ভারতকে সড়ক ট্রানজিট দিচ্ছে বাংলাদেশ
তালুকদার হারুন: নৌ-পথের পর এবার সড়কপথে ট্রানজিট পাচ্ছে ভারত। কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলা পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করার অনুমতি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটি সড়কপথে ট্রানজিট দেয়ারই সামিল। গত সোমবার দিল্লিতে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরেই সম্ভবত এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়ে যাবে।
জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের ওইদিন দিল্লীতে দীর্ঘ বৈঠক করেন ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গডকড়ির সঙ্গে। সেই বৈঠকের পরই তিনি জানান, ভারতের কাছে বহুপ্রতীক্ষিত কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালুতে অবশেষে সবুজ সংকেত পেতে চলেছে। কলকাতা-ঢাকা বাস চালু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। আর আগরতলা-ঢাকা বাস চালু হয় ২০০৩ সালে। দুটো রুটেই যাত্রীদের বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস চালু হতে যাচ্ছে।বস্তুত ঢাকায় বাস বদল না করেই যাতে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে ত্রিপুরার আগরতলায় যাওয়া যায়, এটি ভারতের দুই রাজ্যেরই দীর্ঘদিনের দাবি। ভারতের মূল ভূখ- দিয়ে সড়কপথে কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে গেলে প্রায় তিন দিনের ধাক্কা। অথচ ঢাকা হয়ে যেতে পারলে ভ্রমণের সময় নেমে আসবে চব্বিশ ঘণ্টা। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশকে নিজেদের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দিতে হবে ভারতীয় বাসকে। আর সেই ট্রানজিটের দাবিটাই এতদিন আটকে ছিল কূটনীতির জটে, অবশেষে এখন তা খুলতে যাচ্ছে।ভারত-বাংলাদেশের এই বাস-কূটনীতি অবশ্য শুধু এই একটা রুটেই থেমে থাকছে না। দিল্লি সফর সেরে ঢাকায় ফেরার পর দিন ২২ মে ওবায়দুল কাদের ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি রুটে আর একটি বাস সার্ভিসের ট্রায়াল রান উদ্বোধন করবেন। সঙ্গে থাকবেন ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণও। পরীক্ষা সফল হলে জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এই পথে বাস সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।
ওবায়দুল কাদের অবশ্য রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর ট্রানজিট শব্দটাকে সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি এটাকে বর্ণনা করেছেন, পিপল-টু-পিপল কনট্যাক্ট বা দু’দেশের মানুষের মধ্যে সংযোগ হিসেবে। আর সেই সংযোগের আরও একটি নিদর্শন হিসেবে অচিরেই চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিসও। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই দেশের সরকার আরও অন্তত চারটি রুটে আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিস চালু করার চিন্তা-ভাবনা শুরু। এই নতুন রুটগুলো হল কলকাতা-চট্টগ্রাম, শিলং-চট্টগ্রাম, খুলনা-কলকাতা ও যশোর-কলকাতা। এগুলোর ব্যাপারে কাজকর্ম এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তারপরেও খুব দ্রুত এই রুটগুলোতেও দ্বিপাক্ষিক সমঝোতারভিত্তিতে বাস সার্ভিস চালুর সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
সূত্রমতে, ওবায়দুল কাদের ও নীতিন গডকড়ির সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যের পরিবহন সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ বহুদিন ধরেই এই কলকাতা-আগরতলা বাসের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। তা ছাড়া ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ঠিক একই দাবি জানিয়েছিলেন।
এদিকে বাস সার্ভিস চালুর পাশাপাশি ট্রাকে যাতে অবাধে ভারত ও বাংলাদেশে মালামাল পরিবহন করা যায় সেজন্য অনেক দূর এগিয়েছে দুই দেশ। দুই প্রতিবেশী ভুটান ও নেপালকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশ তাদের দুই প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মিলে একটি বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল) মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট সই করতে যাচ্ছে। যা স্বাক্ষরিত হলে এই দেশগুলোর ট্রাক অবাধে মাল নিয়ে অন্য দেশগুলোর যে কোন স্থানে যেতে পারবে। বাংলাদেশের নম্বর প্লেটের লরি মাল নিয়ে ভারতের কাঁকড়ভিটা হয়ে সোজা নেপালে ঢুকে পড়তে পারবে। কোনও সীমান্তেই আর মাল ওঠা-নামা করা বা ট্রান্সশিপমেন্টের কোনও ঝামেলা থাকবে না। কাঠমান্ডুতে গত বছরের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনেও অনুরূপ একটি চুক্তি সই করার প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের বাধায় তখন তা হতে পারেনি। অগত্যা পাকিস্তানকে বাইরে রেখেই সার্কের অন্য চারটি দেশ যারা সড়কপথে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত, সেই একই সমঝোতা নিজেদের মধ্যে সই করতে চাইছে। তবে তা চূড়ান্ত হওয়ার আগে জুনে এই চারটি দেশের যোগাযোগমন্ত্রীরা থিম্পুতে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসবেন।