শান্তি ও সহিষ্ণুতার লক্ষ্যে ওআইসি’র সংশ্লিষ্টতা জোরদারের আহবান

OICপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী আন্ত:সরকার পর্যায়ে সন্ত্রাস মোকাবেলা ও শান্তি ও সহিষ্ণুতা জোরদারের লক্ষ্যে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ এবং ওআইসি’র সংশ্লিষ্টতা জোরদারের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বৃহষ্পতিবার কুয়েতে বায়ান প্রাসাদে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের ৪২তম অধিবেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এশীয় গ্রুপের পক্ষে বক্তৃতা করছিলেন।
তিনি সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় বৈশ্বিক লড়াইয়ে বিগত বছরগুলোতে ওআইসি’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের প্রশংসা করেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর দেশসমূহে সহিষ্ণুতার অভাব ও সন্ত্রাসের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই পরিষদ ইসলামিক উম্মাহর সামনে বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বিশেষ করে ফিলিস্তিন ও আরব-ইসরাইল সংঘাত, ইয়েমেন পরিস্থিতির সমাধান করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ ইয়েমেনে ঐক্য ও স্থিতিশীলতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসমানরা পরিকল্পিত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা এ অঞ্চলে তৎপর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের ফাঁদে পড়তে বলে উদ্বেগ বাড়ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্মেলন আয়োজন করার জন্য কুয়েত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমাদ আল যাবের আল সাবাহ সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ আল হামাদ আল সাবাহ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থা ও ইসলাম ভীতি মোকাবেলার কার্যকরী কৌশল সংক্রান্ত একটি বিশেষ অধিবেশনেও যোগ দেন।
মাহমুদ আলী সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিষয়ে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স বজায় রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলাম ভীতির অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিদ্যমান কৌশল জোরদার করার পাশাপাশি ওআইসি সচিবালয়ে সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলা ইউনিট প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সমর্থন করেন।
মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিষয়ক ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে যোগ দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির উল্লেখ করে বলেন, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সমাজের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০১২ সালের নভেম্বরে ইয়াংগুন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার জাতির অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলমানদেরকে নিজেদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় না দিলে সম্প্রতি আদম শুমারিকালে অংশগ্রহণ করতে বাধা দিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বিস্তার কেবল বাংলাদেশের উপকূলে নয় বরং দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের তিনটি প্রতিবেশী দেশের ছড়িয়ে পড়েছে। তাই দীর্ঘদিনের এ সমস্যা একটি স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।
সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিসেস রেতনো লেলটার পি মারসুদির সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা নৌযাত্রী লোকদের দুর্দশা ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মাহমুদ আলী তাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হওযায় ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য হতে আঞ্চলিক দেশগুলোর মিয়ানমারের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরে কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ আল হামাদ আল সাবাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নতুন বিষয় অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে আতিথেয়তা দেয়ার জন্য কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং সম্মেলনের সফল সমাপ্তি কামনা করেন।
কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নব্বই দশকের শুরুতে তাদের মুক্তিযুদ্ধে এবং সারাদেশ থেকে স্থলমাইন অপসারণে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে তা আরো জোরদার হওয়ার আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে কুয়েতের আমির এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণপত্রের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তিনি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করার কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান যা তিনি সানন্দে গ্রহণ করেছেন। -বাসস

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button