যে কারণে ভুরি বাড়ে
স্থূলতা একটি বিশ্বজনীন সমস্যা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ছ’জনে একজন স্থূলতার শিকার৷ মুটিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে জবুথুবু সকলেই৷ এই অবস্থায় স্থূলতা-জিনের হদিশ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের খোঁজ দেবে, এমনটাই আশা গবেষকদলের৷
গবেষণালব্ধ ফলাফল অনুযায়ী, যে জিনের জন্য মানুষের ভুঁড়ি ও মেদবাহুল্য, তার নাম ‘এফটিও’৷ ‘এফটিও’-র সক্রিয়তায় খিদের অনুভব জাগানো হরমোন ‘ঘ্রেলিন’ ক্ষরণের হার বহুগুণ বেড়ে যায়৷ ফলে চনমনিয়ে খিদে পায়৷ পেট যত ভরতে থাকে, রক্তে এই হরমোনের মাত্রাও তত কমতে থাকে৷ যদিও ‘এফটিও’ কী ভাবে ঘ্রেলিন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে, তা এখনো গবেষণা-সাপেক্ষ৷
মানবকোষে ‘এফটিও’ জিনের সংখ্যা দুই৷ জিনের দু’টি কপির একটি আসে মায়ের কাছ থেকে এবং আর একটি বাবার৷ মোটাদের শরীরে এই জিন অতিসক্রিয়৷ আর মেদবহুল বাবা ও মায়ের ক্ষেত্রে সন্তানের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ৭০ শতাংশ বেশি৷ তাই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে ‘এফটিও’ সক্রিয়তা একটি নির্দিষ্ট হারে বেঁধে দিয়ে স্থূলতা নামক জুজুর হাত থেকে অব্যাহতির পথ খুঁজতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা৷
তার আগে অবশ্য মোটা হওয়ার সঙ্গে এই জিনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ২০ জনকে নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে৷ প্রথমেই ‘এফটিও’-র সক্রিয়তা বিশ্লেষণ করে স্বেচ্ছাসেবীদের দু’টি দলে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে৷ গবেষণার প্রাথমিক স্তরে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের রক্তে ঘ্রেলিনের মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে৷ দেখা গিয়েছে, যে দলের ক্ষেত্রে ‘এফটিও’ অতিসক্রিয়, তার প্রতিটি সদস্যের রক্তে ভরপেট খাবারের পরও এতটুকু কমেনি ঘ্রেলিনের মাত্রা৷ আবার কারও কারও ক্ষেত্রে আরও বেড়ে গিয়েছে ওই হরমোনের মাত্রা৷ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খিদে-বোধও৷ যার নেট ফল, ভুরিভোজ৷ আর মোটা হওয়ার এটাই তো অন্যতম প্রধান কারণ, তাই নয় কি?
অতিসক্রিয় ‘এফটিও’ অতিরিক্ত ক্যালোরি-যুক্ত খাবারের প্রতি মানুষের মনে দুর্বলতার জন্ম দেয় বলেই দাবি ওই গবেষকদলের৷ পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর সময়ই বিষয়টি গবেষকদের সামনে আসে৷ খিদে-বোধ যখন চরমে, সেই সময় স্বেচ্ছাসেবীদের সামনে বিভিন্ন খাবার রেখে দেখা গিয়েছে অতিসক্রিয় ‘এফটিও’ দলের অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা ফ্যাটজাতীয় খাবারের প্রতিই দুর্নিবার আকর্ষণ অনুভব করেছেন৷
ইউনিভার্সিটি কলেজের স্থূলতা বিষয়ক গবেষক র্যাচেল ব্যাটারহ্যাম বলেন, ‘পারিবারিক কারণে অনেকে মোটা হলেও, স্থূলতার পিছনে এফটিও-র ভূমিকাও অস্বীকার করার নয়৷ যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও অনেক কাজ বাকি৷ তবে এটুকু বুঝেছি, যাদের এফটিও খুব সক্রিয়, তাদের মস্তিষ্কে অদ্ভুত প্রোগ্রামিং কাজ করে৷ এরা জাঙ্ক ফুড দেখলে কিছুতেই আর নিজেদের ধরে রাখতে পারে না৷’