প্রথমবার ইফতারে শরিক মার্কেল, আগামী বছর আয়োজক নিজেই
ইসলামকে জার্মানির অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল
প্রথমবারের মতো মুসলিমদের ইফতারে শরিক হয়ে ইসলামকে জার্মানির অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। এসময় জার্মানির সরকারি মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট ঘোষণা করেন, মার্কেল আগামী বছর প্রথমবারের মতো একটি ইফতার পার্টি আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। এ ইফতার চ্যান্সেলরের সরকারি দফতরে অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি হয়ে যাবে বার্ষিক অনুষ্ঠানমালার একটি অংশ।
গত মঙ্গলবার রাজধানী বার্লিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি গেস্ট হাউস ‘ভিলা বোর্সিগ’-এ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জার্মানি এবং ইউরোপ জুড়ে আন্তঃধর্মীয় আস্থা ও সম্মান গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি রমজানের রোজাকে মুসলিমদের প্রকৃত আদর্শের প্রতিফলন ও পরীক্ষা বলে আখ্যায়িত করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ধর্মের নামে সংঘটিত সহিংস কার্যক্রমের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা স্মরণ করে মার্কেল বলেন, “এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় ইসলামকে যা দুঃখজনক।”
মার্কেল বলেন, জার্মান মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যকে তিনি অনুমোদন করেন না এবং ইসলামকে জার্মানির অংশ বিবেচনা করেন। যারা মুসলমানদের সন্দেহের চোখে দেখে তিনি তাদের বিরোধিতা করেন। গত জানুয়ারিতে দেশটিতে কথিত প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান্স অ্যাগেইন্স দ্য ইসলামাইজেশন অব দ্য ওয়েস্ট তথা পেগিডা ইসলাম ও অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুললে মার্কেল তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিবৃতি দেন। এসময় তিনি প্রথম বলেন, ইসলাম হচ্ছে জার্মানির অঙ্গ। তিনি মধ্য জানুয়ারিতে তার বিবৃতির উল্লেখ করে পেগিডা, তার প্রতিনিধি ও সমর্থকদের জার্মানবাসীর অন্তরে ঘৃণা প্রবেশ করানোর দায়ে অভিযুক্ত করেন।
তিনি বলেন, “ঘৃণা, বর্ণবাদ এবং চরমপন্থার কোন স্থান এদেশে নেই। দেশ টিকে আছে গণতন্ত্র, সহনশীলতা ও বহুমতের ওপর।
মঙ্গলবারের ইফতার বক্তৃতায় মার্কেল মুসলিমদের মসজিদে হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ, এটা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী। তিনি আরো যোগ করেন, এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া একান্ত কর্তব্য। মার্কেলের সাথে ইফতারে আরো যোগ দেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ ইন্টিগ্রেশনমন্ত্রী আয়দান ওজোগ, জার্মানিতে মুসলমানদের সমন্বয় পরিষদের মুখপাত্র নুরহান সয়কান, জার্মানিতে ইহুদিদের সেন্ট্রাল কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্কুস্টার, জার্মান ইভানজেলিক্যাল চার্চের প্রেসিডেন্ট হাইনরিশ বেডফোর্ড এবং জার্মান ক্যাথলিক কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট অ্যালোয়িজ গ্লুক। জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে মার্কেল এই প্রথমবার কোন ইফতারে অংশগ্রহণ করলেন। এসময় সরকারি মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট আরো ঘোষণা করেন যে, মার্কেল আগামী বছর প্রথমবারের মতো একটি ইফতার পার্টি আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, ইফতার চ্যান্সেলরের সরকারি দফতরে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং জার্মানিতে মুসলিম সুশীল সমাজের সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে আমন্ত্রিত হবেন। তার মতে, জার্মানিতে ইফতার একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানের অংশ হয়ে যাবে।