লক্ষাধিক প্রকৌশলীর ঘাটতি পূরণের পরামর্শ যৌথ সমীক্ষায়
বস্ত্র খাতে বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল
শাহেদ মতিউর রহমান: বস্ত্রখাতে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষ প্রকৌশলীর ঘাটতি পূরণ না হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না বাংলাদেশ। সম্প্রতি বস্ত্র মন্ত্র¿ণালয় ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সমীক্ষায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। বিশেষ করে বস্ত্র রফতানিতে দীর্ঘদিন চীনের আধিপত্য থাকলেও এখন তারা এ খাত থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়েছে। ফলে চীনের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের বিশ্ববাজারে স্থান দখল করার একটি মৌক্ষম সময় এসেছে। কিন্তু দেশে বর্তমানে এক লাখ ১১ হাজার দক্ষ প্রকৌশলীর অভাব থাকায় এই সম্ভাবনাকে ষোল আনাই ভারত তাদের কাজে লাগাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্র জানায়, দেশে দক্ষ প্রকৌশলীর অভাব পূরণ না হলে আগামী পাঁচ বছর পরে তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় দুই লাখে। তাই বস্ত্র রফতানিতে প্রধান প্রতিযোগী ভারতকে পেছনে ফেলে বিশ্ববাজার দখলে নিতে হলে জরুরি ভিত্তিতে এক লাখ প্রকৌশলীর ঘাটতি পূরণের জন্য সমীক্ষায় সরকারের প্রতি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে বস্ত্র রফতানিতে চীনের পরই অবস্থান বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক সময়ে চীন এ খাত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে বস্ত্র খাতে বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রকৌশলীর।
সূত্র জানায়, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারের চাহিদার দিকে দৃষ্টি রেখেই সম্প্রসারিত হচ্ছে দেশের বস্ত্র শিল্প, যা সামনের দিনে আরো গতিশীল হবে। নতুন এসব প্রতিষ্ঠানে বাড়বে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বা বস্ত্র প্রকৌশলীদের চাহিদা। সুতা থেকে পোশাক বানানোর প্রযুক্তিনির্ভর পুরো প্রক্রিয়াই দক্ষভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন হয় দক্ষ প্রকৌশলীর। কিন্তু দেশে সে মানের পর্যাপ্ত প্রকৌশলী না থাকায় সে চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যাচ্ছে না। দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে প্রকৌশলী। বস্ত্র খাতে ফ্লোর লেভেল, মিড ও এক্সিকিউটিভ লেভেলে প্রকৌশলীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রকৌশলীদের ঘাটতি চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ১১ হাজার হলেও আগামী অর্থবছর গিয়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ২৬ হাজারে। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৫১ হাজার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৬৩ হাজারে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৬ হাজার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে তা উন্নীত হবে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজারে।
তবে ফ্লোর লেভেল প্রকৌশলীদের চাহিদা বেশি থাকায় তাদের ঘাটতিও হবে বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ ৮৯ হাজার প্রকৌশলীর চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হবে মাত্র ৩৪ হাজার ৭৫০ জন। এছাড়া মিড ও এক্সিকিউটিভ লেভেলে ৭২ হাজার প্রকৌশলীর চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ক্ষমতা থাকবে মাত্র ৪৬ হাজার। এ খাতে বিপুল পরিমাণ প্রকৌশলীর ঘাটতি থাকায় তরুণদের জন্য তা সম্ভাবনাময় পেশা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক প্রকৌশলী মাসুদ আহমেদ জানান, দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করার একটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে বস্ত্র খাত। বিকাশমান এ খাতে যেমন ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে, তেমনি এ বিষয়ে পড়ালেখা করে উদ্যোক্তা হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। তিনি জানান, দেশে উন্নত ও বড় পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অদক্ষ শ্রমিকদের নিয়ে চাহিদা মেটাচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। অধিকাংশ প্রকৌশলী তৈরি হচ্ছে চাকরিতে যোগ দেয়ার পর দেখে দেখে শিখে।
প্রকৌশলীদের ঘাটতি মেটাতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সেগমেন্টে কী ধরনের প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে, সে অনুপাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। এছাড়া বিদ্যমান কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি এবং গবেষণা জোরদার করতে হবে।
এদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বস্ত্র প্রকৌশলীদের ঘাটতি মেটাতে সরকার বেশকিছু প্রকল্প ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে। এছাড়া কিছু প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বস্ত্র খাতের নির্বাহী পর্যায়ে দক্ষ বস্ত্র প্রকৌশলী সরবরাহ করতে দেশের সাত জেলায় সাতটি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং দুই জেলায় দুটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া জামালপুর ও ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেয়েছে।
বস্ত্র প্রকৌশলীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টের (এটিইটি) সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী জানান, বস্ত্র প্রকৌশলীদের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের সুযোগ রয়েছে। প্লান্ট ম্যানেজার, ডিজাইনার, ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার বা টেকনোলজিস্ট ছাড়াও প্রডাকশন ম্যানেজমেন্ট, টেক্সটাইল টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স এবং নতুন পণ্যের উন্নয়ন, বায়িং হাউজে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। তবে তরুণদের এ খাতে আকৃষ্ট করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের পাশাপাশি অন্যান্য খাতের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।