বাংলাদেশে বিনিয়োগে যেসব বাধা
যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে এখনো বহু বাধা রয়েছে। বিনিয়োগের পর্যাপ্ত খাত এবং তরুণ ও কর্মঠ শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও এখানে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ অনুপস্থিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস অ্যাফেয়ার্স প্রকাশিত ‘২০১৫ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টে’ এমন পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগে বাধার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়কে তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত আর্থিক সুবিধা, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা এবং দুর্নীতি। এছাড়াও রয়েছে বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি এখনো গুরুতর প্রতিবন্ধকতা হিসেবেই রয়ে গেছে। সরকার প্রকাশ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করার কথা বলছে। তবে সম্প্রতি দুদকের ক্ষমতা খর্ব করে আইন পাসে সংস্থাটির ভূমিকা সীমিত হয়েছে।
কার্যকর বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতির অনুপস্থিতি এবং বিচারিক পদ্ধতির ধীর গতির কারণে চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন ও বিরোধ নিষ্পত্তির বাধাকে বিদেশি বিনিয়োগে বাধা হিসেবে বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে।
গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিতর্কিত ওই জাতীয় নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে চলতি ২০১৫ সালে প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। এই সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তবে ২০১৫ সালে দেশটি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৬ শতাংশের ওপরেই রয়েছে।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘বিগত আড়াই দশক ধরে দেশটি ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, এখানে কর্মঠ একটি তরুণ গোষ্ঠী রয়েছে। রয়েছে সক্রিয় বেসরকারি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।’
জনসংখ্যার নিরিখে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। এখানে বিশেষ করে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, অবকাঠামো এবং এর পাশাপাশি শ্রমঘন শিল্প হিসেবে বিবেচিত তৈরি পোশাক ও চামড়া প্রক্রিয়াজাত খাতে বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি কিছুটা বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে দাবি করে বিবৃতি বলা হয়েছে, ‘যদিও এ ধরনের বৈষম্য ব্যাপকভিত্তিক নয়, তবুও বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় শিল্পকে অহরহ পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে এবং সেখানে কিছু বৈষম্যমূলক নীতি ও আইনকানুন বিদ্যমান রয়েছে।’
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, যেসব বিদেশি ওষুধ দেশীয় উৎপাদিত ওষুধের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম, সেসব ওষুধের অনুমোদনপ্রাপ্তি সরকারের পক্ষ নিবিড় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। বিদ্যমান কোম্পানিগুলো ছাড়া নতুন শিপিং কোম্পানি অনুমোদনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ স্থানীয় মালিকানা থাকার বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেয়া হয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে জমি নিবন্ধন বিষয় বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিকভাবে ঝামেলাপূর্ণ দিক এবং জমি স্বল্পতা দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।