ইরাকে সামরিক ভূমিকা বাড়াবে ব্রিটেন
ইরাকে মানবিক মিশনের বাইরেও সামরিক মিশন সম্প্রসারণ করবে ব্রিটেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, এটি আগামী কয়েক মাসের জন্য স্থায়ী হতে পারে। নতুন একটি পরিকল্পনার আওতায় ব্রিটেন ইরাকে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ মিশন আরো জোরালো করার পাশাপাশি সেখানে সামরিক উপস্থিতিও বাড়াবে। ব্রিটেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ আইএস জিহাদিদের দমনে ইরাক সরকারকে সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
টাইমসের খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে কিছু ব্রিটিশ সৈন্যকে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় কুর্দিস্তানে পাঠানো হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়কে রক্ষায় সম্ভাব্য চিনুক হেলিকপ্টার মোতায়েনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ব্রিটিশ সৈন্যদের সেখানে পাঠানো হয়। এতোদিন পর্যন্ত ইরাকের আইএস জেহাদিদের বিরুদ্ধে সীমিত পরিসরে বিমান হামলা চালিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে ব্রিটেনের পূর্ণ সমর্থন ছিল অবশ্যই। তবুও সেটাকে ঠিক যুদ্ধ বলে মনে হচ্ছিল না। গত বছর ওয়ালেসে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সিরিয়া ও ইরাকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড এবং তুরস্ক। কিন্তু তারপরও কাক্ষিত সাফল্য না আসায় ব্রিটেন ইরাকে আরও সৈন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে ব্রিটেন ইরাকে তাদের ট্রেনিং মিশনও জোরদার করছে।
এদিকে, আইএস জেহাদিদের তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ভয় ঢুকেছে ন্যাটোর মনে। উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। এক জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ব্রিটিশ শুধু বিমান হামলার পক্ষে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থল অভিযানের জন্য কুর্দিদের অস্ত্রসহ সব ধরনের সাহায্য দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি ব্রিটেন দিয়েছে, সুন্নি মুসলিম দেশবেষ্টিত এলাকায় তার কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আরো বেশি ভাবা প্রয়োজন। এছাড়া ২০০১ সালে আফগানিস্তান, ২০০৩ সালে ইরাক এবং ২০১১ সালে লিবিয়া অভিযানের অভিজ্ঞতা বলছে, বিমান হামলায় আসল বিজয় অর্জিত হয় না বা বিজয় দীর্ঘস্থায়ী হয় না। উপরন্তু এই কাজ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি একসাথে বহুজাতিক বাহিনীর লড়াই সমস্যাপূর্ণ হয় বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, আইএস জেহাদিরা এখনও সিরিয়া ও ইরাকের বিশাল অঞ্চল দখলে রেখেছে। সেখানে তারা ঘোষণা দিয়েছে খেলাফত প্রতিষ্ঠার। তাদের খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদি। শুধু তাই নয়, আইএস জেহাদিরা সিরিয়া সীমান্তবর্তী লেবাননের আরসাল শহর দখলের চেষ্টা চালায়। শিকার হয় তুমুল প্রতিরোধের। মারা যায় অসংখ্য জেহাদি। তবে পালিয়ে যাবার সময় লেবাননের বেশ কয়েকজন সৈন্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আইএস জেহাদিরা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, আল-কায়েদা সমর্থিত নুসরা গ্রুপও বেশ কিছু সৈন্যকে ধরে নিয়ে যায়। জেহাদিদের অনেকেও সেই যুদ্ধে লেবাননের সৈন্যদের কাছে ধরা পড়ে। কয়েকদিন ধরেই তাদের সদস্যদের মুক্তি দেয়ার দাবি করে আসছিল আইএস। কিন্তু তাতে সাড়া না পেয়ে এরই মধ্যে লেবাননের এক জিম্মি সৈন্যের শিরচ্ছেদ করেছে তারা। অন্যদেরও ক্রমান্বয়ে শিরচ্ছেদ করার হুমকি দেয়া হয়েছে। এর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে জেহাদিরা একে একে হত্যা করে মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলি এবং স্টিভেন সটলফকে।
প্রসঙ্গত, আফগান যুদ্ধের সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ যে ভঙ্গিতে গ্লোবাল ওয়ার অন টেরর ঘোষণা দিয়েছিলেন, একই ভঙ্গিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও গাইছেন যুদ্ধের প্রশস্তি। আইএসবিরোধী নবগঠিত জোটকে তিনি আপাতত বলছেন, মূল জোট। অর্থাৎ জোট পরিবর্ধনের কাজ চলবে। সেখানে অংশ নিতে পারে খোদ মধ্যপ্রাচ্যেরই কিছু দেশ, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। জোটের কলেবর বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনের আগ্রহই বেশি মনে হয়েছে। এত বিশাল জোট নিয়ে যুদ্ধের প্রকৃতি কেমন হবে, তা নিয়েও কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধ হলেও কোনো স্থল অভিযান হবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানান, আমরা এমনভাবে যুদ্ধ করব যাতে আইএস জেহাদিরা কোনো অঞ্চল দখলে রাখতে না পারে। আমাদের সৈন্যরা কেবল ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো সদস্যদের এমন বাচনভঙ্গিতে অনেক কিছুই অস্পষ্ট রয়ে গেছে।