২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব এবং ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৃষির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু কৃষি আজ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ হেক্টর কৃষি জমি অকৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য যোগান দেওয়া সহজ কাজ নয়। শুধু খাদ্য কেন, অন্যান্য মৌলিক চাহিদা যেমন বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার উপকরণও কৃষিজমি থেকে আসে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার উপকরণের চাহিদা মেটাতে হলে আমাদের উন্নত প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর সালনায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, লাগসই কৃষিজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সেগুলো কৃষকের মাঝে হস্তান্তর, উপকরণ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে কৃষিকে একটি লাভজনক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সিন্ডিকেট সদস্য কৃষিবিদ আবদুল মান্নান এমপি, কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হারুন অর রশীদ, ডুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ নূরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম, কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম ম-ল, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হকসহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হল, কৃষি অনুষদ ভবন, ফিশারিজ ভবন, ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদ ভবন ও বেগম সুফিয়া কামাল অডিটরিয়াম উদ্বোধন করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রফেসর ড. এল. এম. আইজগ্রুবার গ্রাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদ ভবন, প্রফেসর ড. ইয়োশিও ইয়াদামা লাইব্রেরি ভবন, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হল, ইলা মিত্র হল ও কৃষিবিদ ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা বহিরাঙ্গন কেন্দ্রের নাম ফলক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি যে, দেশের যে কোন ধরনের রাজনৈতিক বা অনুরূপ অস্থিরতা একদিনের জন্যও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারেনি।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা গবেষণার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এবং সেগুলোর সম্প্রসারণ করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। এ সবের মধ্যে মঙ্গাপীড়িত এলাকার কৃষকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ধান নামে পরিচিত বিইউ ধান-১ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষার জন্য শালবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে কৃষিজ বনজ সম্পদের ওপর অধিকতর উন্নততর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কথা জানান।