ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়ম-কানুন : সেটেল্ড হবার ও কাজ করার সুযোগইবা কতটুকু ?

Nazir Ahmedব্যারিস্টার নাজির আহমদ: অতীতে ইমিগ্রেশন রুলের প্যারা ৫৭-এর অধীনে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন বিবেচনা করা হতো। কিন্তু গত দশকের শেষের দিকে স্টুডেস্টস্ ভিসার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। পুরো স্টুডেন্টস্ ভিসা রেজিমটি পয়েন্টস্ বেইজড সিস্টেমের টিয়ার-৪ এর অধীনে ঢুকানো হয়েছে এবং তা ইমিগ্রেশন রুলের প্যারা ২৪৫ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
পয়েন্টস্ বেইজড সিস্টেমের টিয়ার-৪ কে আবার দুটি ক্যাটাগীরতে ভাগ করা হয়েছে: টিয়ার-৪ (জেনারেল) স্টুডেন্টস এবং টিয়ার-৪ (চাইল্ড) স্টুডেন্টস্। প্রথম ক্যাটাগরীতে ১৬ বছরের উপর বয়স্ক ছাত্র/ছাত্রীরা আসতে পারবেন। অপরদিকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরীতে ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের ছাত্র/ছাত্রীরা আসতে পারবে। বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরীর আবেদনকারীরা বাস্তবে খুবই নগন্য বিধায় আমাদের আলোচনাগুলো হবে প্রথম ক্যাটাগরীকে নিয়ে।
টিয়ার-৪ ক্যাটাগরীতে ভিসা পাবার জন্য মূলত: দুটি রিকোয়ারমেন্টে যথাযথ পয়েন্টস্ পেতে হবে। টিয়ার-৪ এর লাইসেন্সড স্পন্সর এর কাছ থেকে ভেলিড কমফারমেশন অব এক্সসেপ্টেন্স তথা সিওএস পেলে তাতে ৩০ পয়েন্টস্ পাওয়া যাবে আর মেইনটেনেন্স রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করলে তাতে ১০ পয়েন্ট পাওয়া যাবে। মোট এই ৪০ পয়েন্ট পেতে হবে স্টুডেন্ট ভিসা পেতে বা ব্রিটেনে বসবাসরত স্টুডেন্টদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বা এক্সটেনশন করতে। এই রিকোয়ার্ড পয়েন্টস স্কোর করতে না পারলে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন বা ভিসার এক্সটেনশন করার আবেদন নাকচ করা হবে। আর সেই নাকচের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন না। বরং তারা এডমিনিস্ট্রেটিভ রিভিউ করার সুযোগ পাবেন।
নতুন নিয়মের অধীনে কনফারমেশন অব এক্সসেপ্টেন্স বা সিওএস একটি গুরুত্বপূর্ণ ডক্যুমেন্ট। এতে একটি ইউনিক রেফারেন্স নাম্বার থাকে। তার সাথে সাথে কোর্স সম্পর্কিত তত্ত্ব ও সংশ্লিষ্ট ছাত্রের ব্যক্তিগত তথ্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি হোম অফিস বা হাইকমিশন ইস্যু করে না। বরং এটা ইস্যু করে ছাত্র/ছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট স্পন্সর। প্রত্যেক আবেদনকারীদের অবশ্যই ভেলিড সিওএস থাকতে হবে। বৈধ সিওএস-এর শর্তাবলীগুলো হলো:- প্রথমত: সংশ্লিষ্ট ছাত্রের পাসপোর্টে যেসব তথ্যাদি দেয়া আছে, ঠিক হুবহু তাই সিওএস-এ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত: সেটি আবেদন করার ঠিক আগের ছয় মাসের মধ্যে ইস্যু করতে হবে। অর্থাৎ ছয় মাসের অতিরিক্ত সময় পার হয়ে গেলে তা আর বৈধ থাকে না। তৃতীয়ত: ইস্যু করার পর টিয়ার-৪ স্পন্সর বা হোম অফিস কর্তৃক বাতিল বা প্রত্যাহার করে নিলে সেই সিওএস আর বৈধ থাকে না। শর্তগুলো পূরণ হবার পরও আবেদনকারী কোর্স শুরু হওয়ার তিন মাসের পূর্বে টিয়ার-৪-এর আবেদন করতে পারবে না। সিওএস একবারের অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। যদি টিয়ার-৪ এর আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়ে যায় এবং আবেদনকারী ছাত্র যদি আরেকটা আবেদন করতে চায় তাহলে তাকে নতুন করে স্পন্সরের কাছ থেকে সিওএস নিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, বৈধ সিওএস থাকার পরও আবেদনের সফলতার নিশ্চয়তা নেই, কেননা আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরীর অন্যান্য শর্তাবলী এবং ইমিগ্রেশন রুলস এর সাধারণ রিকোয়ারমেন্টস্ পূরণ করতে হবে।
সিওএস এর পর গুরুত্বপূর্ণ রিকোয়ারমেন্ট হলো মেইনটেনেন্স বা ফান্ডস্। বিদেশী ছাত্র/ছাত্রীরা ইউকে পাবলিক ফান্ডস্ তথা বিভিন্ন সোস্যাল বেনিফিটস্ নিতে পারবে না। তাই তাদের পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে, যাতে করে ইউকেতে পড়াশুনার সময় আর্থিকভাবে অসুবিধায় পড়তে না হয়। কী পরিমাণ অর্থ আইনগতভাবে আবেদনকারীর একাউন্টে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকতে হবে তা নির্ভর করে কতটুকু দীর্ঘ কোর্স এবং কোথায় পড়াশোনা করবে – লন্ডনে না লন্ডনের বাইরের শহরে।
মেনটেইনেন্সের জন্য ইমিগ্রেশন রুলস ১০ পয়েন্ট বরাদ্দ করেছে। এই রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে কোর্সের প্রথম বর্ষের কোর্স ফিস অথবা কোর্স যদি চলতি বা চলমান হয়, তাহলে পরবর্তী পিরিয়ড অব স্টাডির কোর্স ফিস এবং নয় মাসের লিভিং কস্ট কাভার করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ একাউন্টে থাকতে হবে। ইনার লন্ডন হলে বর্তমানে প্রতি মাসের লিভিং কস্ট £ ১০২০ করে ধরে নয় মাসের অর্থ আর আউটার লন্ডন হলে প্রতি মাসের লিভিং কস্ট £ ৮২০ করে ধরে নয় মাসের অর্থ একাউন্টে থাকতে হবে। অর্থের এই পরিমাণ বছরে বছরে বাড়তে পারে। তাই প্রত্যেক ছাত্র/ছাত্রী যারা আবেদন করবেন ভিসার জন্য তাদের উচিত আবেদনের পূর্বে অর্থের সঠিক পরিমাণ জেনে নিয়ে সে অনুপাতে প্রস্তুতি নেয়া। যারা ব্রিটেনের ভিতর থেকে ভিসা এক্সটেনশনের জন্য আবেদন করবে তারা যদি স্টাবলিশ প্রেজেন্স-এর শর্তাবলী পূরণ করতে পারেন তাহলে তাদের জন্য লিভিং কস্টের উপরোক্ত পরিমাণের চেয়ে অনেক কম অর্থ একাউন্টে থাকলেও চলবে। স্টাবলিস প্রেজেন্স্ এর শর্তাবলী পূরণকারী আবেদনকারী ছাত্র/ছাত্রীদের নয় মাসের পরিবর্তে মাত্র দুই মাসের লিভিং কস্ট এর অর্থ একাউন্টে দেখালেই চলবে।
যারা বিলেতে পড়াশুনা করতে আসতে চান তাদের অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় উপযুক্ত দক্ষতা থাকতে হবে। ইংরেজি ভাষায় যারা খুবই দুর্বল বা ভাষার ব্যাপারে ন্যূনতম রিকোয়ারমেন্ট যারা পূরণ করতে অক্ষম তাদের বিলেতে পড়াশুনা করতে আসার কথা চিন্তা না করাই ভালো। সব সময়ই ইংরেজি ভাষার দক্ষতার রিকোয়ারমেন্ট ইমিগ্রেশন আইনে ছিল। তবে সেই দক্ষতা যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি হয়তো ভিন্ন ভিন্ন ছিল। সম্প্রতি ইংরেজি ভাষার দক্ষতার শর্তাবলী অনেক স্বচ্ছ এবং শক্ত করা হয়েছে। সাধারণত: সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর টিয়ার-৪ এর স্পন্সর প্রতিষ্ঠান তার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই-বাছাই করবে তাদের সংশ্লিষ্ট কোর্সের অভারল একাডেমিক এসেসমেন্টের অংশ হিসেবে। টিয়ার-৪ এর অনুমোদিত ইংলিশ ল্যাংগুয়েজগুলোর তালিকা হোম অফিসের ওয়েবসাইটে বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে। প্রত্যেক আবেদনকারীর উচিত তারা যেন সংশ্লিষ্ট কোর্স ভালো করে যাচাই-বাছাই করে আবেদন করেন।
সেটেল্ড হবার সুযোগ
অতীতে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়িয়ে দীর্ঘ সময় ব্রিটেনে থাকা যেত। এক কোর্স করে অন্য কোর্স – এভাবে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়িয়ে সর্বমোট ১০ বছর ইউকে’তে থাকতে পারলে ‘টেন ইয়ারস লং রেসিডেন্স’ রুলের আওতায় ইনডিফিনিট লীভ বা পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট – এর জন্য আবেদন করা যেতো এবং শর্তাবলী পূরণ করলে তা অনায়াসেই পাওয়া যেতো। প্রথমে এই ‘টেন ইয়ার্স লং রেসিডেন্স’ প্রভিশনটি ইমিগ্রেশন রুলের আওতাভুক্ত ছিল না। বরং তা ছিল ‘কনসেশন’এর অন্তর্গত। অর্থাৎ এটা ছিল হোম অফিসের একান্ত বিবেচনাধীন ব্যাপার। পরবর্তীতে তা ইমিগ্রেশন রুলস এর মধ্যে ঢুকানো হয়। কিন্তু সেটাও বিদেশী ছাত্র/ছাত্রীদের ক্ষেত্রে সীমিত করা হয়েছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী কিছু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ছাত্রছাত্রীদেরকে ডিগ্রী ও তার উপরে পড়াশুনার জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশী মেয়াদের জন্য আবেদন করলে সাধারণত: লীভ ট্যু রিমেইন আবেদন নাকচ করে দেয়া হবে। কিছু কিছু ব্যতিক্রম আছে, যেমন- মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি, এগ্রিকালচার, ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং সাইন্স, আইন বিষয়ে ডিগ্রী সমাপ্ত করে ব্যারিস্টার বা সলিসিটর হওয়ার জন্য প্রফেশনাল কোর্স, রিসার্চ ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স ও পিএইচডি কোর্স প্রভৃতি। তবে তাতেও সর্বোচ্চ আট বছর পর্যন্ত মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মোট কথা স্টুডেন্ট হিসেবে এসে বিলেতে বিভ্ন্নি কোর্স করে সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে ১০ বছর পার করা এখন অনেকটা অসম্ভব। তাই যেসব ছাত্র/ছাত্রীরা স্টুডেন্ট ভিসাকে উপলক্ষ করে পরবর্তীতে ১০ বছর থাকার মাধ্যমে ‘টেন ইয়ারস লং রেসিডেন্স’ রুলের আওতায় ইনডিফিনিট লীভ বা পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট এর জন্য আবেদনের চিন্তা নিয়ে বিলেতে আসতে চাইছেন তারা পুনর্বার বা ততোধিক বার চিন্তা করে টাকা খরচ করবেন। কেননা এটা আর বিদ্যমান আইনে সম্ভব হবে না। ভবিষ্যতে এই বিধান সহজ না হয়ে আরও কঠিন ও কঠোর হবে – এমনটা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়।
কাজ করার সুযোগ
ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটেনে পড়তে আসা ছাত্রদের পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ করার অনুমতি থাকতো। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে আসা ছাত্র/ছাত্রীরা কাজ করার মাধ্যমে একদিকে যেমন আকাশচুম্বি ফিস পরিশোধে সহায়ক হতো অপরদিকে ব্রিটেনের ব্যয়বহুল সিটিগুলোতে জীবনযাপনের খরচপাতিও অনায়াসে মিটাতে পারতো।
অতীতে ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী একজন ছাত্র তার টার্ম-টাইমে পার্ট টাইম সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা সপ্তাহে কাজ করার সুযোগ ছিল আর ভেকেশনে বা ছুটির পিরিয়ডে ফুল টাইম সপ্তাহে কাজ করার অধিকার ছিল। সে সুযোগ আর এখন নেই। বর্তমানে যেসব ছাত্ররা ভিসা কলেজ নামে খ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছেন তাদের কাজের কোনো অনুমতিই নেই। কিছু ছাত্রদের কাজের অনুমতি আছে কিন্তু তাও আবার মাত্র ১০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি প্রতি সপ্তাহে। যারা প্রতিষ্ঠিত মেইনস্ট্রিম বা মূলধারার ইউনিভার্সিটিগুলোতে অধ্যয়ন করছেন মূলত: তাদেরই অতীতের মতো কাজের অনুমতি আছে। বাংলাদেশ বা তার আশেপাশের দেশ থেকে আসা এদের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এসব অঞ্চলের ছাত্র/ছাত্রীরা তথাকথিত ভিসা কলেজ নামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়ন করতে দেখা যাচ্ছে। কাজ করার অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো কড়াকড়ি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আস্তে আস্তে এমন এক সময় হয়তো আসতে পারে যখন বিদেশী ছাত্র/ছাত্রীদের হয়তো কাজের কোনো অনুমতিই থাকবে না।
ঐতিহাসিকভাবে বিলেতে পড়তে আসা একটা গৌরবের বিষয় ছিল। সাধারণত বিদেশ থেকে মেধাবীরাই বিলেতে পড়তে আসে। গত এক দশকে এই পারসেপশনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৮/২০০৯ সালে হঠাৎ ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ছাত্র/ছাত্রীদের আসার ব্যাপারে অনেকটা ফ্লাড গেইট খুলে দেওয়া হলো। ফলে হাজার হাজার অছাত্র পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্টুডেন্ট ভিসার নামে টিয়ার-৪ – এর আওতায় ছাত্র হিসেবে ব্রিটেনে ঢুকে পড়ে। তারা ছাত্র ছিল না বা তাদের পড়াশুনা করার কোনো উদ্দেশ্যই ছিল না। তাই তারা বিলেতে এসে দারুণ বিপাকে পড়ে। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করেছে। আবার অনেকে পড়াশুনা ছেড়ে অবৈধভাবে ফুল টাইম কাজ করেছে। অনেক অসৎ এমপ্লয়াররা এই সুযোগে ছাত্র/ছাত্রীদেরকে এক্সপ্লয়েট ও এবিউস করেছে। অনেক ছাত্র/ছাত্রী বিলেতের প্রতিকূলতার ধকল ও চ্যালেঞ্জ সমালাতে না পেরে নিজ দেশে ফিরে গেছেন বা অবৈধভাবে বর্ডার ক্রস করে ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে বর্ডার খুলে দেয়ার পেছনে অনেকে আর্থিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন। ঐ সময় বিলেতে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। তাই স্টুডেন্টদের জন্য ফ্লাড গেইট খুলে বিভিন্ন রুলস ও পলিসির মাধ্যমে বিরাট অঙ্কের অর্থ নিয়ে আসতে বাধ্য করার মাধ্যমে ব্রিটেনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার বা সচল রাখার উদ্দেশ্য ছিল। এটি কতটুকু সত্য তা কেবল বিশ্লেষকরা বলতে পারবেন। তবে ঐ নিয়মের মাধ্যমে অনেক অসাধু ও মধ্যস্বত্বভোগীদেরকে রাতারাতি মিলিয়নার বানিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢালাওভাবে টিয়ার-৪ – এর স্পন্সর ও কলেজ খোলার অনুমতি ও লাইসেন্স দিয়ে কিছু লোককে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাবার সুযোগ দিয়ে দেয়া হয়েছিল। অনেকের ইমিগ্রেশন স্টেটাস খুবই লিমিটেড বা প্রশ্ন সাপেক্ষ -তাদেরকেও কলেজ খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছিল! দোকান বা বাস স্টপের উপর ১টা বা দুটি রুম এমন স্থানেও কলেজ খোলার লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। ফলে ছাত্র/ছাত্রীদেরকে আকাশচুম্বি ফিস চার্জ করার মাধ্যমে দ্রুতসময়ে সেসব কলেজগুলোর মালিক রাতারাতি মাল্টিমিলিয়নার হয়ে উঠেছিল। সেসব প্রতিষ্ঠানে না কোনো পড়াশুনার রিসোর্স বা পরিবেশ ছিল, না কোনো শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে সেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। যখনই হোম অফিস অডিট করলো, সে অস্বচ্ছতাগুলো একে একে ধরা পড়লো এবং আস্তে আস্তে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো হোম অফিস এক এক করে বন্ধ করে দিতে লাগলো। ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গেল। যা ক্ষতি হবার তাই হলো। যারা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হলো তারা ঠিকই বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে সঁটকে পড়লো। আসল ভুক্তভোগী হলো বিদেশ থেকে আসা অসংখ্য ছাত্র/ছাত্রীরা। তারা তাদের পরিশোধিত টিউশন ফিসগুলো ফেরত পেলো না।
প্রপার চেক, মনিটর ও অডিট করে গত কয়েক মাস আগে অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের টিয়ার-৪ লাইসেন্স হোম অফিস বাতিল করেছে। এর মধ্যে একাধিক মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আছে। আমাদের প্রশ্ন হলো – টিয়ার ৪ লাইসেন্স দেয়ার আগে হোম অফিস কেন ভালো করে যাচাই বাছাই, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলো না? এভাবে হঠাৎ লাইসেন্স বাতিল করার কারণে আসল ক্ষতি কাদের হলো? কারা সত্যিকার অর্থে ভুক্তভোগী হলো? এ প্রশ্নগুলো বার বার চলে আসে।
অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার তদের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বিলেত পাঠিয়েছিল উচ্চশিক্ষা লাভের আশায়। কিন্তু বিলেতে এসে কঠিন ও বৈপরিত পরিবেশে, একদিকে হোম অফিসের ঘনঘন নিয়ম-পদ্ধতি ও আইন পরিবর্তনের কারণে এবং অপরদিকে কলেজগুলো তাদের আকাশচুম্বি ফিস নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া বা উধাও হয়ে যাবার ফলে ঐসব ছাত্র/ছাত্রীরা পড়েছে মহাবিপাকে। অনেকে চোখে সর্ষে ফুল দেখছে। অনেক মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের জীবন অকালে ঝরে পড়লো বা অযথা নষ্ট হয়ে গেল। অথচ দেশে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায়ও তারা ভালো করতে পারতো। তাই সাবধান – বিলেতে আসার পূর্বে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে আসুন। নতুবা পরে পস্তাতে হবে।
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ :বৃটেন প্রবাসী বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক ও বিশ্লেষক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button