রানাপ্লাজার মালিক রানা ও তার বাবা-মাসহ ৪২ জন অভিযুক্ত
অবশেষে বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। প্রায় ২৫ মাস পর সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেছেন। রানাপ্লাজার মালিক রানা ও তার বাবা-মাসহ ৪২ জনকে অভিযুক্ত করে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
বহুদিন ধরে সরকারি মঞ্জুরী আদেশের অভাবে চার্জশিট দিতে না পারায় ঝুলে ছিল বহুল প্রত্যাশিত বিচার কাজ। মামলায় প্রায় ৬ মাস আগে তদন্ত শেষ হলেও শুধু সরকারি মঞ্জুরী আদেশের জন্য আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন নিহত এবং আহত হয় প্রায় ২ হাজার। ওই ঘটনায় মোট ৩টি মামলা হয়। ৩টি মামলার মধ্যে একটি করে পুলিশ। পুলিশের মামলা ত্রুটিপূর্ণ জেনে সরাসরি হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন নিহত শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শিউলী আক্তার এবং অপর মামলাটি বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করার অভিযোগে ইমারত আইনে দায়ের করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ৩টি মামলার মধ্যে পুলিশের একটি এবং নিহত শ্রমিক জাহাঙ্গীরে স্ত্রী শিউলী আক্তারের মামলাটি একসঙ্গে তদন্ত হয়েছে। অপর মামলাটি আলাদা তদন্ত হয়েছে।
এ সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর জানিয়েছেন, পুলিশের এবং নিহত শ্রমিক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শিউলী আক্তারের মামলায় ৪২ ও রাজউকের ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আসামীদের মধ্যে ১৩ জন সরকারি কর্মকর্তা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের জন্য সরকারি মঞ্জুরী আদেশ প্রয়োজন। কয়েকজনের মঞ্জুরী আদেশ পাওয়া গেলেও অধিকাংশ এখনো বাকি রয়েছে। তাই মঞ্জুরী আদেশ না পাওয়ার কারণে তিনি আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পারছেন না। মামলাগুলোতে গ্রেফতার ২১ আসামর মধ্যে রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেকসহ ৯ জন জামিনে আছেন।
জামিন পাওয়া অপর ৮ জন হলেন, পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহ ও কমিশনার মোহাম্মাদ আলী, ইমতেমাম হোসেন, রাকিবুল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম, বজলুস সামাদ, মাহমুদুর রহমান তাপস ও আনিসুর রহমান। রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানাসহ বাকি ১২ জন জেলহাজতে রয়েছেন।
চার্জশিটে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছেন এমন সরকারি কর্মকর্তারা হচ্ছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত সাভারের পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কমিশনার মোহাম্মদ আলী, উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম রাসেল, সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত কল-কারখানা অধিদফতরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক বেলায়েত হোসেন ও মাহমুদ জামশেদুর রহমান এবং উপমহাপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম ও ইউসুফ আলী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবির হোসেন সরকার, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় ও রাজউকের সাভার উপজেলার ইমারত পরিদর্শক আওলাদ হোসেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসে রক্ষিত হিসাব অনুযায়ী রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যায়।
মৃত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অসনাক্তকৃত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জীবিত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১ হাজার পাঁচশ ২৪ জন আহত হন। তদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন।