স্কটিশ হাতে ব্রিটিশ ভাগ্য
যুক্তরাজ্যের ইতহাসে সর্বোচ্চ অনিশ্চয়তায় ভরা ১৮তম জাতীয় নির্বাচনে সবার নজর স্কটল্যান্ডের দিকে। স্কটল্যান্ডের হাতেই নির্ভর করছে ব্রিটেনের ভাগ্য। তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে রাজনীতির কিংমেকার হতে যাচ্ছে স্বাধীনতাপন্থী স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)। স্কটিশ আসনগুলোতে নিরংকুশ জয় নিয়ে ব্রিটেনের সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছেন দলনেতা নিকোলা স্টারজিয়ন। বিরোধীপক্ষের সঙ্গে মিলে সরকার গঠনে যেতে পারে এমন ভাবনায় বড় দু’দলই উৎকণ্ঠিত। কনজারভেটিভ নেতা ডেভিড ক্যামেরন ও লেবার পার্টি প্রধান এড মিলিব্যান্ড এই দলকে নিয়ে আশা-আশংকার দোলাচলে রয়েছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৫৯টি আসন রয়েছে স্কটল্যান্ডে। ২০১০ সালে তার ৫১টিতেই জিতেছিল লেবার পার্টি। এবার দৃশ্যপট সম্পূর্ণ উল্টো। নির্বাচনপূর্ব জরিপ বলছে, এসএনপি এবার সেখানকার প্রায় সব আসনেই জিততে পারে। সর্বশেষ জরিপে এসএনপি ৫৬টি আসন পাবে বলে জানানো হয়েছে। অথচ ২০১০ সালে এসএনপি সেখানে পেয়েছিল মাত্র ছয় আসন। গত সেপ্টেম্বরে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে হওয়া গণভোটে সামান্য ব্যবধানে হেরে যায় নিকোলা স্টারজিওনের এসএনপি। তবে গণভোটের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় দলটি। ব্রিটেনের আর কোথাও এসএনপির কোনো অস্তিত্ব নেই। সে জন্য স্কটল্যান্ডের সব আসনে জিতলেও তাদের প্রাপ্য ভোটের হার হতে পারে বড়জোর ২ শতাংশ। ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিতে দলটি প্রায় অচ্ছুত। কারণ, ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন স্কটল্যান্ড গড়তে চায় তারা। তাছাড়া নিকোলা স্টারজিওন ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, অদূর ভবিষ্যতে তিনি আবার স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট দাবি করবেন। ্রবৃহস্পতিবার গ্লাসগোর একটি কমিউনিটি ভোট কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন এসএনপি নেতা নিকোলা স্টারজিয়ন। স্কটিশ পতাকা ও প্লাকার্ড লাগানো একটি বাড়ির কাছে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার পরিষ্কার বার্তা এই যে, আমরা সবাই স্কটল্যান্ডের জন্য দাঁড়াতে চাই। আমরা চাই যুক্তরাজ্যের সব জনগণের সঙ্গে জোট করতে। এর মাধ্যমে ওয়েস্টমিনিস্টার রাজনীতিতে শুভ পরিবর্তন সূচিত হবে।’ স্কটিশরা এবার লেবার পার্টিকে প্রত্যাখ্যান করবে বলে আশা করেন তিনি। নিকোলার মতে, লেবার পার্টি যুগ যুগ ধরে স্কটল্যান্ডকে ক্ষমতার যাওয়ার ভারসাম্য হিসেবে ব্যবহার করেছে। ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিতে এসএনপিকে মেনে নিতে চায় না কেউই। লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ড নিজেও কয়েক দিন আগে বলেছেন, তিনি এসএনপিকে নিয়ে কোয়ালিশন সরকার করবেন না। তবে তার এ ঘোষণায় বিশ্বাস রাখতে পারছেন না খোদ লেবার পার্টির প্রথম সারির অনেক নেতাই। অবশ্য বুধবার স্কটিশদের মন জয় করতে সুর পাল্টেছেন মিলিব্যান্ড। তিনি বলেন, ‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারি, তবে স্কটল্যান্ডের স্বার্থকে সারাক্ষণ হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে ধারণ করব।’ ডেভিড ক্যামেরনের কনজারভেটিভ দলের সঙ্গে জোট বাঁধার ব্যাপারে দলকে সতর্ক করে দেন মিলিব্যান্ড।
এদিকে রাজনীতিতে স্কটল্যান্ডের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার অস্বস্তিতে রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। তাদের কারণে যুক্তরাজ্য ভেঙে যেতে পারে এমন কথা বলে এসএনপির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলটি। লেবারের সঙ্গে এসএনপির জোট হতে পারে এই আশংকায় বুধবার ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘এসএনপির সমর্থন নিয়ে লেবার সরকার গঠিত হলে জনগণ কখনোই স্বস্তিতে থাকবে না। কারণ তাতে এমন গ্রুপ রয়েছে, যারা যুক্তরাজ্যে বিশ্বাস করে না।’