ম্যাগনা কার্টার ৮০০ বছর পূর্তি

magna carta৮০০ বছর আগে এই দিনে লন্ডনের ২০ মাইল দূরে এক নদী তীরের বৈঠকে ইতিহাসের গতি পাল্টে গিয়েছিল। ১২১৫ সালের ১৫ জুনের সেই বৈঠকে ইংল্যান্ডের অজনপ্রিয় রাজা জন আর বিদ্রোহী ব্যারনদের মধ্যে একটি চুক্তির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল মানবাধিকারের মহাসনদ ম্যাগনা কার্টা। সেই ম্যাগনা কার্টা চুক্তির ধারাগুলো বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল এবং অসংখ্য সংবিধানের মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। ম্যাগনা কার্টার মাধ্যমেই যথাযথ প্রক্রিয়ার নীতি এবং আইনের অধীনে সমঅধিকারের রীতির জন্ম নিয়েছিল ব্রিটেনে। আজ পর্যন্ত তাদের লিখিত সংবিধানের প্রয়োজন হয়নি। প্রাচীন রীতি প্রথা আর ঐতিহ্যের ভিত্তিতে চলেছে দেশটি। তবে অনেক ব্রিটিশই মনে করছেন সময় এসেছে পরিবর্তনের।
বিশ্বের বড় গণতান্ত্রিক তিনটি দেশের একটি ব্রিটেন। যাদের লিখিত কোনো সংবিধান নেই। দেশটিতে রাজা এসেছেন, রাজা গেছেন, বিশ্বযুদ্ধে জয় পেয়েছে, কিন্তু কখনও সংবিধানের একটি লিখিত রূপ প্রয়োজন পড়েনি। দেশ চলেছে সাধারণ আইনে, পার্লামেন্টের কার্যবিধিতে, চুক্তি ও আন্তর্জাতিক সনদে।
তবে এবার কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে যুক্তরাজ্য। গত বছর সেপ্টেম্বরে স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য থেকে বের হয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট গ্রহণ করেছে। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও গত মাসে অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী দলটির ভূমিধস জয়ে ফের তাদের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
এদিকে, ২৮ জাতির ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জোটে ব্রিটেন থাকবে কি-না এ নিয়ে ব্রিটিশরা দ্বিধাবিভক্ত। দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়েও উঠেছে নানা বিতর্ক। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যভার সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা নেই। দেশের শিশুরা সংবিধান সম্পর্কে কিছু জানে না।
পার্লামেন্ট সদস্য গ্রাহাম অ্যালেনের মতে, সরকারের রীতিবিধান জনগণের জানা উচিত। সপ্তাহখানেক আগে লিখিত সংবিধানের পক্ষে একটি বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছেন হাউস অব লর্ডসের (পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ) সদস্য জেরেমি পারভিস। পার্লামেন্টের সংবিধান সংস্কার কমিটির আহ্বানে কিংস কলেজের শিক্ষকরা চার বছর পরিশ্রম করে সাংবিধানিক বিভিন্ন বিষয় একত্র করেছেন। গত বছর তারা ৭১ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।
তবে লিখিত সংবিধানের বিরুদ্ধেও রয়েছেন একদল। হাউস অব লর্ডস সদস্য ফিলিপ নর্তনের মতে, এটা অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রয়োজনীয় ও অর্জন-অযোগ্য। এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যান্থনি কিং বলেন, আমেরিকায় সংবিধান হয়েছে। সেখানে জর্জ ম্যাডিসন, আলেক্সান্ডার হামিলটন, জর্জ ওয়াশিংটনের মতো অনন্য সাধারণ বুদ্ধিজীবী ছিলেন। কিন্তু এই ২০১৫ সালে ব্রিটেনে তা নেই। তার মতে, লিখিত সংবিধান না থাকায় ব্রিটিশরা গর্বিত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button