‘‘ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সাহায্য করেছে ব্রিটিশ পুলিশ’’
প্রায় দুই মাস আগে সন্তানসহ ব্রিটেন থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেন তিন ব্রিটিশ মুসলিম নারী। আপাতদৃষ্টিতে এটি ইউরোপ থেকে পালিয়ে আইএসে যোগ দেয়া অন্য ঘটনাগুলোর মতো মনে হলেও সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া ওই তিন নারীর স্বজনরা। এক চিঠিতে তারা দাবি করেছেন, ব্রিটিশ পুলিশই ওই তিন নারীকে দেশ থেকে পালিয়ে আইএসে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে সন্ত্রাসবাদবিরোধী ব্রিটিশ সংস্থা নর্থ-ইস্ট কাউন্টার টেরোরিজমের (নেকটু) কার্যক্রমের ওপর দেয়া এই চিঠির পর দেশটির আইএসবিরোধী কার্যক্রমের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়েই বিতর্ক ও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৮ মে ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যান খাদিজা দাউদ (৩০), সাগরা দাউদ (৩৪) ও জোহরা দাউদ (৩৩)। সঙ্গে তাদের ৯ ছেলেমেয়ে। এরপর ১১ জুন তাদের ব্রিটেনে ফেরার কথা থাকলেও তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, আইএসে যোগ দিতে গত ৯ জুন তারা মদিনা থেকে ইস্তাম্বুলে গিয়েছিলেন।
গত রোববার পলাতক এই তিন বোনের মধ্যে দুজনের স্বামী মোহাম্মদ শোয়াইব এবং আখতার ইকবাল ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে দাবি করেন, ‘তাদের স্ত্রীদের এক ভাই ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে এর আগেই সিরিয়া গিয়েছিল। ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ পলাতক এই বোনদের তাদের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলত। এতেই বোনেরা মৌলবাদের দিকে ঝুঁকতে উৎসাহিত হয়েছে।’
চিঠিতে আরো লেখা হয়, ‘আমরা এটা ভেবে আতঙ্কিত যে, পুলিশ সরাসরি তাদের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে উৎসাহ দিয়েছে, যে ভাই আইএসের হয়ে যুদ্ধ করছে বলে আমরা সন্দেহ করছি। এছাড়া তাদের এসব পদক্ষেপের কারণে পরিবারগুলোর ওপর কী ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসতে পারে, সেটাও তারা মাথায় রাখেনি। এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংস্থা নেকটু এই তিনজনের প্রস্তুতি পর্বের সহযোগিতা করেছে। নেকটুর এই পদক্ষেপ এবং অবমূল্যায়ন ১২ ব্রিটিশ নাগরিকের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।’
জানা গেছে, ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান কেইথ ভাজ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই বোনের স্বামীদের আইনজীবীর মাধ্যমে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন নেকটু এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা। তাদের অনেকে এই দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। এছাড়া এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। গত রোববার তার মুখপাত্রের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে_ এমন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনাটা শেষ পর্যন্ত মৌলবাদকেই উৎসাহিত করবে। এ ধরনের অভিযোগ মৌলবাদের প্রকৃত কারণটিকে আড়াল করে রাখে।’
এছাড়া ব্রিটেনের ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের পুলিশ কর্মকর্তা রুস ফস্টার বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে নিখোঁজ ওই তিন নারী এবং তাদের সন্তানদের হদিস বের করার ব্যাপারে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’