রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা, স্বস্তিতে নেই ইউরোপবাসী
ইউক্রেনে সরকার এবং বিদ্রোহী বাহিনীর লড়াইয়ের বছর গড়িয়েছে আরো আগেই। কিন্তু এর কোনো সমাধান আসেনি। বরং ভয়াবহ লড়াইয়ে পরোক্ষভাবে হলেও জড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব পরাশক্তি রাশিয়া ও ন্যাটো। বর্তমানে এই দ্বন্দ্ব ইউক্রেনের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও স্বস্তিতে নেই ইউরোপবাসী। বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের (ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন) সাধারণ বাসিন্দারা রাশিয়ার সম্ভাব্য ইউরোপ হামলা নিয়ে বেশ শঙ্কিত। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে সম্প্রতি পরিচালিত বড় পরিসরের এক জরিপে। ইউরোপবাসীদের মতে, কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্র নয়, রাশিয়ার হামলা থেকে বাঁচতে ন্যাটোর সামরিক শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বুধবার প্রকাশিত ওই জরিপের ফলের মাধ্যমে ইউরোপীয়দের মনে ভীতির চিত্রই প্রকাশ পেল। আমেরিকার ‘পিউ গ্লোবাল অ্যাটিটুডস প্রজেক্ট’ এই জরিপটি পরিচালনা করে। বর্তমান সংকটকালকে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তীকালে রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবনতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রায়ই সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হচ্ছে।
ন্যাটোর সনদ অনুযায়ী, হামলার শিকার হলে এর সদস্যরা একে অন্যকে সাহায্য করবে। তবে ২০০৪ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়া ইস্টার্ন বস্নকের ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের শঙ্কা ছিল, তারা বাইরের দেশ থেকে আক্রান্ত হলে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো হয়তো তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে না। পূর্ব ইউরোপীয়দের এই শঙ্কা সম্প্রতি লাটভিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেয়মন্ডস ভেজোনিসও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব না। রাশিয়া একসঙ্গে আমাদের সবাইকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে। আমরা সীমান্তে প্রস্তুত কিনা, তারা তা পরীক্ষা করে দেখে নিচ্ছে।’ ইউক্রেনে যুদ্ধের শুরু থেকেই পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া এবং এস্তোনিয়া সীমান্তে সেনাদের উপস্থিতি ও নজরদারি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করেছে।
একই সঙ্গে চলছে ইউরোপীয় অঞ্চলে আমেরিকান সেনাদের পদচারণাও। বর্তমানে দেশটির শত শত সেনা বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে সামরিক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে, ন্যাটো স্থলের পাশাপাশি মহড়া চালাচ্ছে বাল্টিক সাগরেও। আমেরিকা ইউরোপীয় জোটের না হলেও ন্যাটোর সদস্যভুক্ত হিসেবে জরিপে অংশ নেয়। জরিপে দেখা যায়, ইউরোপীয় মিত্রদের রক্ষা করতে তারা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইউরোপের কোনো দেশ আক্রান্ত হলে ৫৬ শতাংশ আমেরিকান সরাসরি পাল্টা হামলার পক্ষাবলম্বন করেছে। তবে জার্মানির অধিবাসীরা হয়তো রাশিয়াকে একটু বেশিই সমীহ করছে। ৫৮ শতাংশ জার্মান এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক দ্বন্দ্বের বিরোধিতা করেছে। তবে ৫৯ শতাংশ রাশিয়ান বিশ্বাস করে, বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চল একসময় ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
এদিকে, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেও আছে তিক্ততা। আমেরিকার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, ন্যাটো থেকে সামরিক সুবিধা ভোগ করেও অধিকাংশ দেশই তাদের প্রদেয় অর্থ ব্যয় করছে না। বর্তমানে শুধু ব্রিটেন, গ্রিস ও এস্তোনিয়াই ন্যাটোতে তাদের প্রদেয় সম্পূর্ণ খরচ করছে।
আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও জরিপে প্রভাব ফেলেছে। এতে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রতি সামরিক লড়াইয়ে রিপাবলিকানরা ডেমোক্রেটদের চেয়ে বেশি আগ্রহী। তবে ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে আমেরিকানদের তেমন সমর্থন দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, গত শীত মৌসুমে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের বিপক্ষে ইউক্রেন সরকারের হাত শক্তিশালী করতে বড় পরিসরে সামরিক সহায়তা পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করছিল আমেরিকা। তবে পরবর্তী সময়ে আমেরিকান কর্মকর্তারা এই ইস্যুটি নিয়ে বেশি দূর যাননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের পরিস্থিতি এড়াতে চাইছেন। তবে আসন্ন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করা রাজনীতিক হিলারি ক্লিনটন এবং জেব বুশ আরো শক্ত পদক্ষেপের পক্ষপাতী।
চলতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে জরিপটি পরিচালনা করে পিউ। টেলিফোনে এবং মুখোমুখি সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়। জরিপে ইউক্রেনে রাশিয়ার মনোভাবও পর্যালোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে সংঘর্ষে দেশটিতে ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ত্রবিরতির চুক্তি হলেও উভয়পক্ষই প্রায় প্রতিদিনই তা লঙ্ঘন করছে। তাছাড়া জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে।