বাংলাদেশী পান আমদানির ওপর ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বহাল
ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের পান আমদানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এরফলে ইউকের পানের বাজারে আরো এক বছর আদিপত্য দেখানোর সুযোগ পেলো ভারত ও থাইল্যান্ড। ইউকের বাজারে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার পাউন্ডের পান বিক্রি হয়। এক সময় এ বাজার সম্পূর্ণ বাংলাদেশী পানের দখলে ছিলো। ইউকের বাংলাদেশী পান আমদানীকারকরা আশা করেছিলেন ৩০ জুন, মঙ্গলবার পান আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা কাটাতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ সরকার এবং ১লা জুলাই থেকে ইউকেতে বাংলাদেশী পান আসতে শুরু করবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি হলো।
ইইউর সদস্যদেশগুলোকে নিয়ে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদিত হয়। অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পান রপ্তানি করা যাবে না। দেড় বছর ধরে চলমান রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে ১৫ জুন ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) স্বাস্থ্য ও ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগের (ডিজি-স্যানটে) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর তপন কান্তি ঘোষকে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সোমবার তাঁকে ইইউ থেকে জানানো হয়, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক বছর বড়ানোর বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে।
বাংলাদেশে ইইউর কার্যালয়ের বাণিজ্য উপদেষ্টা জিল্লুল হাই রাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত কৃষিসচিব ও বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক আনোয়ার ফারুক জানান, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। তাদের সঙ্গে আমাদের ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। তারা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিল। স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার অস্থিত্ব পাওয়ায় ইইউ গত বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশ থেকে পান আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মঙ্গলবার এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগে গত বছরের ১৩ ফেব্রয়ারি প্রথম দফায় পান আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। মেয়াদ ছিল ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এর মেয়াদই পরে বাড়ানো হয়।
এর আগে গত ফেব্রয়ারিতে ইইউ এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর তপন কান্তি ঘোষ ৯ ফেব্রুয়ারি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছিলেন, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি মানসম্মত পান রপ্তানির নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাহলে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশের পান আমদানির নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ না বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে ইইউ।
সূত্র বলছে, ইইউর বড় উদ্বেগের জায়গা ছিল, পান থেকে আসলেই স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়েছে কি না। এ বিষয়ে ডিজি-স্যানটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ওই কনফারেন্সে এ বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। পরে ইইউ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করার ফর্মুলা পাঠাতে বলে। কিন্তু সেই ফর্মুলা এখনো ইইউতে পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে।
কনফারেন্সে বলা হয়, ইইউতে শুধু নিবন্ধিত রপ্তানিকারক ও চুক্তিভিত্তিক চাষির উৎপাদিত পানই রপ্তানি হবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় পান উৎপাদনকারী নয়টি জেলা চিহ্নিত করে। জেলাগুলো হলো: কুষ্টিয়া, মুন্সিগঞ্জ, বাগেরহাট, বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মৌলভীবাজার, রাজশাহী ও সিলেট। এসব জেলার ১০০ জন চাষিকে নির্বাচিত করে তাঁদের ব্যাকটেরিয়ামুক্ত পান চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তবে ইইউ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব উদ্যোগ যে যথেষ্ট নয়, তা-ই ইইউর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে প্রমাণিত হয়েছে।
সবজি রপ্তানিকারক সমিতি বলছে, দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পানের অর্ধেকই যায় মধ্যপ্রাচ্যে, ৪৫ শতাংশ যায় ইউরোপে। পান রপ্তানি হয় ফুল ও পাতা বিভাগের আওতায়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, এর আওতায় রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশই পান। ইপিবি বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ফুল ও পাতা রপ্তানি হয় ৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪ কোটি ১৪ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫ কোটি ৪ লাখ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।