ঐশী শিক্ষাহীন এক ‘ঐশী’র করুণ পরিণতি

Oisheতরুণী ঐশীর হাতে তার পিতা পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও মাতা স্বপ্না রহমানের হত্যাকান্ড সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সন্তান পিতা মাকে হত্যা করতে পারে একথা বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকে। অনেকে বলেছেন, তারা এমন নিষ্ঠুর ও নৃশংস হত্যাকান্ড কখনো দেখেননি। মনোরোগ চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোন সন্তান পিতা মাতাকে খুন করতে পারে না। কিন্তু ঐশী তার পিতা-মাতাকে খুন করেনি। করেছে মাদকাসক্তা ঐশী। এ ঐশী স্বাভাবিক ঐশী নয়। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, ইয়াবা সেবনের পর ঐশী নিষ্ঠুর, হতাশাগ্রস্ত ও নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ে। সেই ঐশী পিতা-মাতাকে খুন করেছে কিংবা খুনে  সহায়তা করেছে।
তারা বলেছেন, ইয়াবা তরুণ সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। জাতিকে রক্ষা করতে হলে কিংবা স্বাভাবিকভাবে বাঁচলে চাইতে চাইলে রাজনীতি নিয়ে হৈ চৈ না করে সমাজকে রক্ষায় ইয়াবাসহ সকল সর্বনাশা মাদকদ্রব্যের আগ্রাসন ঠেকাতে সকল রাজনেতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আবু তালেব ও উপ-পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারি জানান, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও আশপাশের সীমান্ত দিয়ে বস্তা বস্তা ইয়াবা আসছে বর্তমানে দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকেও ইয়াবা আসছে। আসছে ফেনসিডিল। মিয়ানমারে আছে ইয়াবা তৈরীর কারখানা এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে আছে অনেকগুলো ফেনসিডিল কারখানা।
বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, দেশের বহু ছেলেমেয়ে এখন ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে ডুবে আছে, যাদের নিয়ে পরিবার সমাজ বিপদে আছে। কিন্তু এ বিপদে পড়ার আগে আমাদের এই পরিবার ও সমাজ তাদের দিকে যথেষ্ট নজর দেয়নি। তাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যা যা করার দরকার ছিলো তা করা হয়নি বলেই আজকের এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। শিক্ষিত হলেও সঠিকভাবে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে না তারা। মনোবিজ্ঞানী আনোয়ারা সৈয়দ হক তার বক্তব্যে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও সত্য কথা বলেছেন। তা হচ্ছে শিক্ষিত হলেও অনেক ছেলেমেয়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠছে না অর্থাৎ মানবিক গুণাবলী ও মূল্যবোধের অধিকারী হচ্ছে না।
বলা বাহুল্য, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ এবং ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে এদেশের একশ্রেণীর পিতামাতা ও অভিভাবক প্রগতিশীল ও আধুনিক হওয়ায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তাদের এ ধরণের আচরণ, আকাশ সংস্কৃতি তথা ইন্টারনেট ই-মেল, ফেইসবুক ইত্যাদির যথেচ্ছ ব্যবহার তাদের সন্তানদেরও ধর্ম ও নীতি নৈতিকতাহীন ভোগবাদের অনৈতিক পথে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে পিতামাতা ও অভিভাবকের অজ্ঞাতসারে এ অন্ধকার পথে পা বাড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পিতামাতা ও অভিভাবকরা জানা সত্বেও এই আত্মঘাতী পথ থেকে তাদের সন্তানদের ফেরাতে পারছেন না। অসৎ সঙ্গ তাদেরকে সর্বনাশের শেষ প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।
এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধার বা রেহাই পেতে হলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গও সমাজের সচেতন মহলসহ পিতামাতা ও অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। সমাজে আর কোন ঐশী বা ঐশীর মতো কোন ছেলেমেয়ে যাতে সৃষ্টি না হয়, সেই লক্ষ্যে সম্ভব প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি সৎ মানুষ হওয়ার জন্য সন্তানদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে-ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক গুণাবলীতে গুনান্বিত হতে সহায়তা ও উৎসাহ দিতে হবে তাদের।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button