জরিপ কি করে ভুল হল ?
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলে বিস্মিত হয়েছে সবাই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও আশা করেননি, এমন অভাবনীয় সমর্থন পাবেন তিনি। নির্বাচনপূর্ব সব কটি জরিপ বলছে, সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন নিশ্চিত করতে পারছে না কোনো দলই। কোয়ালিশন করে ঝুলন্ত পার্লামেন্টই ভরসা। অথচ সব জরিপকে মিথ্যা প্রমাণ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। সবকটা জরিপ কী করে ভুল হল?
লন্ডনের কনজারভেটিভ মেয়র বরিস জনসন যেমন বলেছেন, বিশ্লেষকদের উচিত এখন বাড়ি গিয়ে নিজেদের জিজ্ঞাসাবাদ করা। যাতে তারা বুঝতে পারেন, কে কাকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছিলেন।
নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে ইউগভ, আইসিএম ও সার্ভেশন নির্বাচনের ফল ড্র হতে যাচ্ছে বলে জানায়। আর টিএনএস, অপিনিয়াম ও কমরেস তাদের জরিপের ফলে কনজারভেটিভ পার্টিকে অল্প ভোটে এগিয়ে রাখে। শুধু প্যানেলবেসই টোরি পার্টিকে এগিয়ে রাখে মাত্র দুই পয়েন্টে। অন্যদিকে, সংবাদপত্রগুলো একবাক্যে জানিয়ে দেয়, এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পেতে যাচ্ছে ব্রিটেন।
নির্বাচন শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে গার্ডিয়ান ও বিবিসির পৃথক দুটি জরিপে দেখা গেল লেবার পার্টি কনজারভেটিভ থেকে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলেই বিবিসি প্রকাশিত বুথফেরত জরিপ বলছে, ৩১৬ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে যাচ্ছে ক্যামেরনের দল। একেবারে চোখ উল্টানো কথা। নির্বাচনী ফলও বুথফেরত জরিপের সত্যতা প্রমাণ করেছে। তবে আগে কেন এমন হল? এর উত্তর হতে পারে কয়েকটি। প্রথমত হয়তো জরিপকারী সংস্থার কাছে ভোটাররা মিথ্যা বলেছিলেন, কিংবা সত্যি বলতে লজ্জা পেয়েছিলেন। অথবা শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ ভোটের দিন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন।
এদিক দিয়ে দেখলে স্কটল্যান্ডের ফল ভিন্ন কথা বলে। সেখানে নির্বাচনপূর্ব জরিপ ও ফল অভিন্ন হয়েছে। তবে স্কটিশরা ব্রিটিশদের চেয়ে কম লাজুক?
দ্বিতীয়ত জরিপকারী সংস্থা ও তার পদ্ধতিগত ভুল। ইতিহাস বলে, এই একই প্রতিষ্ঠানগুলোর জরিপের সঙ্গে আগে ফলের খুব একটা হেরফের হয়নি। নিকট অতীতে ২০১০ সালের নির্বাচনেও হুবহু ফলেছিল ভবিষ্যদ্বাণী। কিন্তু এবার হয়েছে উল্টো। কিছুদিন আগে ইসরাইলের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও জরিপ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে জরিপ পদ্ধতি স্যাম্পল নির্ধারণ ও বিশ্লেষেণের ত্র“টি পরীক্ষা করে দেখার মতো। হতে পারে জরিপকারীরা নিজেদের পছন্দমতো স্যাম্পল নিয়েছেন, যা প্রতিনিধিত্বশীল ছিল না। কিংবা ইন্টারনেট, ফোনের মাধ্যমে মতামত ও মাঠ থেকে সংগৃহীত তথ্যের গুণগত বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। পদ্ধতিগত ত্রুটি ভেবে দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানদের।