ইইউর আদলে হবে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক
থিম্পুতে চার দেশের সড়ক যোগাযোগ চুক্তি স্বাক্ষর
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আদলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, বেলা ১২টার দিকে চার দেশের মন্ত্রীরা প্রতিবেশী চার দেশে সড়ক পরিবহনের একটি রূপরেখায় স্বাক্ষর করেন।
আজ সোমবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় চুক্তিটি অনুমোদন হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ চুক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরুর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ সড়ক যোগাযোগ সহযোগিতায় সাফল্য এলে এখান থেকেই এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সাধারণের সহজ চলাচল, ‘পিপল টু পিপল’ যোগাযোগ বাড়ানোর মতো সহযোগিতার বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হবে। প্রথম পর্যায়ে চারটি দেশ উদ্যোগ নিলেও রূপরেখায় এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেরও অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলেই চার দেশের মধ্যে এ সহযোগিতা চুক্তি হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে সহযোগিতার নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে। এ যাত্রার পরবর্তী অধ্যায়ে এ দেশগুলোর মধ্যে সহজ চলাচল ও প্রবেশ এবং পিপল টু পিপল আন্তঃসম্পর্ক জোরদার হবে। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যেমন চার দেশ একসঙ্গে এগিয়ে যাবে তেমনি যে কোনো দুর্যোগেও প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে থাকবে। এ অঙ্গীকার নিয়েই দক্ষিণ এশিয়ায় সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে চারটি বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
তিনি জানান, আগামী অক্টোবরে চার দেশের মধ্যে কার র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আরও দু’দিন আগেই ভুটানের রাজধানী থিম্পু গেছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সড়ক বিভাগের সচিব এ এ এম এন সিদ্দিক।
দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের আওতায় এই চুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের আপত্তির কারণে আঞ্চলিক পর্যায়ে চুক্তিটি সই হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় চার জাতির মধ্যে এই চুক্তি হচ্ছে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তিতে তৃতীয় দেশে চলাচলের সুযোগ রাখায় মোটরযান চুক্তি ট্রানজিট সুবিধাকে অবারিত করবে।
জানা গেছে, ভবিষ্যতে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার এই চুক্তিতে যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তির ফলে কানেকটিভিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে।
জানা গেছে, এ চুক্তির পর চলাচলের পথের সমীক্ষা, পরীক্ষামূলক চলাচল ও অভিবাসন-সুবিধা পর্যালোচনা করে আগামী বছরের শুরুতে চার দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যান চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। চুক্তির অধীনে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি চলতে পারবে। শুল্ক ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে নিজ নিজ দেশের আইনে। তবে ট্রানজিট ও চলাচলের অনুমতিসংক্রান্ত ফি নির্ধারণ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে।
খসড়া চুক্তি অনুসারে, যানবাহনের বৈধ মালিকানা, ফিটনেস ও ইনস্যুরেন্সের হালনাগাদ দলিল থাকতে হবে। চালকের স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক যে কোনো এক ধরনের লাইসেন্স থাকলেই চলবে। আর যাত্রীর থাকতে হবে বৈধ ভ্রমণ দলিল। তবে গাড়িতে নিষিদ্ধ কিংবা তালিকাভুক্ত স্পর্শকাতর মালামাল বহন করা যাবে না। ব্যক্তিগত, যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের অনুমতি পাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা ফরম পূরণ করতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত যানের দীর্ঘমেয়াদি অনুমোদন লাগবে। আর ব্যক্তিগত গাড়ির অনুমতি হবে সাময়িক এবং তা তাৎক্ষণিকভাবে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে।