আসছে পর্যটন বর্ষ : সিলেটের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ নেই

Sylhet২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এর জন্যে দুইশ কোটি টাকার বাজেটও ধরা হয়েছে। পর্যটনের নানা খাতসহ চিকিৎসা পর্যটনকেও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে সরকার। এইখাতে প্রচুর আয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এই প্রেক্ষিতে সিলেটের হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোর উদ্যোগ ও প্রস্তুতির খবর জানতে গিয়ে পাওয়া গেছে, হতাশাজনক চিত্র। সিলেটের কোনো ক্লিনিকেরই পর্যটন বর্ষ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। ক্লিনিক মালিকদের অনেকে এ ব্যাপারে জানেনও না।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটে চিকিৎসার জন্যে তেমন কোনো বিদেশি না এলেও সিলেট থেকে ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায়ই রোগীরা চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। সরকার যেখানে বিদেশি রোগীকে দেশে চিকিৎসা দেওয়া ও এইখাতকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিকল্পনা করছে, এমন বাস্তবতায় সিলেট তথা বাংলাদেশি রোগীদের বাইরের দেশে চিকিৎসা করানোটা প্রশ্নের তৈরি করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বাইরের দেশে যে ধরণের উন্নত সেবা মিলে এমনটা বাংলাদেশে সচরাচর মিলে না। অনেক হাসপাতাল ক্লিনিকে উন্নত চিকিৎসাযন্ত্রপাতিরও অভাব রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে উন্নত যন্ত্রপাতি থাকলেও সিলেটসহ বিভাগীয় শহরে সেসবরে অপ্রতুলতার চিত্র লক্ষণীয়।
এই অভিযোগের সাথে ভিন্ন বাস্তবতাও রয়েছে। অনেক বিত্তশালীরা মানসিকভাবেই দেশে চিকিৎসা করানোর পক্ষে না। তারা সবসময়ই চিকিৎসার জন্যে বিদেশমুখী। রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ দেশের শীর্ষমহলেও এই প্রবণতা লক্ষণীয়। এমন অবস্থায় পর্যটন বর্ষ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টরা মত দিয়েছেন, আগে দেশের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসাখাতকে উন্নত ও সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ করার। এটা করতে না পারলে, চিকিৎসা পর্যটন নিয়ে সরকারের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না বলে মত তাদের।
একই সাথে পরিকল্পনাটা শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক না হয়ে, বিভাগীয় শহর বিশেষত দেশের পর্যটনসমৃদ্ধ অঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকরা।
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সচিবালয়ে ২০১৬ সালে পর্যটন বর্ষ পালন উপলক্ষে এক বৈঠকে কমিটির চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, দেশে হেলথ ট্যুরিজমের বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রসার হওয়া উচিত। পাশ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভুটান থেকে প্রচুর সংখক রোগী বাংলাদেশে চিকিৎসার জন্য আসে। তবে একমাত্র ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও হেলথ ট্যুরিজমের ব্যবস্থা নেই।
একই বৈঠকে পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশ এখন পর্যটনকে শিল্প হিসাবে নিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো এ খাত থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি।
সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ বড় বাজেটের কিছু ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু তাদেরও টার্গেট শুধু এই অঞ্চলের রোগী। দেশের অন্যান্য অঞ্চল বা বাইরের দেশের রোগী যাতে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, এমন কোনো পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও উন্নত সেবা এসব প্রতিষ্ঠানে নেই। ফলে, ২০১৬ সাল পর্যটন বর্ষ হিসেবে পালিত হলেও চিকিৎসাপর্যটনে সিলেটের ক্লিনিকগুলোর কোনো অবদান থাকছে না।
সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের ম্যানেজার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাইরের দেশ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে সিলেটে রোগী আসার পরিমাণ খুবই সামান্য। সিলেটের সাথে কাছাকাছি সীমান্ত হওয়ায় ভারতের শিলং থেকে মাঝেমধ্যে দুয়েকজন তাদের এখানে চিকিৎসা নেয়ার জন্যে আসেন। তবে তিনি বলেন, সিলেটসহ সারা দেশে অনেক মান সম্পন্ন ডাক্তার রয়েছেন। যাদের বিশ্বব্যাপী সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। এরপরও বিদেশি রোগীরা না আসার কারণটা কী, তা তিনি বলতে পারেননি। ইবনে সিনায় শিলং থেকে কচিৎ দুয়েকজন আসার দাবি করা হলেও নগরীর অন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে এমন কোন রোগী আসার তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিলেট নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ডাক্তার মৃণাল কান্তী দাস বলেন, বিদেশ থেকে সরাসরি সিলেটে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সংখ্যা আমার জানামত খুবই কম। কারণ চিকিৎসা সেবায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের তুলনায় পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের চিকিৎসা যথেষ্ট উন্নত মানের। এ কারণে তারা এই খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। পর্যটন বর্ষ হিসেবে ২০১৬কে নির্ধারণ করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও এইখাতে সাফল্য পেতে সরকারকে বড় ধরণের কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button