শহীদদের মাগফিরাত কামনায় হেফাজতের দু’আ মাহফিল
৫ মে ‘রক্তে লাল শাপলা’ চত্বর পরিণত হয়েছিল কারবালা প্রান্তরে
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ২০১৩ সনের ৫ই মে আজকের এই দিনে ‘রক্তে লাল শাপলা’ পরিণত হয়েছিল কারবালা প্রান্তর। নাস্তিক মুরতাদ, আল্লাহ, রাসূল, ধর্ম অবমাননা, ইসলামের প্রতি হিংসাত্মক আক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির বিধান রেখে আইন করার দাবীতে ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত লক্ষ লক্ষ নিরীহ, নিরস্ত্র, আল্লাহর যিকিরে নিমগ্ন মানুষের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের উপর ইয়াজিদী প্রেতাত্মারা যে নির্মম বর্বরতা নৃশংসতা চালিয়েছিল ইসলামের ইতিহাসে তা জঘন্য কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। আল্লাহদ্রোহী অপশক্তি বাংলাদেশের পবিত্র ভূমি থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের নির্মূলের যত পরিকল্পনায় করুক, তা কোন দিন সফল হবে না। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, দৃশ্যমান ফলাফলের ভিত্তিতে এবং দুনিয়াবী ফলাফল দিয়ে আল্লাহর ইবাদত ও জিহাদের সাফল্য বিচার করা যাবে না। ইসলামের মূল শিক্ষাই হলো আখেরাত-মুখিতা।
গতকাল মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ৫ই মে ‘রক্তে লাল শাপলা’ শহীদদের মাগফিরাতের জন্য কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসুচীর অংশ হিসেবে হেফাজতের আন্দোলনের অন্যতম সুতিকাগার লালবাগ কার্যালয়ে আয়োজিত দু’আ মাহফিল পূর্ব আলোচনায় প্রধান অতিথি হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেছেন, ইনশাআল্লাহ, অচিরেই নাস্তিক মুরতাদদের আস্ফালন বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাই না। কিন্তু আল্লাহর জমিন তাঁর দুশমনদের জন্য নিরাপদও থাকতে পারে না।
মুফতী ফয়জুল্লাহ আরো বলেন, আমরা আজ বলছি, কালও বলবো, শেষ পর্যন্ত বলে যাব ইসলামের শত্রুরা মনে রেখ, আল্লাহর ডাকে, মহানবীর আহ্বানে, সময়ের প্রয়োজনে, ইসলামের হেফাজতে আজও অসংখ্য যুবক জীবন দিতে প্রস্তুত আছে। যারা অকাতরে জীবন দিতে জানে তাদের সামনে পৃথিবীর কোন অপশক্তি টিকতে পারে না।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় হেফাজতে ইসলাম লালবাগ জোন সভাপতি মাওলানা জসীম উদ্দীনের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত দু’আ মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মুফতী তৈয়্যেব হোসাইন, মাওলানা আবদুল করীম,মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা যুবায়ের আহমদ, মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেল, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন,মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা জুনায়েদ গুলজার,মাওলানা আলতাফ হসাইন, মাওলানা মীর হেদায়াত উল্লাহ গাজী প্রমুখ।
৫ই মে ‘ রক্তে লাল শাপলা ‘ শহীদদের মাগফিরাতের কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ ।
দোয়া সপ্তাহ পালনের আহবান খেলাফত আন্দোলনের : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের এক জরুরী সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ৫ মে শাপলা চত্বরের শহীদদের স্মরনে এবং দেশের সার্বিক সংকট নিরসন, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে সাপ্তাহ ব্যাপি দোয়া, নফল ইবাদত কর্মসূচি পালন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জনিয়েছেন। তারা বলেন, যতদিন পর্যন্ত সংবিধানে আল্লাহর নাম পুন:বহাল করা না হবে এবং নাস্তিক-ব্লগারসহ মহানবী সা. এর অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন পাশ করা না হবে ততদিন পর্যন্ত ঈমানের তাগিদেই আমাদেরকে আন্দোলন চলিয়ে যেতে হবে। মুসলিম পিছু হটার জাতি না, হয় শহীদ না হয় গাজী দু’টার কোন একটা পথ আমাদেরকে বেছে নিতে হবে।
গত সোমবার বিকেলে লালবাগে খেলাফত মিলনায়তনে দলের আমীরে শরীয়ত হাফেজ মাওলানা শাহ আতাউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, নায়েবে আমীর শাইখুল হাদীস আল্লামা সুলাইমান নোমানী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, মুহাম্মাদ আজম খান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ আশরাফ, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মাওলানা আবুল কাসেম কাসেমী ও হাফেজ মাওলানা আবু তাহের প্রমুখ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবিধানে আল্লাহর নাম পুন:বহাল করা এবং নাস্তিক-ব্লগারসহ মহানবী সা. এর অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আইন পাশের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে দেশবাসী ও ওলামায়ে কেরাম আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বাতিলের ভয়-ভীতি ও হুংকারের পরোয়া না করে আল্লাহ ও রাসুলের ইজ্জত রক্ষায় মহান আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেছেন, শাপলা চত্তরে শহীদদের পবিত্র রক্ত বৃথা যাবে না। শহীদদের রক্তের সিড়ি বেয়ে এদেশ নাস্তিক ও জালিম মুক্ত হবে এবং ইসলামী হুকুমত কায়েম হবেই ইনশাআল্লাহ। এদেশ থেকে ইসলামের বাতি নিভিয়ে দেওয়ার সাধ্য কারো নেই। দ্বীন ও কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় তাওহীদি জনতা রক্ত দিয়েই যাবে। তিনি বলেন, শাপলা চত্তরে ধর্মপ্রমাণ জনতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল বা গদি দখলের জন্য সমবেত হননি। তারা ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম রুখতে এবং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা রক্ষায় সমবেত হয়েছিলেন। ধর্মপ্রমাণ জনতা নবীর দুশমন, নাস্তিকদের শাস্তির আইন পাশ করতে বাধ্য করবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ৪টায় শাপলা চত্তর শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ছাত্র নেতা মো: হাবিবুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন, বিশিষ্ট লেখক মুফতি ইলিয়াস মাদারীপুরী, ছাত্র নেতা মুফতি আল আমিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমির হাসান, আল আমিন, উবাইদুর রহমান, জাকির হোসাইন, মো: ইউসুফ, লুৎফুর রহমান ফয়েজী, শাহরিয়া, আবু দারদা, ইয়াহইয়া, মাহমুদুল হাসান ও কাউছার প্রমূখ।
নেজামে ইসলাম পার্টি : বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ উত্তর ৫ মে’র শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশের ঘটণা শুধু একটি হৃদয়বিদারক ও মর্মরস্পর্শী বিষয়মাত্র নয়, বরং এক শিক্ষনীয় ও অনুসরনীয় ঘটণা। এর এক দিকে রয়েছে শোকাবহ অশ্রুসজল কাহিনী, অপর দিকে মহান আত্মত্যাগের অণুপ্রেরণা এবং সেই সাথে মহানবীর মর্যাদা রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়। সেদিনকার অতুলনীয় শাহাদাৎ কোন পরাজয়ের প্রতিফলন নয়, বরং পরম বিজয়ের সংকেত।
নেতৃবৃন্দ মহানবী (সা.) সম্পর্কে ন্যাক্কারজনক, কুরুচিপূর্ণ, ব্যাঙ্গাত্মক, অশোভন প্রভৃতি উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলামের ১৯১৩ সনের ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ উত্তর শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে ঘোষিত দোয়া দিবস উপলক্ষে নেজামে ইসলাম পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব এডভোকেটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদার, মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা মোঃ আবদুল করিম খাঁন ও মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন,অর্থ সম্পাদক অধ্যাপক এহতেশাম সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা একেএম আশরাফুল হক, প্রচার সম্পাদক ডাঃ মাওলানা মো: শওকত আমীন, ইসলামী স্বেচ্ছাসেবক সমাজের সভাপতি মোঃ উবায়দুল হক, ইফসলামী যুব সমাজের মহাসচিব মাওলানা মোঃ ইমাঈল বুখারী, ইসলামী ছাত্র সমাজের সভাপতি মোঃ ইলিয়াস আতহারী প্রমুখ।
মহানবীর (সা.) মর্যাদা রক্ষার প্রত্যয়দীপ্ত ৫ মে’র চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দীপ্ত শপথ গ্রহণের জন্যে সকল ইসলামী রাজনেতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ঐদিন ছিল মহানবীর (সা.) মর্যাদা রক্ষা তথা ইসলামের পতাকাকে সমুন্নত রাখার দীপ্ত শপথ গ্রহণের দিন। তারা বলেন, সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই যুগে যুগে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটণার অনুরুপ ৫ মে’র ঘটণা বিশেষ তাৎপর্য চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, যা মুসলিম মননে শহিদী চেতনা সঞ্চারিত করবে। সেই অবরোধ ও সমাবেশ ডাকা হয়েছিল মহানবী (সা.) সম্পর্কে নাস্তিক্যবাদী চিন্তা-চেতনা সম্বলিত ন্যাক্কারজনক, কুরুচিপূর্ণ, ব্যাঙ্গাত্মক, অশোভন প্রভৃতি উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাতে। কারণ মহানবী(সা.) সম্পর্কে একশ্রেণীর ব্লগারদের বক্তব্য ছিল মুসলিম জনগণের লালিত ও ধারণকৃত চিন্তা-চেতনা ও চিরায়ত মূল্যবোধের পরিপন্থী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সেদিনের ঘটণার মধ্য দিয়ে আমাদের নবচিন্তা ও ভাবধারার সূচনা হয়েছে। যা পরবর্তী চিন্তা ও কর্মপরম্পরার পরিপোষক হবে। কেননা সেদিন আমাদের চৈতন্যের সাড়া অনুভ’ত হয়। এবং একটি অতুলনীয় নবআদর্শ জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়। বিগত দিনে আমাদের দেশে যেসব ইসলামী আন্দোলন হয়েছে, সেগুলোকে পাদপীঠরুপে ব্যবহার করে তা’র ওপর ৫ মে’র আদর্শ প্রতিষ্ঠা করলে ইসলামী আন্দোলনের জন্যে একটা সত্যিকার কল্যাণের কাজ হবে।