেছেন রুবেল হোসেন। প্রথম বলেই সরফরাজ আহমেদকে আউট করেছেন এই আলোচিত পেসার। স্লিপে ক্যাচটা দারুণভাবে তালুবন্দী করেছেন সৌম্য সরকার।
পরের ওভারে মোহাম্মদ হাফিজকে বোল্ড করেছেন আরাফাত সানি। শূন্য রানে ফিরতে হয়েছে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে। ১৬তম ওভারে সাকিব আল হাসানকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন আজহার। পাকিস্তানের অধিনায়কের অবদান ৩৬ রান।
পরের ওভারেই ফাওয়াদ আলম বোল্ড হয়ে গেছেন নাসির হোসেনের বলে। ২২তম ওভারে আবার পাকিস্তানকে ধাক্কা দেন সাকিব। এবার বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার এলবিডব্লিউ করেন মোহাম্মদ ফাওয়াদকে।
ষষ্ঠ উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম। কিন্তু ৩৯তম ওভারে সোহেলকে আউট করে পাকিস্তানকে আবার অস্বস্তিতে ফেলে দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে সপ্তম উইকেটে ৬৬ বলে ৮৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে পাকিস্তানকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন নাসিম ও ওয়াহাব রিয়াজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান : ৫০ ওভারে ২৩৯/৬ (আজহার ৩৬, সরফরাজ ৭, হাফিজ ০, হারিস ৪৪, ফাওয়াদ ০, রিজওয়ান ১৩, সাদ ৭৭*, ওয়াহাব ৫১*; সাকিব ২/৫১, নাসির ১/১৭, রুবেল ১/২৭, সানি ১/৪১, মাশরাফি ১/৫২)
বাংলাদেশ : ৩৮.১ ওভারে ২৪০/৩ (তামিম ১১৭*, সৌম্য ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৭, মুশফিক ৬৫, সাকিব ৭*; আজমল ১/৪৯, জুনায়েদ ১/৬১)
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী