একদিনে দুনিয়া কাঁপল ৩১ বার !
ভয়াবহ ভূমিকম্পে আবার কেঁপে উঠল নেপাল। পর পর চারবার। একই সঙ্গে প্রবল কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারতের উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকায়। তবে এর থেকেও ভয়ঙ্কর খবর হল- মঙ্গলবার সারা বিশ্বেই একই সঙ্গে, প্রায় একই সময়ে ভূমিকম্প হয়েছে। ভূতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, এদিনের বিশ্বব্যাপী ভূ-কম্পনে ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩১ বার কেঁপে উঠেছে সারা দুনিয়া।
গত ২৪ ঘণ্টায় রিখটার স্কেলের রিডিং অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় ৫.৩ ও ৫.৬, ফিলিপিন্সে ৫.৪, জাপানের আইয়ো জিমা দ্বীপে ৫.৩, পেরুতে ৬.১, ইস্টার আইল্যান্ডে ৫.০, কলাম্বিয়ায় ৫.৪, চিলেতে ৫.৪, আফ্রিকার দক্ষিণাংশে ৫.৪, গ্রিসে ৪.৫, আজারবাইজানে ৪.০ মাত্রার কম্পন ধরা পড়েছে। এছাড়া নেপালে ৭.৩ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কম-বেশি ৭.১ থেকে ৭.২ কম্পন ধরা পড়েছে। ভূমিকম্পের আওতা থেকে রক্ষা পায়নি ভুটান, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ। এদিন চীনেও ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটর স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭.৪। কম্পনের উৎসস্থল নেপাল-চীন সীমান্তের ঝাম প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বে হওয়ায় চীনেও তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
তবে এ দুটি দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। নেপালের ভূমিকম্পের অভিঘাতের জেরেই চীনে ভূ-কম্পন হয়েছে বলে জানিয়েছে মাকির্ন ভূতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র। পাশাপাশি আফগানিস্তানে এদিন ভূমিকম্পও হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিরাট ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। দুটি দেশের কোথাও-ই হতাহতের কোনো খবর মেলেনি। ইন্ডিয়া টাইমস। ভূতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে মোট ৩১টি ভূমিকম্প হয়েছে। আর এর প্রত্যেকটি ঘটেছে ‘রিং অব ফায়ার’র গণ্ডির ভেতরে। রিং অব ফায়ার কী? প্রশান্ত মহাসাগর অববাহিকায় প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘোড়ার খুরের আকৃতির এ অঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয়। একাধিক মহাসাগরিক খাত, আগ্নেয় বৃত্ত ও আগ্নেয়গিরি রয়েছে এখানে। বিশ্বের ৪৫২টি আগ্নেয়গিরির জন্মস্থান এখানেই। রয়েছে আরও ৭৫% ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। পৃথিবীর নব্বই শতাংশ ভূমিকম্প ঘটে রিং অব ফায়ারের গণ্ডির ভেতরে।
সাম্প্রতিক লাগাতার ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ভূ-স্তরের টেকটনিক প্লেটগুলোর অবস্থান ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তির সময় প্লেটগুলোর অবস্থানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। এই সময় রিং অব ফায়ার অঞ্চলের বাসিন্দাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতাত্ত্বিকরা। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ভূমিকম্পের পর নেপালের জনগণের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পে আহত অনেকে এখনও কাঠমান্ডুর প্রধান হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আজকের ভূমিকম্পের পর এসব রোগীরা হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসেন। কাঠমান্ডুতে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকে তাদের আত্মীয়স্বজনকে নিচে নেমে আসার জন্য ডাকাডাকি করতে থাকে। অনেকে আবার ঘরে ছুটে যান প্রিয়জনদের বের করে আনতে। নেপালি পুলিশ লোকজনকে বাইরে অবস্থান এবং অতিরিক্ত ফোন করে লাইন ব্যস্ত না রাখার আহ্বান জানিয়েছে। নেপালের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এক টুইটার বার্তায় বলেছে, সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা : এ কঠিন সময়ে সব নেপালিকে নিরাপদে রাখ।’