মোদীর সফরে কী পেল দুই দেশ ?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই মুহূর্তে ভারতকে ভাবা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের এবং বন্ধুত্বের দেশ। তাছাড়া ঐতিহাসিক কাল ধরে আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের বন্ধুত্বের বিষয়টি সর্বজনবিদিত, ফলে গত বছর বিজেপি সরকার গঠনের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসছে কি-না, বা নতুন সরকারের সাথে সম্পর্কই বা কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়েও জনমনে ছিল ব্যাপক কৌতূহল।
ফলে, সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত যখন নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে এলেন, দেশের সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল।
এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রাপ্তি আর প্রত্যাশা নিয়ে কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে।
একজন বলছিলেন ছিটমহলের মানুষেরা এখন তাদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থেকে মুক্তি পাবে।
তিস্তার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের আরও সিরিয়াস হওয়া এবং চাপ প্রয়োগ করা উচিত ছিল, এমন মন্তব্য করেন আরেকজন।
সফরের প্রথম দিনে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং সংযোগ বিষয়ে মোট ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। স্বাক্ষর হয়েছে উপকূলীয় নৌ চলাচল চুক্তি এবং অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল প্রটোকল। এ দুটি চুক্তির ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতে পণ্য পরিবহনের পথ সুগম হবে এবং বাংলাদেশী সমুদ্রবন্দরের সাথে সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে ভারতীয় কয়েকটি বন্দরের।
এছাড়া, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি এবং কলকাতা-ঢাকা আগরতলা-এই দুটি রুটে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাস চলাচলও উদ্বোধন হয়েছে। তবে, সংযোগ সংক্রান্ত এসব চুক্তির ফলে ভারতই বেশি লাভবান হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ভারতের পাওয়া এক্ষেত্রে অসামান্য, কারণ তাদের উত্তরের রাজ্যগুলোর সাথে যে দীর্ঘদিনের সমস্যা, সেটা এখন প্রায় মিটে যাবে। তবে, ভালো কথা হলো ছিটমহলের মানুষেরা এখন নতুন প্রাণ পাবে, সীমান্ত আরো সুসংহত হলো। এছাড়া ভারত বিনিয়োগ নিয়ে আসছে, সেটাও ভালো খবর।
শনিবার দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্থল-সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর করেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব। ছিটমহল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়ায় ভারতের জনগণ এবং সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানান দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের একটি অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিও। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেরিতে হলেও এটিকে একটি অর্জন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেরিতে হলেও এটি আসলে একটা অর্জনই। তবে, বাস চলাচলই কেবল কানেক্টিভিটি বলে আমরা মনে করিনা, এটা আরো বড় বিষয়। এছাড়া, তিস্তার পানি নিয়ে আমাদের আক্ষেপের কথা আমরা বহুদিন থেকেই বলে আসছি। তিস্তা চুক্তি হবে বলা হয়েছে, তবে কবে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি।
তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন এই সফরে অন্য অর্জনের মোদি বা সামগ্রিক অর্থে ভারত বাংলাদেশকে একটি বার্তা দিচ্ছে, আর তা হলো দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ধারা আগের মতই অব্যাহত থাকবে। আর সেটিকে বাংলাদেশের পক্ষে একটি বড় অর্জন বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রব খান।
তিনি বলেন, অনেক সময়ই সরকার বদলের পরপরই প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক বদলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কংগ্রেস সরকারের সাথে যে সম্পর্ক ছিল, এখনও তারই একটি ধারাবাহিকতা দেখছি আমি। এটাও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাপক আলোচিত এবং প্রত্যাশার এই সফরের অর্জনকে কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রয়োজন। –বিবিসি বাংলা