ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯১ নারী নির্বাচিত
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে এবার রেকর্ডসংখ্যক নারী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। পার্লামেন্টের মোট ৬৫০ আসনের মধ্যে ১৯১ আসনই নারীদের দখলে। হিসাব মতে মোট এমপির ২৯ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এখন নারী।
এছাড়া সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীরও (মূলত বিদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ) উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিনিধি এবার হাউস অব কমন্সে প্রবেশ করেছেন।
নির্বাচিত নারী ও বিদেশি বংশোদ্ভূত এমপিদের তালিকায় রয়েছেন তিন বাংলাদেশি নারীও। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অবশ্য আরো ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নির্বাচন গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩৩১ আসন পায় ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি পায় ২৩২ আসন।
স্কটল্যান্ডে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৫৯ আসনের ৫৬টিতেই জয়ী হয় সেখানকার স্বাধীনতাপন্থী দল স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি)। এ সবগুলো দলই এবার নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও বিদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের মনোনয়ন দেয়।
২০১০ সালের পার্লামেন্টে নারী এমপি ছিলেন ২২ শতাংশ (১৪৩ জন)। এবার তা বেড়ে ২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যার হিসাবে এবার নারী এমপি ১৯১ জন। এই এমপিদের বেশিরভাগই প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির। মোট নারী এমপির ৪৩ শতাংশই এ দলটির। আর এসএনপির ৩৬ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের গত জোট সরকারের শরিক লিবারেল ডেমোক্র্যাট (লিব-ডেম) দলের কোনো নারী এমপি এই সংসদে নেই।
পাঁচ বছরের ব্যবধানে নারী এমপির সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেলেও ইউরোপীয় অনেক দেশের তুলনায় ব্রিটেন এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। যেমন সুইডেনের পার্লামেন্টে নারী এমপি আছেন ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া বেলজিয়ামে ৪১.৩ শতাংশ, আইসল্যান্ডে ৩৯.৭ শতাংশ, আর্জেন্টিনায় ৩৬.৬ শতাংশ ও বুরুন্ডির পার্লামেন্টে ৩০.৫ শতাংশ নারী এমপি আছেন।
সদ্য সমাপ্ত এ নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু যে পার্লামেন্টেই নারীর আসন বেড়েছে তা নয়, দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদেও আসীন হয়েছেন নারী রাজনীতিক।
নির্বাচনে ভরাডুবির দায় কাঁধে নিয়ে ফল প্রকাশের মধ্যেই শুক্রবার দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান লেবার প্রধান এড মিলিব্যান্ড। সাময়িকভাবে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন হ্যারিয়েট হারম্যান। ইউকেআইপি দলের প্রধান নাইজেল ফারাজ পদত্যাগ করলে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সুজানে ইভান্স। আর গত বছর থেকেই এসএনপির প্রধান হিসেবে আছেন নিকোলা স্টারজিওন।
ব্রিটেনের নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ফোওসেট সোসাইটির প্রধান বেলিন্ডা ফিপস বলেন, ‘অল্প হলেও হাউস অব কমন্সে নারীর প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে। এতে আমরা আনন্দিত। আমরা জানি আইন প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়ে নারীরা জড়িত থাকলে ভালো সিদ্ধান্তই নেওয়া যায়।’
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানের পদে নারীদের উঠে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক বিশ্বে নারীদের অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে তুলে ধরবে।
ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ৩৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙে আরেক নারীও এমপি হয়েছেন। ১৬৬৭ সালের পর এই প্রথম মাত্র ২০ বছর বয়সেই স্কটল্যান্ড থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এসএনপির মারি ব্ল্যাক।
কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু-নৃতাত্ত্বিক এমপি
ওয়েস্টমিনস্টারে এবার কৃষ্ণাঙ্গ এবং সংখ্যালঘু-নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী তথা বিদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশদের প্রতিনিধিত্বও বেড়েছে। ইউসিএল/বার্কবেক পার্লামেন্টারি ক্যান্ডিডেটস ইউকে প্রজেক্টের হিসাব অনুযায়ী, নতুন পার্লামেন্টে শ্বেতাঙ্গ নন এমন এমপির হার এখন ৬.৬ শতাংশ। ২০১০ সালে যা ছিল ৪.২ শতাংশ।
ইউসিএলের হিসাবে এবার সংখ্যালঘু-নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ৪২ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৭। নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১২ প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ৮ জন লেবার, ৩ জন লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও একজন কনজারভেটিভ দলের মনোনয়নে নির্বাচন করেন। এর মধ্যে লেবার পার্টির হয়ে তিন নারী নির্বাচিত হয়েছেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫৯ প্রার্থীর মধ্যে ১০ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১০ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আটজন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ৫০ জনের বেশি প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন ১০ জন।
এ ছাড়া প্রথমবারের মতো চীনা বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার চীনা বংশোদ্ভূত ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। গত নির্বাচনে সাতজন চীনা অংশ নিয়েও কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি। শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত চার প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পেয়েছেন একজন।
ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়নে এশিয়ান বংশোদ্ভূত প্রায় ১৫০ প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬ জন কনজারভেটিভ পার্টির, ৩৫ জন লেবার ও ৩২ জন লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের মনোনয়ন পান।