কার্যকর হচ্ছে কঠোর ইমিগ্রেশন নীতি

UKBAব্রিটেনে ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণে রক্ষণশীল সরকারের আনা কঠোর দুটি নিয়ম খুব শিগ্রই কার্যকর হতে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন চেকের নিয়মটি পুরো মাত্রায় কার্যকর হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। অন্যদিকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত জুড়ে দেয়া নিয়মটি কার্যকর হচ্ছে আগামী বছরের এপ্রিলে। ওই নিয়মে বলা হয়েছে, যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ব্রিটেনে আছেন তারা বছরে ৩৫ হাজার পাউন্ডের কম আয় করলে পাঁচ বছরের বেশি এদেশে থাকতে পারবেন না। নতুন এই দুই নিয়ম নিয়েই তুমুল বিতর্ক রয়েছে।
ব্রিটেনে অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের বসবাস কঠিন করে তুলতে বাড়িভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন বিধান চালু করেছে সরকার। ক্যামেরনের নেতৃত্বধীন কোয়ালিশন সরকার ২০১৪ সালে ‘রাইট টু রেন্ট’ শর্ষীক এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষামূলকভাবে বার্মিংহাম, স্যান্ডওয়েল, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস, উলভারহ্যাম্পটন, ওয়ালসল এবং ডাডলি বারায় এই বিধান চালু করা হয়। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের একযোগে এই নিয়ম কার্যকর করা হবে। অবৈধ কোনো ইমিগ্রেন্টের কাছে বাসা ভাড়া দিলে মালিকপক্ষকে ৩ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।  শুরু থেকে এই নিয়ম নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। এই বিধানের সমালোচকরা বলছেন, সরকার অবৈধ ইমিগ্রন্টদের বসবাস কঠিন করে তুলতে এই আইন চালু করলেও বাস্তবে তা উদ্দেশ্য সাধনে তেমন কাছে আসবে। উল্টো বৈধ ইমিগ্রেন্টরা এই আইনের ফলে হয়রানির শিকার হবেন। তারা বলছেন, যারা অবৈধভাবে বসবাস করেন তারা মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে বাসাভাড়া নেন না। পরিচিতজন বা আত্মীয়স্বজনদের সাথে তারা বসবাস করেন।  কিন্তু যারা বৈধভাবে ব্রিটেনে বসবাস করছেন তারা বাসাভাড়া নিয়ে হয়রানির শিকার হবেন। কেননা, প্রতিবারই বাসাভাড়া নিতে গেলে তাদের ইমিগ্রেশনের কাগজ পত্র দেখাতে হবে। আবার যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ দিকে, ঝামেলা এড়ানোর স্বার্থে তাদের কাছে বাসাভাড়া দিতে চাইবেন না মালিক পক্ষ। অনেকে ঝামেলা এড়াতে শুধু শেতাঙ্গদের কাছে বাসা ভাড়া দেবেন। এ অবস্থায় ইমিগ্রেন্ট সহ অশ্বেতাঙ্গ নাগরিকরা বাসস্থান  যোগাড় করা নিয়ে চরম বিপাকে পড়বেন। মালিকপক্ষ যাতে ইমিগ্রেশন বিষয়ক কাগজ পত্র যাচাই করে নিতে পারে সেজন্য বিশেষ একটি টেলিফোন নম্বর রাখা হয়েছে হোম অফিসে।
এদিকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ব্রিটেনে আসা কর্মীদের স্থায়ী বসবাস কঠিন করে তুলতে নতুন নিয়ম কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই আইনে বলা হয়েছে, যেসব বিদেশি কর্মী ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ব্রিটেনে বসবাস করছে তারা একনাগাড়ে পাঁচ বছরের বেশি ব্রিটেনে থাকতে পারবে না। তবে যাদের বেতন বছরে কমপক্ষে ৩৫ হাজার পাউন্ড তাদের থাকার সুযোগ দেয়া হবে। আবার পাঁচ বছর পর ব্রিটেন ত্যাগ করে এক বছরের বিরতি দিয়ে পুনরায় ব্রিটেনে আসার সুযোগ থাকবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এক বছরের বিচ্যুতির কারণে ওই ব্যক্তি ব্রিটেনে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নিতে পারবেন না। মূলত স্বল্প আয়ের কর্মীরা যাতে এক টানা ১০ বছর পূর্ণ করে ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার আবেদন করতে না পারে, সেজন্য এই নিয়ম চালু করা হয়েছে।
নতুন নিয়ম কার্যকর হলে হাজার হাজার কর্মীকে ব্রিটেন ছাড়তে হবে। গত মেয়াদে ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকার ২০১২ সালে ওয়ার্ক পারিমট ভিসায় এই কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়।
সম্প্রতি রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং সরকারের এই নীতির কড়া সমালোচনা করেছে। সংগঠনটি বলছে, ব্রিটেনের স্বাস্থসেবা বিদেশি নার্সদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু নার্সদের পক্ষে কোনোভাবেই বছরে ৩৫ হাজার পাউন্ড আয় করা সম্ভব নয়। আগামী বছরের এপ্রিলে নতুন নিয়ম কার্যকর হলে অন্তত ৪ হাজার নার্সকে ব্রিটেন ছাড়তে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু নার্স নয় আরো অনেক খাত রয়েছে যেখানকার কর্মীরা বছরে ৩৫ হাজারের চেয়ে অনেক কম আয় করেন। রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং বলছে, সকল খাতের জন্য এই বেতন হার প্রযোজ্য নয়।  পেশার ধরন বিবেচনায় বেতন কাঠামোর এই নিয়মে অব্যহতি রাখার দাবি জানিয়েছে তারা। পাঁচ বছর পর পর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষকর্মীদের হারালে ব্রিটেনের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির সম্মুখিন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button