যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হিজাব পরা টিভি অ্যাঙ্কর
‘আমার নাম নূর, মানে ‘আলো।’ আমার নামের অংশ আল হুদা। ফলে নূর আল হুদা মানে ‘পথ নির্দেশকারী আলো’।’
সেই ছোট্টবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল সাংবাদিক হবেন। তিনি তা হয়েছেন। সেইসাথে মূলধারার মিডিয়ায় মুসলিম নারীদের নিয়ে গৎবাঁধা ধারণা নাকচ করে দিয়ে বাণিজ্যিক টেলিভিশনে প্রথম হিজাব পরা অ্যাঙ্কর হিসেবে কাজ করা মুসলিম আমেরিকান নারীও হয়েছেন তিনি।
আমি রিপোর্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠেছি। আমার সেই বেড়ে ওঠা নিয়ে অনেক কথা বলার আছে,’ বলছিলেন নূর তাগোরি, হাফিংটন পোস্টে এক ভিভিওবার্তায়। আমি কখনো ভাবিনি, আমি হিজাব পরব, কিন্তু যখন পরতে শুরু করলাম, তখনো আমি সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন হারাইনি। সত্যি বলছি, হিজাব পরা বা সাংবাদিক হওয়ার কোনোটিকেই বাদ দিতে চাইনি।’
আমেরিকান মুসলিম শিশু হিসেবে পরিচিতি নিয়ে যে সংগ্রাম করেছেন এই লিবিয়ান-আমেরিকান সাংবাদিক, তা সত্যিই রূপকথার কাহিনী।
“আমার নাম নূর, মানে ‘আলো।’ আমার মাঝের নাম আল হুদা। ফলে নূর আল হুদা মানে ‘পথ নির্দেশকারী আলো,’ বলেন এই নারী। ‘আমার নামই আমাকে আলোর পথ নির্দেশ করতে উদ্দীপ্ত করেছে।’
২১ বছর বয়স্কা নূর তাগোরির স্বপ্ন পূরণ হয় ২০১২ সালে #LetNoorShine বা ‘আলো জ্বলতে দাও’ শিরোনামে সামাজিক মাধ্যমে বিপুল প্রচারণার মাধ্যমে। তিনি কেবল নিজেকে নয়, অন্যদের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ দিতে আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
নূর জানান, ‘আমি আমেরিকান টেলিভিশনে হিজাবি সাংবাদিক হওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সোচ্চার হওয়ার পর থেকেই #LetNoorShine শুরু করি।’গর্বিতভাবে হিজাব পরা নূরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রায় ৮৯ হাজার ফলোয়ার রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড এইডস ডে-এ ছাত্রদের মধ্যে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে নূর ১৮ বছর বয়সে সিবিএস রেডিও কমিনিটি এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্স পরিচালক জাস্টিন লাভের নজর কাড়েন। তিনিই তাকে ইন্টার্নশিপ করার অফার দেন।নূর বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করার জন্য ইততিখারাহ নামাজ পড়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমার পারফরমেন্সের আগের রাতে আমি নামাজ পড়েছিলাম, আমি আল্লাহর কাছে ইন্টার্নশিপ বা চাকরি বা কোনো একটা কিছু চেয়েছিলাম।’
জুনিয়র সাংবাদিক থেকে সিবিএস রেডিওর ইন্টার্নশিপ ছিল স্বপ্ন পূরণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। নূর জানান, ‘আক্ষরিকভাবেই ওই ইন্টার্নশিপ আমার জীবনকে বদলে দিয়েছিল।’
‘#LetNoorShine ছিল একটা সূচনা। সবকিছুই খাপে খাপ মিলতে লাগল। একটার পর একটা সুযোগ আসতে লাগল। আর আমার ওই নামাজই আমাকে পথ দেখাতে লাগল।
অনেকের সাপোর্ট আর প্রশংসা পেলেও অনেকের বিরোধিতার মুখেও পড়েছেন তিনি।‘অনেকেই অনেকবার আমাকে বিদায় করতে চেয়েছে। আমি হিজাব পরে কাজ করতে পারব না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে অনেকে। অনেকেই বলত, বিদায় নেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
নূর জানান, ‘কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, এখনকার প্রজন্ম আসলে আগামী প্রজন্ম। পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। লোকজন এতে (হিজাবে) অভ্যস্ত হচ্ছে। লোকজন বৈচিত্র্য চায়, একে অন্যকে বুঝতে চায়।’
সরকারি কোনো হিসাব না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ থেকে ৮০ লাখ মুসলমান আছে বলে ধারণা করা হয়। ‘পাবলিক রিমেইন্স কনফ্লিক্ট ওভার ইসলাম’ শীর্ষক পিউ গবেষণা সেন্টারের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, আমেরিকানরা মুসলমান এবং তাদের ধর্ম সম্পর্কে খুব সামান্যই জানে।
ইকোনমিস্ট/ইউগভের আরেক সমীক্ষায় দেখা যায়, আমেরিকানদের বিপুলসংখ্যকই বিশ্বাস করে, মার্কিন মুসলমানরা বৈষম্যের শিকার। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।