ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সদস্য
ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় এক ভারতীয় ও এক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্থান পেয়েছেন। তারা হলেন প্রীতি প্যাটেল ও সাজিদ জাভেদ।
এবারের ব্রিটিশ নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ১০ জন, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ৯ জন এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
এসেক্সের উইথাম থেকে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন ৪৩ বছরের ক্যামেরন-ঘনিষ্ঠ এমপি প্রীতি। এখন থেকে ব্রিটেনের কর্মসংস্থান মন্ত্রীর পদ সামলাবেন প্রীতি। তবে পূর্ণ মাত্রায় মন্ত্রী হচ্ছেন না এখনই। পূর্ত ও পেনশন দফতরের মন্ত্রী ইয়ান ডানকান স্মিথের নেতৃত্বে আপাতত কর্মসংস্থান দফতর সামলাবেন প্রীতি। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি তিনি বিশেষভাবে নজরে রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, ষাটের দশকে প্রীতির পরিবার ইংল্যান্ডে আসে। আদতে তারা গুজরাতের বাসিন্দা। ১৯৭২ সালে লন্ডনেই জন্ম তার। হ্যারোতে বেড়ে ওঠা। ওয়াটফোর্ডে পড়াশোনা। এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। তার পর যোগ দেন ব্রিটিশ রাজনীতিতে। ২০১০ সালে কনজারভেটিভদের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন প্রীতি। প্রথমবারেই জয়। তখন থেকেই ক্যামেরনের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে শুরু করেন প্রীতি। তিনি যে এ বার মন্ত্রিসভার সদস্য হতে চলেছেন, তা আন্দাজ করেছিলেন অনেকেই। ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের কাছে পৌঁছতে প্রীতিকে ‘ইন্ডিয়ান ডায়াসপোরা চ্যাম্পিয়ন’-এর পদও দেন ক্যামেরন। মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি এই পদ সামলাবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।
গত পাঁচ বছর ধরে প্রীতি বরাবরই ক্যামেরনের ছায়াসঙ্গী। ২০১৩ সালে ক্যামেরনের ভারত সফরের সময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন প্রীতি। কলকাতা এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখাও করেছিলেন সেই সময়। ২০১৪ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একাংশ যখন তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তুলোধোনা করছে, সে সময় রুখে দাঁড়ান প্রীতি। ফলে ভারতীয় তথা এশীয়দের ভোট টানার ক্ষেত্রে ক্যামেরনের কাছে প্রীতি বরাবরই ‘এক্স ফ্যাক্টর’। এত বড় দায়িত্ব পেয়ে তিনি অভিভূত, আজ টুইট করে সে কথা জানিয়েছেন এক সন্তানের মা প্রীতি।
প্রীতির সঙ্গেই ক্যামেরনের মন্ত্রিসভায় এসেছেন আরও এক এশীয়। সাজিদ জাভেদ। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই নেতা আগে সাংস্কৃতিক সচিবের পদ সামলেছেন। ওয়েস্টমিনস্টারে গান্ধির মূর্তি উন্মোচনের সময় প্রীতির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাজিদও। ক্যামেরন এ বার তাকে বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন লিবার্যাল ডেমোক্র্যাট এমপি ভিন্স কেব্ল এই দায়িত্ব সামলেছেন। এ বার নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা পার্লামেন্ট থেকে বিদায় নেয়ায় সে সুযোগ এসেছে সাজিদের কাছে।
মন্ত্রিসভায় ক্যামেরন নতুন দায়িত্ব দিচ্ছেন লন্ডনের মেয়র বরিস জনসনকেও। মেয়রের পদ সামলানোর জন্য কোনও মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়নি জনসনকে। তবু তার গুরুত্ব বোঝাতেই জনসনকে নিজের ক্যাবিনেটে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ঋষি সুনাক অবশ্য ঠাঁই পাননি ক্যামেরনের নবগঠিত মন্ত্রিসভায়। কনজারভেটিভ এমপি ঋষি ইনফোসিস কর্তা এন নারায়ণ মূর্তির জামাই। ঋষি মন্ত্রী হতে পারেন বলে গত কয়েক দিন ধরে একটা জল্পনা চলছিল ব্রিটেনে। আজকের ঘোষণায় ঋষির নাম না থাকায় খানিকটা হতাশ এখনকার ভারতীয় সম্প্রদায়।
প্রীতি খুশির খবরটি টুইটারে জানিয়ে লিখেছেন, চাকরি এবং অবসরভাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পাওয়াটা মস্ত বড় পাওনা৷