৫ বছর পর বাংলাদেশে কমলো বিদেশি বিনিয়োগ
সর্বশেষ পাঁচ বছর পর বাংলাদেশে কমলো সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। ২০১০ থেকে ১৩ সাল পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও ২০১৪ সালে কমেছে ৪.৭৪ শতাংশ বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আঙ্কটাড। তবে এ প্রতিবেদন যথাযথ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী। তবে এর কারণ জানে না বিনিয়োগ বোর্ড।
দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ।
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কি পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হয় তার তথ্য প্রকাশ করে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড)।
বুধবার ‘বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৫’ শিরোনামে সংস্থাটি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০১৪ সালের বিদেশি বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরার জন্য এক সংবাদ সম্মেলন করে বিনিয়োগ বোর্ড।
প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায় সর্বশেষ পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালেই প্রথম এফডিআই কমেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই ছিল ২০১০ সালে ৯১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। ২০১১ সালে হয়েছে ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২৪.৪২ শতাংশ বেশি। ২০১২ সালে হয়েছে ১২৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩.৭৫ শতাংশ।
২০১৩ সালে হয়েছে ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২৩.৭২ শতাংশ বেশি। কিন্তু ২০১৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ মার্কিন ডলার, যা ২০১৩ সালের চেয়ে ৪.৭৪ শতাংশ কম।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে এমন শীর্ষে দশ এ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটি থেকে বিনিয়োগ এসেছে ২০১৪ সালে ১৮ কোটি ৯৮ হাজার মার্কিন ডলার।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সাউথ কোরিয়া থেকে বিনিয়োগ এসেছে ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, তৃতীয় অবস্থানে থাকা পকিস্তান থেকে বিনিয়োগ এসেছে ১৩ কোটি ৭৪ হাজার ডলার। এছাড়াও বাংলাদেশে বিনিয়োগে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, হংকং, নরওয়ে, জাপান ও নেদারল্যান্ডস।
বন্ধু প্রতীম প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বিনিয়োগ এসেছে ৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। চীন থেকে এসেছে ৪ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে প্রধানত সাতটি খাতে। এর মধ্যে ২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ কমেছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এখাতে বিনিয়োগ কম হয়েছে ৯ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার। এ খাতের বিনিয়োগে এত বড় ধ্বস নামায় সার্বিক বিনিয়োগ চিত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এর পরেই বিনিয়োগ কম হয়েছে জ্বালানী খাতে। এখাতে ২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৪ বিনিয়োগ কমেছে অর্ধেক। ২০১৩ সালে বিনিয়োগ ছিল ৯ কোটি ৮৮ লাখ ৮ হাজার ডলার। ২০১৪ সালে এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার ডলার। বিনিয়োগ কমেছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। জ্বালানী খাতের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রলিয়াম জাতীয় পণ্যে এ বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে।
এদিকে বিনিয়োগ কমেছে সেবা খাতেও। এ খাতে ২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে বিনিয়োগ কম হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তবে অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে উৎপাদন, নির্মাণ সামগ্রী, ব্যবসা-বণিজ্য, কৃষি ও মৎস্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগ ২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগ কম হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোডের্র চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ বলেন, বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কোন কারণ নেই।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সকল ব্যবস্থা আগের চেয়ে সহজ করা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম বিনিয়োগ বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক এ এলাহী বলেছেন, আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সকল চিত্র যথাযথ ফুটে উঠেনি। যে সকল সূচক ধরে এ হিসেব করা হয়েছে এর বাইরেও বিনিয়োগ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খান আলমগীর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভনর্র নাজনীন সুলতানা, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিআই) সভাপতি রূপালী চেধুরী।
সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে স্থায়ী বিনিয়োগ কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে জাতীয় সংসদে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী এ দাবি জানিয়ে বুধবার বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত বিনিয়োগ। যেভাবেই হোক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশী হোক, আর বিদেশি হোক, বিনিয়োগ
বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বোর্ডকে গতিশীল করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার।