ব্রিটেনে শেষ মুহূর্তে তুমুল প্রচারণা
ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি; অর্থাৎ ৭ মে। তাই বর্তমানে তুমুল ব্যস্ত সময় কাটছে নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর। সেই দৌড়ে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবং বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রার্থীরাই। প্রচারণায় কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীরা কর এবং লেবার পার্টির প্রার্থীরা স্বাস্থ্য খাতকে সামনে তুলে আনছেন। অন্যদিকে, দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটসের প্রার্থীরা ব্যাংক জরিমানা ক্যান্সার চিকিৎসায় খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এদিকে, সোমবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন স্কটিশ লেবার নেতা জিম মারফি।
সোমবারের প্রচারে কনজারভেটিভ প্রার্থী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটিশদের শক্তিশালী অর্থনীতি এবং উন্নততর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি আয়কর নিয়েও আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, টোরি সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে অন্তত তিন কোটি ব্রিটিশ কর কর্তনের সুযোগ পাবে। দলের আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি দাবি করেন, এবারকার নির্বাচনে স্কটল্যান্ডের শক্তিশালী দল এসএনপি থেকে লেবার পার্টি কোনো সহযোগিতাই পাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপের ফল অনুযায়ী স্কটল্যান্ডে এসএনপি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
ক্যামেরন এ সময় ঘোষণা করেন, ‘আগামী শুক্রবারের মধ্যেই আপনারা আমাকে অথবা এড মিলিব্যান্ডকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পাবেন। এটা খুবই সহজ। আপনাদের অবশ্যই এই দুইয়ের মধ্যে পছন্দ নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাকে আপনারা পছন্দ করলে পাবেন একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল সরকারব্যবস্থা, আর তাকে (মিলিব্যান্ড) পছন্দ করলে পাবেন একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা।’
অন্যদিকে, লেবার পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এডওয়ার্ড মিলিব্যান্ডের মতে, ২০১৫ সালের নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে তরুণদের স্বাস্থ্য, মজুরি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘দুটি ভিন্ন স্বপ্নের মধ্যে দ্বন্দ্ব’। বিবিসি রেডিও-ফোরকে সোমবার দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এ রকম নির্বাচন এক প্রজন্মের জন্য একবারই আসে। এটা কি খেটে খাওয়া মানুষের নির্বাচন, নাকি ধনী ও শক্তিশালীদের? সেটাই হচ্ছে আমার এবং ক্যামেরনের মধ্যে পছন্দের পার্থক্য। অসংখ্য মানুষ নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর একটি প্রধান কারণ হলো, কোনো নেতাই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন না।’
লিবারেল ডেমোক্রেটসের নেতা নিক ক্লেগ ১৭ কোটি ৭০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যাংক জরিমানা উচ্চমূল্যের ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্র কিনতে খরচ করবেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া দেশটির ২০টি বিমান অ্যাম্বুল্যান্স সংস্থার জন্য আরো পাঁচ কোটি পাউন্ড অর্থ খরচের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। উল্লেখ্য, সুদের হার জালিয়াতির কারণে জার্মানির ডয়েচে ব্যাংককে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা করে আমেরিকা এবং ব্রিটিশ প্রশাসন। ক্লেগ বলেন, ‘যখন কোনো ব্যাংককে জরিমানা করা হয়, তা থেকে পাওয়া অর্থ জনসেবা খাতেই খরচ করা উচিত। অন্যদিকে, ব্রিটেনের অভিবাসন ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন দেশটির গ্রিন পার্টির নেতা নাটালি বেনেট।
সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপের ফল অনুযায়ী, কোনো দলই এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। তাই ঘুরেফিরেই আসছে সম্ভাব্য জোট সরকারের ইঙ্গিত। ব্রিটেনের ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, দুটি দলই ২৭৬টি করে আসন পাবে। উল্লেখ্য, দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৩টি আসন। ২০১০ সালের নির্বাচনে ৩০৩টি আসন পাওয়া কনজারভেটিভ পার্টি ৫৭টি আসন পাওয়া লিবডেমকে সহযোগী হিসেবে নিয়ে সরকার গঠন করে। জরিপের ফলকে সত্য ধরে নিয়ে এবার সরকার গঠনে দুইয়ের বেশি দলের একজোট হওয়া অনিবার্য বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
নিক ক্লেগ দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনে এক ভাষণে বলেন, ‘টোরিরা এবারকার নির্বাচনে ৩২৩টি আসন পাবেন এটি একটি কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয়। আর তারা নিজেরাও এ কথা জানেন।’ অন্যদিকে, প্লেইড কিমরু নেতা লিনে উড বলেন, ‘লেবার পার্টির সরকার গঠনে আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তাদেরকে আমাদের কিছু বক্তব্য আমলে নিতে হবে। আমাদের কিছু না দিয়েই তারা আমাদের ভোটগুলো ব্যবহার করবে, এমনটা ভাবা উচিত হবে না।’
এবারকার নির্বাচনে ব্রিটেনের প্রধান ইস্যুগুলোর মধ্যে আছে অর্থনীতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা-না থাকার সিদ্ধান্ত, অভিবাসন এবং স্বাস্থ্য ইস্যু। বর্তমানে দেশটির বাজেট ঘাটতি ৯ হাজার কোটি পাউন্ডের কাছাকাছি হওয়ায় সব দলই অর্থনীতি শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তাছাড়া নির্বাচনে জিতলে কনজারভেটিভ পার্টি ২০১৭ সালের মধ্যে ইইউ ছাড়ার ব্যাপারে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এসএনপি এবং লেবার পার্টি এই গণভোটের বিপক্ষে। অন্যদিকে, কনজারভেটিভ এবং লেবার পার্টি উভয়েই ব্রিটেনে অভিবাসী কমিয়ে আনার পক্ষে। তবে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিতর্ক আছে বড় দুটি দলের মধ্যে।