সরকার নয়, ড. ইউনুসই গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি ড. ইউনূসকে অত্যন্ত কৌশলী রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে বলেছেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করতে চায় না। বরং ড. ইউনূস নিজেই গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সিলেট সার্কিট হাউসে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) রাজনীতিবিদদের খোলসটা পরতে চান না। এখন তিনি যা করছেন তা একান্তই রাজনীতিবিদদের কাজ। যা সম্পূর্ণভাবে নীতিবর্জিত এবং গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার একটি উদ্যোগ।
অধ্যাপক ড. ইউনুস গতকাল বুধবার ভাসানী অনুসারী পরিষদের এক সভায় বলেছেন, “যারা গ্রামীণ ব্যাংক ভাংতে চায়, দেশের মানুষ ও নাগরিকদের প্রতি তাদের মমত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তাদের হাতে কি দেশ তুলে দেওয়া যায়?”
এ বক্তব্যের জবাবে সিলেটে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অধ্যাপক ড. ইউনুস নোবেল বিজয় করে নিজের এবং জাতির সম্মান বাড়িয়েছেন। তিনি সারা বিশ্বে একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তবুও আমার মনে হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার ব্রতটি অধ্যাপক ইউনুস নিজেই আজ দু’বছর ধরে বহাল রেখেছেন।
তার অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত জুন মাস থেকে তিনি অনবরত বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। ২৬ জুন বিষয়টি মহান জাতীয় সংসদেও আলোচিত হয়। বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার মওদূদ আহমদও এ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে আমি সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে স্পষ্ট করে বলি যে, সরকারের গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ টুকরো করার যে অভিযোগ অধ্যাপক ইউনুস করেছেন তা মোটেও সত্য নয়।
সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে গর্ববোধ করে এবং এর ক্ষতি সরকার কখনো করতে পারে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একটি কমিশন কি সুপারিশ করেছে সেটি দিয়ে সরকারের ধারণা বিচার করা ঠিক নয়। আমরা বরাবর নিশ্চয়তা দিয়েছি যে গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক কাজ ও পদ্ধতি যেমন আছে তেমনই চলবে ও চলছে।
অর্থমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি অধ্যাপক ইউনূসের উদ্যোগে সরকারই সমূদয় অর্থ দিয়ে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করে ইউনূস সাহেবকে পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত করে। গ্রামীণ ব্যাংক স্টেটুটারী প্রতিষ্ঠান এবং এর প্রথম পরিচালনা পর্ষদ সরকারই গঠন করে।
এই ব্যাংকে গরিব ঋণ গ্রহিতাদের ৪০ শতাংশ শেয়ার সামর্থ্যমত গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই শেয়ার ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হয় এবং আজও সেই অবস্থা রয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি অত্যান্ত বিকেন্দ্রায়িত। ২হাজারের বেশি শাখায় গরিবকে ঋণদানের সিদ্ধান্ত মোটামুটি তাদেরই সম্মিলিত গ্র“পে বসে শাখা প্রধানের সহযোগিতায় ঠিক হয়ে যায়। এই ব্যবস্থায় বিগত দু’বছরে কোন পরিবর্তন করা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও করা হবে না। কারণ ব্যবস্থাটি ভাল চলছে এবং এতে সুফল পাওয়া গেছে। সরকার বর্তমানে চেয়ারম্যানসহ ৩জন সদস্য নিয়োগ করে সেই ব্যবস্থাই বহাল রেখেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংবাদ মাধ্যমে কথা উঠার পর সরকার একটি রিভিউ কমিটি নিয়োগ করে। তখন দেখা যায় যে, অধ্যাপক ইউনূস সাহেবের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ১৯৯৯ সাল থেকে অবস্থানটি আইনসম্মত নয়।
মন্ত্রী বলেন, আমি তাকে (ড. ইউনুস) প্রস্তাব দেই যে, তিনি পদত্যাগ করলে তাকে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার একটি চিরস্থায়ী ব্যাবস্থা করে দেওয়া হবে। কিন্তু তিনি বিকল্প প্রস্তাব দেন যে, তাকেই চেয়ারম্যান বানাতে হবে। সেটা না হওয়ায় তিনি আদালতে গেলেন ও আদালতের রায় অনুযায়ী পদত্যাগ করলেন।
অর্থমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, এরপর থেকেই ড. ইউনুসের তরফ থেকে ব্যাংকটি অকার্যকর করার প্রচেষ্টা চলছে। প্রথমেই বলা হল, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক দখল করে মহিলাদের অধিকার কেড়ে নিতে চান। আরো প্রচারণা হলো- গ্রামীণ ব্যাংকে যে আমানত আছে সেটি সরকার কেড়ে নেবে। এসব প্রচারণাই গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র বলেই মনে করে অর্থমন্ত্রী।
অধ্যাপক ইউনূস সাহেবের ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক প্রায় বছর খানেক পর অবসর গ্রহণ করলে নতুন পরিচালক নিয়োগের জন্য যে পদ্ধতি প্রচলিত ছিলো সেটিকে তিনি নষ্ট করে দিলেন।
তার পরেও যখন তাতে কিছু হল না তখন আমার ধারণা তারই উদ্যোগে হাইকোর্টে রিট করে নির্বাহী পরিচালকের নিযুক্তি বন্ধ করে দেওয়া হল। আর অধুনা অধ্যাপক ইউনূস সাহেব সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছেন যে বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করতে চাচ্ছে।
তিনি সবার কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারাই বিবেচনা করুন গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র কে করছেন?
লিখিত বক্তব্য শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ বিষয়ে একটি সমাধান হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে কোন নির্বাচনই নিরপেক্ষ হয়নি। আওয়ামীলীগ একমাত্র দল যারা নির্বাচনে কখনো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে না। এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে সবক’টি নির্বাচনই সুষ্ট এবং নিরপেক্ষ হয়েছে।
জিয়াউর রহমান হা/না ভোট দিয়ে এ দেশে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার শুরু করেন উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগের জন্যই এ থেকে দেশের জনগণ মুক্তি পেয়ে ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে। আগামী নির্বাচনে কোন ধরণের সংঘাত হবে না বলে মনে করেন না আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেটে কর্মরত সকল ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।