পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন স্থান ‘এরিয়া-৫১’
অবশেষে মার্কিন গোপন বিমান ঘাঁটি ‘এরিয়া-৫১’র কথা স্বীকার করেছে আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সমপ্রতি গোপন কিছু নথিপত্র প্রকাশ হয়ে পড়লে এ স্বীকারোক্তি জানায় দেশটি।
গত বৃহস্পতিবার আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ অতীতের বিভিন্ন রেকর্ড থেকে চারশ’ পৃষ্ঠার তথ্য প্রকাশ করে। এতে মার্কিন ‘ইউ-২’ গোয়েন্দা বিমানের কথাও জানা যায়।
লাসভেগাস থেকে ৯৫ কিলোমিটার উত্তরে, নেভাদা অঙ্গরাজ্যের মধ্যাঞ্চলে দূরে ‘গ্রুম’ লেকের পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে এই ‘এরিয়া-৫১’ তৈরি করে আমেরিকা। সেখানে বিভিন্ন ধরনের গোপনীয় গোয়েন্দা বিমানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। বিশেষ করে ‘ইউ-২’ প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য ওই এলাকা নির্বাচিত করে সিআইএ ও মার্কিন বিমানবাহিনী।
দুর্ভেদ্য বেষ্টনীতে ঘেরা এ ঘাটির প্রবেশপথে লেখা আছে অনধিকার প্রবেশকারীকে গুলি করা হতে পারে। আজ পর্যন্ত বেসামরিক কেউ দাবি করেনি, তিনি এরিয়া৫১-এ ঢুকেছেন। যদি কেউ ঢুকেও থাকেন তাহলে তিনি জীবিত আর বের হতে পারেননি, তা নিশ্চিত। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে গোপনীয় স্থান এই ‘এরিয়া ৫১’।
কিন্তু কেন এত নিরাপত্তা
এরিয়া ৫১ স্থাপনাটিকে বিতর্কিত ও রহস্যময় করে তোলার পেছনে আশপাশের বাসিন্দারাই দায়ী। তাদের অনেকের দাবি, এরিয়া৫১ এর আকাশে ফ্লাইং সসারের মতো কিছু উড়তে তারা দেখেছেন। আবার অনেকেই নাকি এমন দ্রুতগতির বিমান উড়তে দেখেছেন, যার গতি সাধারণ বিমান বা যুদ্ধবিমান কোনোটার সঙ্গেই মিলে না। তবে এসব বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছেন এরিয়া৫১-তে কর্মরত পদার্থবিজ্ঞানী বব লেজার। সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাত্কারে তিনি দাবি করেছেন, ওখানে এমন কিছু মৌলিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা করা হয়, যা এখনও আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তিনি অবশ্য কিছু ধোঁয়াটে বক্তব্য দিয়েছেন একটি মৌলিক পদার্থ নিয়ে। তার মতে, সুপারনোভা বা বাইওনারি স্টার সিস্টেম থেকেই সম্ভবত একটি মৌল সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মাত্র ২.২ পাউন্ড ৪৭টি ১০ মেগাটন হাইড্রোজেন বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট। ওখানে নাকি একটি সরল যন্ত্র আছে, যা চাকতি আর বল দিয়ে তৈরি। যন্ত্রের বলের চিপে ওই মৌলটি রাখা হলে সময়কে স্থির করে রাখতে পারে। তারা নাকি সময় স্থির করে রাখার পরীক্ষা চালিয়ে সফলও হয়েছেন। তার মতে, ওই মৌল পদার্থটি বলের চিপে রাখামাত্র তা কোনো একভাবে অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করে এবং এর ফলে বিপুল শক্তি উত্পাদিত হয়।
অ্যান্টিম্যাটার রিয়েক্টরে শক্তি উত্পাদনের ফলে বস্তুর নিজস্ব মহাকর্ষ বলের সৃষ্টি হয় এবং নিজস্ব শক্তিতে তা বিদ্যুেবগে ছুটতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাকি ওখানে ফ্লাইং সসার তৈরির গবেষণা চলছে। তবে বব সবচেয়ে বড় বোমা ফাটান এই বলে যে সেখানে নাকি এলিয়েনদের নিয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক ফ্লাইং সসার আছে। ওখানে এলিয়েনটির ব্যবচ্ছেদ করে নাকি পাওয়া গেছে, ওই প্রাণীটি এসেছে রেটিকুলাম-৪ নামক জ্যোতিষ্ক থেকে। প্রাণীটির উচ্চতা সাড়ে তিনফুট, শরীর রোমহীন, কালো বড়-বড় চোখ এবং শরীর কৃশকায়। দেহ ব্যবচ্ছেদ করে নাকি ফুসফুস ও হৃপিণ্ডের বদলে বিশাল এক পতঙ্গ পাওয়া গেছে।
মানুষের চাঁদে যাওয়া নিয়ে রহস্য!
তবে এতসব বিতর্কই শেষ নয়। এরিয়া৫১ নিয়ে চলমান বিতর্কের সবচেয়ে বড়টি হলো মানুষের চাঁদে যাওয়া নিয়ে নাটক। মানুষ তো চাঁদে গেছে, এ নিয়ে নাটকের কী আছে? আপনারা হয়তো তা বলবেন। কিন্তু দুনিয়াতে প্রচুর সন্দেহবাদী আছে, যাদের ধারণা—মানুষ চাঁদে কখনও যায়নি। পুরো নাটকটি সাজানো হয়েছে এই এরিয়া৫১-এর ভেতর। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এত বিতর্ক চললেও আমেরিকান সরকার এতদিন এসবের কোনো কিছুই স্বীকার করেনি। তাতে সন্দেহ না কমে বরং আরো বেড়েছিল মানুষের। কিন্তু সাম্প্রতিক আমেরিকার এই স্বীকারোক্তিতে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটলো।