মুরসির উৎখাতের পর মিশর এখন নিপীড়ক রাষ্ট্র : অ্যামনেস্টি
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দুই বছরে মিশরের সেনা সরকার জনগণের উপর সব ধরণের নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছে এবং বিরোধীদের দমন করতে তাদের বহু নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করে রেখেছে।
লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে ‘প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের শাসন-শোষণের প্রতি যে কোনো ভবিষ্যৎ হুমকিকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দেওয়ার সব ধরণের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে।’
মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির উৎখাতের দ্বিতীয় বার্ষিকীকে সামনে রেখে অ্যামনেস্টি এক বিবৃতিতে বলেছে, মিশরে গণবিক্ষোভের জায়গায় এখন স্থান করে নিয়েছে গণগ্রেপ্তার।
বিবৃতিতে অ্যামেনেস্টির কর্মকর্তা হাসিবা হাজ সাহরায়ী বলেন, ‘জেলের ভিতরে আজ হাজার হাজার তরুণ কর্মীর হাহাকার প্রমাণ করে যে মিশর একটা নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’
মানবাধিকার সংগঠনটি জানিয়েছে, সরকারের ধরপাকড়ের ফলে বিরোধী গোষ্ঠীর ৪১,০০০ এরও বেশি নেতাকর্মী বর্তমানে জেলে বন্দি রয়েছে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, বিরোধীদেরকে গ্রেপ্তারের নতুন অভিযানে ২০১৫ সালে এই পর্যন্ত ১৬০ জনকে গেপ্তার করা হয়েছে এবং এর সাথে বাড়ছে জোরপূর্বক গুম।
হাসিবা হাজ সাহরায়ী বলেন, প্রেসিডেন্ট মুরসি ও তার সমর্থকদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে যে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছিল তা খুব দ্রুতই মিশরের সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গনকে পরিবেষ্টন করেছে।
আল-সিসি সরকারের সাথে পশ্চিমা ও ইউরোপীয় মিত্রদের সম্পর্কের সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি বলেছে, মিশরে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন থামানোর ব্যাপারে পশ্চিমা রাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ আলোচনা সভাগুলোতে কোনো এজেন্ডা নেই।
হাজ সাহরায়ী বলেন, আকর্ষণীয় বাণিজ্য চুক্তি, রাজনৈতিক প্রভাব ও গোয়েন্দাগিরির প্রতিযোগিতায় মিশরের এই অংশীদারদের স্থুল ভ-ামির চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছে। এরা মিশরের পুলিশ বাহিনীর জন্য অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি ও সরবরাহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যা মিশরের মানবাধিকার লঙ্ঘনে আরো সুযোগ করে দিচ্ছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, ‘মিশর সরকার যখন শান্তিপ্রিয় কর্মীদের কারান্তরীণ করে রেখেছে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে। রাষ্ট্রগুলো সব চুপ করে রয়েছে, চুপ করে রয়েছে বিশ্বনেতারা এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না’।
কায়রোয় এক বোমা হামলায় মিশরের অ্যাটর্নি জেনারেল তথা বিচার বিভাগের প্রধান কৌঁসুলি হিশাম বারাকাতের হত্যাকা-কে কাপুরুষোচিৎ ও ঠা-া মাথায় খুন বলে আখ্যায়িত করেছে অ্যামনেস্টি।
সংগঠনটি এই হত্যাকা-ের কারণে শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারী ও বিরোধী নেতা-কর্মীদের টার্গেট করে হয়রানি না করার জন্য মিশর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৩ সালের ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিশরের ক্ষমতায় আসে সেনাশাসক আল-সিসির সরকার। নতুন সরকার মুরসির সমর্থকদের উপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন ও ধরপাকড় অভিযান চালায় যাতে অন্তত ১৪০০ জন নিহত হয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, আল-সিসির সরকার সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের সরকারের চেয়েও নিপীড়নমূলক।