বিমানের চাকায় লুকিয়ে ১১ ঘন্টা ভ্রমণ
উদ্দেশ্য ছিল স্বপ্নের শহর লন্ডন পৌঁছানো। তাই সকলের অলক্ষ্যে জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে উঠে পড়েছিলেন দুই যুবক। তবে লুকিয়ে। বিমানের চাকায়। শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার হিথরো পৌঁছানোর পর বিমানের ভিতর থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় একজনকে। অন্যজনের মৃতদেহ পড়ে ছিল হিথরো বিমানবন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রিচমন্ড স্ট্রিটের একটি দোকানের ছাদে।
জোহানেসবার্গ থেকে হিথরোর দূরত্ব প্রায় ৬,০০০ মাইল। সরকারিভাবে এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। ব্রিটিশ পুলিশ বলছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। আগেও বহু বার এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বেআইনি অভিবাসীরা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ নিজেই তার সাক্ষী। ২০১২ সালে মোজাম্বিক থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে এ ভাবেই পড়ে যান এক অভিবাসী। ১৯৯৬ সালে লুকিয়ে দিল্লি থেকে লন্ডন চলে গিয়েছিলেন ভারতীয় দুই ভাই। সে বার ছোট ভাই মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তার বড় ভাই।
কিন্তু তারা বিমানে লুকোলেন কীভাবে?
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানের নীচে চাকার জন্য যে খোপ থাকে তার কোণের দিকে মানুষের গুটিসুটি হয়ে বসার মতো জায়গা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই খোপেই লুকোন তারা। বড় রুটে বিমান ও়ড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায়। সেখানে বায়ুর চাপ কমে যাওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রাও নেমে যায় শূণ্যের ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। ফলে শ্বাসকষ্টে বা ঠান্ডায় জমে মৃত্যু অনিবার্য। চাকার ওই খাপের ভিতর হাইড্রলিক লাইন ও হাইড্রলিক মোটর থাকে। যা দিয়ে বিমানের ভিতর বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে ওই মোটর থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। বিমান ওড়ার পর চাকা ওই খোপের ভিতর ঢুকে গেলে তার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। চার-পাঁচ ঘণ্টা দাঁতে দাঁত চেপে ওই পরিবেশের বায়ুচাপ ও তাপমাত্রার প্রকোপ সহ্য করে নিতে পারলেও, অনেকেই অক্সিজেনের অভাবে কাবু হন। অচৈতন্য হয়ে পড়ে থাকেন ওখানেই। ফলে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে চাকা বেরোনোর জন্য ওই খোপের দরজা খুলতেই পড়ে গিয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
তবে অভিবাসীরা সাধারণত ছোট রুটের উড়ানই বেছে নেন। সেখানে ওই দুই যুবক কোন দুঃসাহসে ১১ ঘণ্টার যাত্রার ঝুঁকি নিলেন, বুঝতে পারছেন না অনেকেই। অসুস্থ অভিবাসীকে বেহুঁশ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তদন্তের সূত্র পেতে এখন তারই দিকে তাকিয়ে পুলিশ।