ইরাক সিরিয়ার শেষ সীমান্তও আইএসের দখলে
সিরিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক শহর পামিরা সম্পূর্ণরূপে কবজায় নেয়ার একদিন পর বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইরাক-সিরিয়ার শেষ সীমান্তটিও দখলে নিয়েছে ইসলামিক স্টেস্ট (আইএস)। সিরিয়ার একটি মানবাধিকার সংগঠনের বরাত দিয়ে শুক্রবার বিবিসি এ খবর দিয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, আল-তানফ (ইরাকে আল-ওয়ালিদ নামে পরিচিত) থেকে সরকারি সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ায় আইএস যোদ্ধারা সীমান্ত পার হয়ে সামনে এগোচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আইএসের সঙ্গে যুদ্ধ করা ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’ হবে। এসওএইচআর জানিয়েছে, সিরিয়ার ৯৫ বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চল, যা দেশটির মোট ভূখণ্ডের অর্ধেকের বেশি, দখল করে নিয়েছে আইএস যোদ্ধারা। দেশটির দেয়ার আল-জাওর ও রাক্কা শাসন করছে আইএস। হাসাকেহ, আলেপ্পো, হোমা ও হামাতেও বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছে জঙ্গি সংগঠনটির।
শুধু সিরিয়ায় নয়, প্রতিবেশী ইরাকেরও বিশাল এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে আইএস। সর্বশেষ আনবার প্রদেশের রামাদি শহর দখলে নিয়েছে তারা।
গত বছর থেকে আইএস মোকাবিলায় ইরাকি সরকারকে সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তারপরও আইএসের শক্তি এতটুকু কমেনি। তারা একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মতে, আইএসের বেশ কয়েক হাজার বিদেশী যোদ্ধা রয়েছে।
এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট বলেন, ‘আইএস সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা যাবে না। আমরা যতক্ষণ না সিরিয়ায় স্থানীয় বাহিনী, যারা নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় যুদ্ধ করবে, গঠন করতে পারছি, ততক্ষণ এ রকম আইএস চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হবে।’
এদিকে সিরিয়ার প্রাচীন নগরী পামিরা ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের দখলে যাওয়ার পর সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক বন্দি হয়ে পড়েছ বলে যানা যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা শহরটির দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় বহু মানুষ পালিয়ে যেতে চাইলেও তাদের যেতে বাধা দিয়েছ সিরীয় সরকারি বাহিনী। জাতিসংঘ বলছে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এ ধরনের খবর পাওয়া গেছে।
পামিরায় বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে তাই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
সংগঠনটি বলছে, পামিরা থেকে যখন সিরীয় সরকারি বাহিনী পালিয়ে যায় তখন কিছু মানুষ সেখান থেকে সরে যেতে পেরেছে। তবে তারপরও বহু মানুষ সেখানে আটকে পড়েছেন। ওই অঞ্চলের দুই লাখ নাগরিকের তিন ভাগের এক ভাগ পালাতে সক্ষম হয়েছ বলে জাতিসংঘ বলছে। স্থানীয় মানুষজন বলছে ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা সিরিয় সরকারের প্রতি অনুগত বেশকিছু ব্যক্তিকে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করেছে। এমন কিছু ছবি ফাঁস হয়েছে যেখানে শিরচ্ছেদ করা কিছু সৈনিকের মরদেহ দেখা যাচ্ছে। আইএসের সদস্যরা সরকার অনুগতদের ধরতে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় সেখানে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের আশংকা তৈরি হয়েছ।
ওদিকে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি হাসপাতালের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা। ওই হাসপাতালে কমপক্ষে ১৫০ সরকারি সৈন্য ও বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক প্রায় এক মাস ধরে আটকা পড়ে ছিলেন। মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেন, সিরিয়ায় আল কায়দার সহযোগী সংগঠন আল নুসরা ফ্রন্ট ও অন্যান্য সংগঠন জিসর আল-শুঘুর হাসপাতালের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
তিনি বলেন, আটকা পড়া সরকারি সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পালাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে অন্যদের হত্যা, আহত বা জিম্মি করা হয়েছে। তবে তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানানো হয়নি।