সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ফাটল !
চলতি সপ্তাহ থেকে ক্যাম্প ডেভিডে শুরু হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ওবামা আয়োজিত আরব সম্মেলনে সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এর যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। বহু প্রজন্ম ধরে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সমান লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা দেশ দুটি এ মুহূর্তে একদম মৌলিক কিছু বিষয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। বাদশার এ অনুপস্থিতি মোটেও প্রত্যাখ্যানমূলক নয় বলে সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদির পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও দুই দেশের মধ্যে অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অব্যাহতভাবে যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
বিষয় চারটি হল- এক. ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে ওবামা প্রশাসনের আগ্রহ। দুই. মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের উত্থান। তিন. আরব বসন্ত নামে এ এলাকায় চলমান অস্থিতিশীলতা। এবং চার. বিশ্বের জ্বালানি বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন। বিশেষ করে আমেরিকার তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটির রিয়াদের ওপর নির্ভরতা অনেক কমে গেছে। এর ফলে কয়েক দশক ধরে চলে আসা ক্ষমতার হিসাব নিকাশে পরিবর্তন চলে এসেছে। এসব বিষয়ে বোঝাপড়ার মাধ্যমে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হোয়াইট হাউস এবং ক্যাম্প ডেভিডে পারস্য উপসাগরবর্তী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে এ সপ্তাহের সম্মেলন এবং বৈঠকগুলোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে সুযোগ হাতছাড়া হল। এখন যদি দুই দেশ তাদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে নতুন পথ অবলম্বন করে তাহলে ভবিষ্যৎ আরও অনেক জটিল হয়ে উঠবে।
হোয়াইট হাউসে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সমন্বয়কের পদ থেকে গত মাসে পদত্যাগ করা ফিলিপ গর্ডন বলেন, এটা ঠিক যে, দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তবে এটা কোনো আবেগের সম্পর্ক নয়। উভয়পক্ষেরই স্বার্থ আছে। এখন আমরা যদি তাদের মৌলিক স্বার্থগুলো সংরক্ষণে ইচ্ছুক হই তাহলে তারাও আমাদেরটা সংরক্ষণে ইচ্ছুক হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, উভয়পক্ষ ইচ্ছুক কিনা ? ৭০ বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট তৎকালীন বাদশা আবদুল আজিজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর থেকে সৌদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দুপক্ষের অভিন্ন স্বার্থ এবং ভিন্ন মূল্যবোধের নানা জটিলতার মধ্যে দিয়েই এগিয়েছে। এতদিন দুপক্ষেরই একটা অভিন্ন আকাক্সক্ষা ছিল। আর সেটা হচ্ছে, স্থিতিশীলতা। কিন্তু বর্তমানে এ স্থিতিশীলতার বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে। ওবামার দৃষ্টিতে, কূটনীতির মাধ্যমে চুক্তি করে ইরানকে তার অভীষ্ট পারমাণবিক লক্ষ্য থেকে দূরে রাখাই হচ্ছে এ এলাকার অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় সুযোগ। অন্যদিকে, সুন্নি সৌদি সরকার মনে করছে, চুক্তির বিনিময়ে শিয়া শাসিত ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার ফল হবে অর্থনৈতিকভাবে দেশটির আরও শক্তিশালী হয়ে উঠা। এতে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা জিইয়ে রাখতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারবে উচ্চাকাক্সক্ষী দেশটি। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সৌদি এবং আমেরিকানরা পরস্পরকে সহযোগিতা করলেও রিয়াদ চাচ্ছে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে হটাতে যুক্তরাষ্ট্র আরও জোরালো পদক্ষেপ নিক। কিন্তু সেখানে হস্তক্ষেপ করতে ওবামা অনেকটা নিস্পৃহ। আবার অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের জন্য যে আকাক্সক্ষা দেখা যাচ্ছে সেটাকে এখানকার জন্য ভালো বলে ওবামা প্রচার করলেও সৌদি আরব এখনও বয়ে চলা আরব বসন্তের বাতাসকে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে দেখছে। এসব বিরোধের মধ্যেই টেক্সাসের নর্থ ডাকোটায় তেল উৎপাদনে বন্যা বয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির রাজনীতিও গতি পরির্তন করেছে।