বেনিফিট জালিয়াতিতে ইতালির পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী
ইতালির পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিরা ব্রিটেনে এসে বেনিফিট জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। গত ১৯ মে মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের রেড ব্রিজ এলাকায় বেনিফিট প্রতারণা বিরোধী অভিযানে ১৩৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বলে বিভিন্ন ইংরেজী গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দিন বেনিফিট জালিয়াতি দায়ে ১০ জন এবং জালিয়াতিতে সহায়তার দায়ে আরো তিনজন সহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সহয়াতাকারীর মধ্যে ফ্যামিলিস ফর সারভাইভাল ইউকে নামে একটি চ্যারিটির ট্রাস্টি আসমা খানম এবং ক্রিসটাল জব লিমিটেড নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির সাবেক পরিচালক কে এম হাবিবুর রহমান রয়েছেন। ইতালিয়ান পাসপোর্টধারী এসব ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে হাউজিং বেনিফিট বাবদ গত তিন বছরে রেড ব্রিজ কাউন্সিল থেকে প্রায় দেড় মিলিয়ন পাউন্ড আদায় করেছেন। ইইউ নাগরিকদের এমন বেনিফিট জালিয়াতির তথ্য উদঘাটনের এটাই প্রথম কোনো ঘটনা।
ধারণা করা হচ্ছে, রেড ব্রিজ কাউন্সিলকে অনুসরণ করে ইইউ নাগরিকের আধিক্য রয়েছে এমন অন্যান্য কাউন্সিলগুলোতেও বেনিফিট জালিয়াতির তদন্ত শুরু হবে। রেড ব্রিজ কাউন্সিল বেনিফিট জালিয়াতদের ধরতে দীর্ঘ এক বছর যাবত গোপনে অনুসন্ধান চালায়। ডিপার্টমেন্ট ফর ওয়ার্ক এন্ড পেনশন এবং পুলিশের সহায়তার কাউন্সিলের নিজস্ব বেনিফিট ফ্রড টিম যৌথভাবে এসব জালিয়াতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।
রেড ব্রিজ কাউন্সিলের একজন মূখপাত্র বলেন, বেনিফিট জালিয়তদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত আনাই এখন কাউন্সিলের মূল লক্ষ্য। জালিয়াতির এই ঘটনা উদঘাটন ভবিষ্যতের অনেক অর্থ সাশ্রয় করবে বলে তিনি মনে করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত বছরের সামারে কাউন্সিলের অফিসাররা প্রথম হাউজিং বেনিফিটে জালিয়াতির বিষয়টি সন্দেহ করেন। বেনিফিট এসেমেন্ট অফিসাররা লক্ষ্য করেন যে, রেড ব্রিজ কাউন্সিলে ইতালিয়ান নাগরিকদের হাউজিং বেনিফিটের জন্য আবেদন হঠ্যাৎ করে বেড়ে গেছে। তারা লক্ষ্য করেন, অস্বাভাবিক সংখ্যাক আবেদনকারী সপ্তাহে ১৫৬ পাউন্ড করে আয় করেন বলে আবেদন পত্রে উল্লেখ করেছেন। এরপর কাউন্সিলের বেনিফিট ফ্রড টিম ওইসব আবেদনকারীর ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নম্বর (এনআই) যাচাই করে দেখার জন্য ডিপার্টমেন্ট ফর ওয়ার্ক এন্ড পেনশন (ডিওপি)কে অনুরোধ জানায়। পুলিশ ও একই সময়ে ইতালি থেকে আসা ব্যাক্তিদের ওপর নজর রাখে।
পুলিশ জানায়, ইতালিয়ান পাসপোর্টধারী অনেক বাংলাদেশি স্ট্যান্সস্টেড এয়ারপোর্টে অবতরণ করে এনআই নম্বরের জন্য সাক্ষাতকার দিয়ে আবারও দিনে দিনেই ইতালি ফিরে যান। তারা মূলত ব্রিটেনে বেনিফিট দাবি করার জন্য এনআই নম্বর সংগ্রহ করেছিলেন বলে ধারণা।
ডিপার্টমেন্ট ফর ওয়ার্ক এন্ড পেনশনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পূর্ব লন্ডনের বো এলাকার একটি ঠিকানা ব্যবহার করে অন্তত চার শ ইতালিয়ান পাসপোর্টধারী ব্যক্তি এনআই এর জন্য আবেদন করেন। হাইজিং বেনিফিটের জন্য জমা দেয়া আবেদন পত্রে তারা যেসব কাজ বা ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভুয়া পেপার বানিয়ে তারা হাউজিং বেনিফিটের জন্য আবেদন করেছেন।
প্রসঙ্গত, ইউরোপিয় ইউনিয়নের নাগরিকদের ব্রিটেনে অবাধ প্রবেশাধিকার রয়েছে। ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকরা ব্রিটেনে হাউজিং বেনিফিট পেতে হলে তাদের দেখাতে হয়, যে তারা ব্রিটেনে কাজ করেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি যারা নাগরিকত্ব পেয়েছেন তারা অবাধ প্রবেশাধিকারের সুযোগ নিয়ে ব্রিটেনে এসে বসতি গড়ছেন। ইংরেজী ভাষা, চাকুরির সুবিধা এবং বড় বাংলাদেশি কমিউনিটির সান্নিদ্যে থাকার জন্য ব্রিটেনে আসছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার বেনিফিট জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। রেড ব্রিজের ঘটনায় বেশিরভাগই বাংলাদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।
ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, ইতালির নাগরিকত্ব পেয়েই বাংলাদেশিরা ব্রিটেনে পাড়ি দিচ্ছেন। অনেকে ব্রিটেনে বেনিফিট দাবি করলেও বসবাস করছেন ইতালিতে। ইউরোপ থেকে আসা বাংলাদেশিদের ব্রিটেনে বেনিফিট আবেদনে সহায়তার জন্য বেশকিছু কনসালটেনসি ফার্মও দেখা যায় পূর্ব লন্ডনে। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত যে কোনো উপায়ে বেনিফিট পাওয়ার জন্য বন্দোবস্ত করে দেন। বেনিফিট জালিয়াতিতে সহায়তাকারী হিসেবে গ্রেফতারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জামিনে মুক্তি দিয়েছে পুলিশ।
রেড ব্রিজ কাউন্সিলের ফাইন্যান্স এন্ড রিসোর্স বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলার কেম রাই বলেন, বেনিফিট জালিয়াতির বিষয়ে শূণ্য মাত্রার সহনীতা নিয়ে কাজ করছে কাউন্সিল। এধরণের জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত কাউন্সিলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোকে ভোগান্তিতে ফেলে বলে তাঁর মন্তব্য।