হিন্দু অনাথের অভিভাবক মুসলমান পরিবার
কোনো মুসলিম দম্পতি যদি হিন্দুর সন্তানকে দত্তক নিতে চান, বা যদি উল্টোটাই ঘটে, আদালত কি খুব সহজে সেই আবেদনে সম্মতি জানাতে পারে? বা চারপাশ থেকে আপত্তি আসবে না, সেটাও কি ভাবা যায়?
মোহাম্মদ শাহনাওয়াজ জহিরের বেলাও এমনটা হয়েছে। নানা চড়াই-উৎরাই, বাদানুবাদ পেরিয়ে শেষ হাসিটা কিন্তু তার মুখেই। দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে হিন্দুর দুই সন্তান, সম্পর্কে যমজ ভাই-বোন, তাদের অভিভাবকত্ব পেলেন জহির দম্পতি।
ভাই-বোনের নাম আয়ুষ ও প্রথমা। ওদের মা ছিলেন বিমানসেবিকা, বাবা পাইলট।
২০১২ সালটা অভিশপ্তই ছিল আয়ুষ ও প্রথমার জন্য। ওই বছর মা ও বাবাকে হারায় এই ভাই-বোন। আগে মা, পরে বাবা। একরকম অনাথই হয়ে পড়ে ভাই-বোন। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে এতটুকু স্বস্তি পাননি প্রবীণ দেওয়াল। শঙ্কিত ছিলেন দুই সন্তানের ভবিষ্যত্ ভেবে। স্বজন-পরিবারের কেউ মুখের ওপর ‘না’ বলতে না পারলেও, তারা যে বাচ্চাদের দেখতে রাজি নন, বুঝে নিয়েছিলেন প্রবীণ। তাই ভরসা করেছিলেন বন্ধু, তারই মতো পাইলট জহিরের ওপর। মৃত্যু পথযাত্রী বন্ধুকে কথা দিয়েছিলেন জাহির-দম্পতি।
এর মধ্যে প্রবীণের মৃত্যুও হয়। তারপর, কাকার কাছেই ছিল দুই ভাই-বোন। তারই মধ্যে একদিন আয়ুষ ও প্রথমার খোঁজ নিতে ফোন করেন জহির। বাচ্চাদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন, ওরা ভালো নেই। এর পর প্রবীণের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। যদি তারা রাখতে রাজি হয়। কিন্তু, নানা মামা, না দাদি কেউ-ই রাজি হননি দায়িত্ব নিতে। স্বজনদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন, এদের অনেক বেশি আগ্রহ প্রবীণের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি নিয়ে।
আর দেরি না করে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেন জহির দম্পত্তি। অভিভাবকত্ব আইনের আওতায় বন্ধুর দুই সন্তানকে কাছে পেতে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে আদালত সেই আবেদনে সম্মতি জানিয়েছে। আয়ুষ ও প্রথমাও এবার জাহিরের পরিবারেরই সদস্য। বাচ্চারাও খুশি, খুশি জহির দম্পতিও।
জহির জানান, ওরা ওদের মতো করে হিন্দু রীতিনীতি মেনেই বড় হয়ে উঠবে। -এই সময়