নিহতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে
ভয়াবহ ভূমিকম্প : শুধু লাশের সারি
সারি সারি লাশ। এই সারি আরও দীর্ঘ হচ্ছে। শনিবার রিখটার স্কেলের ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পটি কাপিয়ে দিয়েছে নেপালকে। রোববারও দ্বিতীয় দফায় আঘাত হেনেছিল ভূমিকম্প। তবে এর মাত্রা ছিল ৬.৭। শনিবারের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৭ হাজারেরও বেশি। এদিকে ভূমিকম্পে যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে তারা রোববার খোলা আকাশে নিচে দ্বিতীয় রাত কাটিয়েছেন। এখনও পর্যাপ্ত ত্রান এসে না পৌঁছানোয় খাদ্য ও পানীয় সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাসপাতালে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় হতাহতদের খোলা আকাশের নিচেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
শনিবার সকালে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয় নেপালে। রাজধানী কাঠমান্ডু ও পোখারার মধ্যবর্তী লামজুং এলাকা ছিল এটির উৎপত্তিস্থল। গত ৮০ বছরের ইতিহাসে এটি ছিল নেপালের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রোববার দুপুরে নতুন করে রিখটার স্কেলে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে দেশটিতে। ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে।
সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে চার হাজার দুইশ’ ৯৫ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন নেপালের সরকারি কর্মকর্তারা। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে এ সংখ্যা আরও তিনগুণ বাড়তে পারে। কারণ এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন। খোঁজ নেই কয়েক হাজারের। শুধু কাঠমান্ডুতেই ১ হাজার ১৫২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুশ-তিনশ থেকে শুরু করে হাজারের মতো বাসিন্দা রয়েছে এমন অনেকে গ্রাম পুরোটাই পাথরের নিচে চাপা পড়ে গেছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের মুখপাত্র ম্যাট দারভাস বলেছেন, অবস্থা এমন যে সেখানে কেবল হেলিকপ্টার যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেনাবাহিনীসহ স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে সময় লাগছে। রোববার দ্বিতীয় দফা ভূমিকম্পের কারণে বিকেলে পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা স্থগিত ছিল। পরিস্থিতির কারণে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে নেপাল সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য দিপক পান্ডে বলেন, ‘আমরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং পুরো দেশ থেকে উদ্ধারের আবেদন আসছে।’ যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে অথবা যাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোববার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন তারা। আবার অনেকে ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাইছেন না। রাজধানী কাঠমান্ডুর প্যারেড গ্রাউন্ডে তাদের জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে দেশের প্রেসিডেন্টকেও।
রোববার সারা রাত তাঁবুর মধ্যেই কাটিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদব। প্রেসিডেন্টের দেড়শ’ বছরের পুরনো দফতর-আবাসন ‘শীতল নিবাস’-এ একাধিক জায়গায় ফাটল ধরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার বাসগৃহও।
এদিকে এখন পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী না আসায় ওষুধ, খাদ্য ও পানীয় সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে খোলা আকাশের নিচে রাতযাপনকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। বার্তা সংস্থা আল জাজিরার সংবাদদাতা কাঠমান্ডু থেকে জানান, অসংখ্য লোক খাদ্য ও পানীয় ছাড়া রাস্তায় রাত কাটিয়েছে। তাদের এ অবস্থায় ফেলে রাখার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।