ধনী রাষ্ট্রের কাতারে বাংলাদেশ !
বিশ্ব অর্থনীতির পর্যালোচনায় এবং র্যাংকিংয়ের ক্রমানুসারে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৩১তম। ইংল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি এ তথ্য জানিয়েছে। পিডব্লিউসি বলেছে, আগামী ২০৫০ সালে অর্থাৎ ৩৫ বছর পর বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৩তম। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে চলে আসবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান যে বিকাশ ঘটছে, তাতে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশটি আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হবে। এমনকি ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক র্যাংকিংয়ে আগামী ১৫ বছরে অর্থাৎ ২০৩০ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ধাপে উন্নীত হবে। অর্থাৎ ৩১তম স্থান থেকে ২৯তম স্থানে চলে যাবে। আর এ ১৫ বছরে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হবে শতকরা ৫ ভাগ।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে মোট জিডিপি এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা (পিপিপি) হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১০০ কোটি ডলার এবং ২০৫০ সালে পিপিপি হবে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বর্তমান সময়ের থেকে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ৫৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হবে এ কথা শুনলেই যে কোনো মানুষের বুক আনন্দে ভরে উঠবে। যে দেশের শতকরা ২২ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, সেই দেশ কিনা আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হবে, তা ভাবতেও অবাক লাগে! কিন্তু এটাই বাস্তব সত্য, কোনো অলৌকিক কাহিনী বলা হচ্ছে না।
বিশাল জনগোষ্ঠীকে যদি সম্পদে পরিণত করা যায়, জন মেনার্ড কেইন্সের কর্মসংস্থান তত্ত্ব বাস্তব প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব হয়, তাহলে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হতে সত্যি ৩৫ বছরের বেশি লাগবে না।
মনে রাখতে হবে, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা যদি স্থিতিশীল না থাকে, তাহলে সবকিছু ব্যর্থ হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে, তবে সেটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তার আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ও তাদের জোটের মধ্যে যে বিবদমান বিরোধ এবং সংঘর্ষ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, তাতে ভয় এবং শঙ্কার বিষয় জড়িয়ে থাকে বৈকি!
পিডব্লিউসির সূত্রানুসারে, ২০৫০ সালের বিশ্ব অর্থনীতি কেমন হবে, এ পর্যালোচনায় দেখা যায়, উদীয়মান অর্থনীতির যে আটটি দেশ ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটবে, অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে।
বাকি যে সাতটি দেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে, সেগুলো হচ্ছে ফিলিপাইন, কলম্বিয়া, মিসর, ইরান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। আগামী সাড়ে তিনদশকে দ্রুত গতিতে যে দশটি দেশের উন্নতি হবে, তার সবই উন্নয়নশীল দেশ। এর মধ্যে ৭টিই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। বাকি তিনটি দেশ হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের।
পিডব্লিউসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে ৩২টি দেশ বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে, বিশ্বের মোট জিডিপির শতকরা ৮৪ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করবে এ দেশগুলো।
পিডব্লিউসির অর্থনীতিবিদগণ আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের ধারণা এবং বিশ্বাস পৃথিবীজুড়ে শতকরা ৩ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে, কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বে যেহেতু এসব এলাকায় প্রবল জনসংখ্যার কারণে কর্মসংস্থান বেশি হবে, তাই এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি শতকরা ৬ ভাগের বেশি হতে পারে। এমনকি ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বের জিডিপি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে তিন গুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছে উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ এবং এশিয়ার একমাত্র দেশ জাপান। এসব দেশ আরো ৩৫ বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে। তারপরই তাদের শক্তি হ্রাস পাবে। এর আভাস ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতির পরাশক্তি রাষ্ট্রসমূহ। চীনের অর্থনীতি প্রবল গতিতে ধাবমান হচ্ছে এবং ২০২০ সালের মধ্যে দেশটির প্রবৃদ্ধি ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে।
২০৩০ সালের মধ্যে চীন হবে সর্ববৃহৎ অর্থনীতি এবং বিশাল বাজারভুক্ত দেশ। ফলে ভোক্তার সংখ্যাও হবে সবার থেকে বেশি। আর এ ক্ষেত্রে ভোগ্যপণ্য সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। ২০৫০ সালে ভারতের বাজার পণ্যের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ভারতের প্রবৃদ্ধি দ্বিতীয় স্থানে চলে আসতে পারে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ সেরা দশে অবস্থানকারী ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সকে টপকে ইন্দোনেশিয়া, ম্যাক্সিকো এবং নাইজেরিয়া সেসব স্থান দখল করে নিতে পারে। বাস্তবিক অর্থে, ২০১৪ সালে চীনের মোট জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যায়। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি শতকরা ৪ দশমিক ৫০ থেকে শতকরা ৫ দশমিক ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমানুসারে ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে নবম স্থানে রয়েছে, পিডব্লিউসির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এ দেশটি পঞ্চম স্থানে চলে আসবে, এবং ২০৫০ সালে চতুর্থ হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ফলেই দেশটির উন্নতি ঘটবে।
২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে থাইল্যান্ড ২১তম স্থান অর্জন করবে। খুব বেশি উন্নতি তাদের হবে না। মালয়েশিয়ার অবস্থান ২৭তম, ২০৩০ সালের মধ্যে তিন ধাপ উন্নত হয়ে ২৪তম স্থানে আসবে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত একই অবস্থানে থাকবে তারা। দেশটিতে বছরে প্রবৃদ্ধি হবে শতকরা ৪ ভাগ। ২০৫০ সাল পর্যন্ত এ ধারা বজায় থাকবে। ভিয়েতনাম ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮তম স্থান অর্জন করবে। বর্তমানে রয়েছে ৩২তম স্থানে। ২০৫০ সালে ২২তম স্থানে উন্নীত হবে।
সূত্র : পিডব্লিউসি ইকোনমিক অ্যান্ড কনসালটিং ফার্ম।