মেলেনি প্রত্যক্ষদর্শী, বক্তব্য পাল্টাচ্ছে ঐশী
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজ ও তার স্ত্রী স্বপ্না খুনের ঘটনার এখনও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেননি গোয়েন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান খুনের দায় অস্বীকার করেছে। কাজের মেয়ে বলেছে, সে ঘুমিয়ে ছিল। ফলে হত্যাকান্ডে জড়িত বা কোনো প্রত্যক্ষদর্শীরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিতে কারো হাতের ছাপ না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই জোড়া খুনের ঘটনায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমান, কাজের মেয়ে সুমি ও ঐশীর এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
সন্দেহভাজন এ তিন আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী মেলানো যায়নি বলে জানায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। জানা গেছে, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি বেসিনের ওপর পাওয়া যায়, তাতে পানি পড়ে আঙুলের ছাপ নষ্ট হয়ে গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাসার কাজের মেয়ে সুমি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সেই রাতে সে ড্রইংরুমে ঘুমাচ্ছিল, মুখে পানির ছিটা দিয়ে তাকে জাগানো হয়, তখন সে প্রধান শয়নকক্ষে গৃহকর্ত্রী স্বপ্না ও ঐশীর কক্ষে গৃহকর্তা ইন্সপেক্টর মাহফুজকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। ঐশীকে ড্রইংরুমে ও তার ছোট ভাই ওহিকে বাথরুমে আটকে থাকা অবস্থায় দেখে, এ সময় ওহি চিৎকার করছিল। তাদের ছাড়া বাসায় আর কাউকে দেখেনি সে।
ঐশী রহমান তার মা-বাবাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর কথা গোয়েন্দাদের জানালেও নিজ হাতে খুন করার কথা স্বীকার করেনি, বলেছে তার দুই বন্ধুর কথা। তবে গোয়েন্দারা তার দুই বন্ধুর ওই বাসায় ঢোকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পায়নি এখন পর্যন্ত। রিমান্ডে নেয়া ঐশীর বন্ধু রনি ওই বাসায় ঢোকেনি, তবে পরে তাদের সহযোগিতা করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুনের আগে কফির জারে ঘুমের ১০টি বড়ি মেশানো হয়েছিল। এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান নিজেই ঘুমের বড়ি মেশায়। শুধু হত্যার আগেই নয়, বিভিন্ন সময়ই ঐশী তার বাবার কফি বা অন্য পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মেশাত।
কাজের মেয়ের জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্যেও প্রমাণ পাওয়া যায়, ঐশী কফির জারে ঘুমের ওষুধ মেশায়। তবে ঐশী তার দুই বন্ধুর বাসায় ঢোকার কথা বললেও, কাজের মেয়ে কাউকে দেখেনি এবং কেউ ওই বাসায় ঢোকেনি বলে গোয়েন্দাদের জানায় বাসার দারোয়ান।
এখন পর্যন্ত এ খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজনের কাছ থেকে পাওয়া কিছু কিছু তথ্য মিলছে না জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, ‘ঐশী ঘটনা সম্পর্কে বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করছে।’
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই চলছে, এটা শেষ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু জানানো হবে।’
হত্যাকা-ের পর পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের বাসা থেকে দু’দিকে ধারালো একটি ছুরি (খঞ্জর), একটি বটিসহ বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছিলেন সিআইডির ক্রাইমসিনের সদস্যরা। এসব আলামত সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ওইসব আলামত ছাড়াও ক্রাইমসিনের সদস্যরা বাসা থেকে হাত-পায়ের ছাপ ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বস্তুর ছাপ সংগ্রহ করেছেন। এসব আলামতও পরীক্ষা করছেন সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।