ব্রিটেনের নির্বাচনে চমকে দেবে নতুন দলগুলো

UK Voteআর কয়েকদিন পরেই ব্রিটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচন। সঙ্গত কারণেই আলোচনার টেবিলে ঝড় তুলছে লেবার, কনজারভেটিভ এবং লিবারেল ডেমোক্রেটের মতো সামনের সারির দলগুলো। কিন্তু আপাতত আলোচনার টেবিলে ঝড় তুললেও দিন শেষে নতুন কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভোটের হিসাব এলোমেলো করে দেবে। চলমান ভোট পরিস্থিতি সরেজমিনে ঘুরে এসে এমন মন্তব্যই করছেন বিশ্লেষকরা। বেশ কিছু ইস্যুতে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘আস্থাহীন’ হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে মূলত নতুনরা চমকে দেবে।
ব্রিটেনের আর দশজন নাগরিকের মতোই আসন্ন নির্বাচনে নিয়ে বেশ উৎসাহী কার্ল ওয়াকম্যান। ১৯৮০ সালে কনজারভেটিভের মার্গারেট থ্যাচারকে ভোট দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৯০ সালের শেষ দিকে এসে ভোট দেন লেবার পার্টির টনি বেস্নয়ারকে। কিন্তু আগামী নির্বাচনে কনজারভেটিভ এবং লেবার পার্টি_ এ দুই দলের কোনোটার ওপরই আস্থা রাখতে পারছেন না ৪৯ বছর বয়সী ওয়াকম্যান। এই দুই দল কয়েক দশক ধরে ব্রিটেনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এলেও তাদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণেই নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের সন্ধান করছেন ওয়াকম্যান।
সবশেষ লেবার পার্টি ক্ষমতায় থাকার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্কের টানাপড়েন। তার ওপর গণঅভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও দলটি পরিপক্কতা দেখাতে পারেনি। এছাড়া দেশের সার্বিক অর্থ-ব্যবস্থা নিয়েও গোলমাল পাকিয়েছিল দলটি। এসব কারণে লেবার পার্টিকে পছন্দের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে হিসাব কষছেন ওয়াকম্যান।
ঠিক একইভাবে কনজারভেটিভকেও পছন্দের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এ ধরনের বড় দলগুলো তার মতো মধ্য-আয়ের মানুষের জন্য তেমন কিছু করছে না বলে অভিযোগ ওয়াকম্যানের। এজন্যই ৭ এপ্রিলের নির্বাচনে ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টিকে (ইউকেআইপি) ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন তিনি। কারণ দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং গণঅভিবাসন নিয়ে সরকার ভূমিকার সমালোচনা করেছে এবং ক্ষমতায় গেলে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে। সরকার গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলে ব্রিটেনকে ইইউ-এর গ-ির বাইরে নিয়ে আসবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির প্রধান। মূলত এসব কারণেই ইউকেআইপিতে আস্থা রাখছেন কার্ল ওয়াকম্যানের মতো অনেক নাগরিক।
ইউকেআইপি ছাড়া আসন্ন নির্বাচনে অন্য যে দলটি সাড়া জাগাতে পারে, সেটি হলো_ স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)। ২০১০ সালের নির্বাচনে ১.৭০ ভাগ ভোট এবং মাত্র ছয়টি আসনে জিতলেও এবারের নির্বাচনে ৪০-৫৯ আসনে জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে দলটির। ফলশ্রতিতে এসএনপি সরকার গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত বিশ্লেষক রিচার্ড উডস-এর। তবে এ ধরনের কিছু হলে এ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা স্কটল্যান্ডকে ব্রিটেনের কাছ থেকে আলাদা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। অপরদিকে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির মতো লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি ওয়েলসকে স্বাধীন করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে এ ধরনের সব ঘোষণার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের ওপর।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটি গ্লুচেস্টার। সেখানেই ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টির একক আধিপত্য ছিল। এরপর ১৯৭৯ সালে এসে গ্লুচেস্টার আরো বেশি আলোচিত হয়ে ওঠে। প্রচলিত মিথ, এই গ্লুচেস্টারে যারাই জয়ী হয়, তারাই সরকার গঠন করে। কিন্ত এবার গ্লুচেস্টারের যা পরিস্থিতি, তাতে লেবার বা কনজারভেটিভ পার্টি আগের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সাম্প্রতিক এক জরিপেই বেরিয়ে এসেছে তথ্যটি। সেক্ষেত্রে লেবার পার্টি এবং কনজারভেটিভ পার্টির ভোটে ভাগ বসাবে ইউকেআইপি। এছাড়া গ্রিন পার্টি এবং লিবারেল ডেমেক্রেটরাও গ্লুচেস্টার থেকে খালি হাতে ফিরবে না বলে জানালেন বিশ্লেষক এস্টেলে শিরবন।
বেশ কয়েক দশক ধরে লেবার এবং কনজারভেটিভের মতো পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী দলগুলো সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় নতুনদের সুযোগ দেয়ার পক্ষে দেশটির জনগণের একটি অংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ব্রিটেনের রাজনীতিতে ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টিকে (ইউকেআইপি), স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) এবং গ্রিন পার্টির মতো দলগুলো চমক জাগাবে। যার প্রমাণ ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেখা যাবে বলেই বিশ্বাস করেন অনেকেই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button