বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট সিরাজুর রহমান আর নেই
বিবিসি বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট সিরাজুর রহমান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি আজ সোমবার লন্ডনের রয়েল ফ্রি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
তার স্ত্রী সফিয়া রহমান জানান, সকালে তিনি হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। এমন সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টেলিফোনে তাকে সিরাজুর রহমানের অবস্থার অবনতির কথা জানান। এ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু তিনি পৌঁছার আগেই সিরাজুর রহমান মারা যান। ময়না তদন্ত শেষে তাকে স্থানীয় হেন্ডন কবরস্থানে দাফন করা হবে। মৃত্যুর আগে তিনি নিজের ও স্ত্রীর জন্য সেখানে কবরের জায়গা কিনে রেখেছিলেন। এখানেই তার ছেলে ও মেয়ের কবর রয়েছে।
প্রবীণ সাংবাদিক সিরাজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই স্বপরিবারে নর্থ লন্ডনের হেনডন এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ২০১১ সালে ছেলে সাইফুর রহমান ও ২০০২ সালে মেয়ে নাজনিন রহমান মারা যান। এরপর তিনি দুই নাতি তানভির রহমান ও ছল রহমানকে নিয়ে একই বাসায় থাকতেন।
মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত ইতিহাস ও কালের সাক্ষী ছিলেন সিরাজুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সংবাদ তার কণ্ঠেই প্রচার করেছিল বিবিসি। ‘এক জীবন এক ইতিহাস’ নামের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে তিনি বর্ণনা করেছেন নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। এর মধ্যে ‘প্রীতি নিন সকলে’ ’বিবিসির দৃষ্টিতে বাংলাদেশ : স্বাধীনতার পনের বছর’, ‘রাজনৈতিক প্রবন্ধ’, ‘জেন অস্টিনের অনুবাদ গ্রন্ধ প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’, ‘আন্তন চেখভের নাটক’, ‘চার্লস ডিকেন্সের গ্রেট এক্স্রপেকটশন্স’, ‘শার্লেটে ব্রুন্টির জেন এয়ার’ উল্লেখযোগ্যে। এছাড়া সিরাজুর রহমান তার আত্মজীবনী ‘এক জীবন, এক ইতিহাস’ লিখে গেছেন।
বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতা জগতের এই উজ্বল নক্ষত্রের জন্ম ১৯৩৪ সালে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুরে। সিরাজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায় হলেও স্কুলজীবন কেটেছে কলকাতায়। তার সাংবাদিকতার শুরু কলকাতায়। মেট্রিক পরীক্ষার আগে কলকাতায় যোগ দেন দৈনিক আযাদ পত্রিকায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকায় ফেরেন পরিবারের সঙ্গে। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ছিলেন কলকাতা আলীয়া মাদরাসার শিক্ষক। ঢাকা কলেজের ছাত্র হিসেবে সিরাজুর রহমান অংশ নেন ভাষা আন্দোলনে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত জাতীয় সঙ্গীতের অফিসিয়াল যে মিউজিকটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বাজানো হয় সেটা তৈরির পেছনে মূল ভূমিকা ছিল তাঁর। ইন্টারমিডিয়েট অধ্যায়ন অবস্থায় দৈনিক ইনসাফ ও ইত্তেহাদ পত্রিকায় বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পর্যায়ক্রমে দৈনিক আযাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, ইত্তেহাদ, পাকিস্তান অবজারভার, দৈনিক মিল্লাত ও দৈনিক ইনসাফে বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। পাশাপাশি কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সত্যযুগ’-এ পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি হিসাবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেন। বিবিসিতে চাকরি হওয়ার পর ১৯৬০ সালে চলে যান লন্ডনে। ৩৪ বছর কাটিয়েছেন বিবিসি রেডিওর লন্ডনে প্রধান কার্যালয়ে। অবসর নিয়েছেন দুই দশক আগে।