ধর্ম পরিবর্তন করতে পারি, বাঙালিত্ব নয় : নিউইয়র্কে আব্দুল গাফ্‌ফার

AGaffarChyকলামিস্ট আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেছেন, ফেইথ (ধর্ম) পরিবর্তনশীল কিন্তু বাঙালিত্ব চিরস্থায়ী। আমি আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ধর্ম পরিবর্তন করে হয়ে যেতে পারি গহওর রঞ্জন চক্রবর্তী কিন্ত বাঙালিত্ব পরিবর্তন হতে পারে না। এটি আমাদের পরিচয়।
শুক্রবার বিকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে একমাত্র আলেচক ছিলেন আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী।
ইসলামের নানা ইতিহাস বর্ণনা করে তিনি বলেন, আল্লাহর ৯৯ গুণবাচক নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো। এগুলো আমার বাংলা ভাষায় এডপ্ট (গ্রহণ) করেছি। যেমন আবু হুয়রায়রা নামে অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। এভাবে আমরা অনেক নাম রাখি। কাফেরদের মধ্যে যারা মুসলমান হয়েছিলো তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি।
আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেন, সাতশ বছর ধরে আমরা ‘নামাজ’, ‘খোদা হাফেজ’  শব্দ বলছি। এখন ‘সালাত’, ‘আল্লাহ হাফেজ’ শব্দ কোথা থেকে এলো? এগুলো ওহাবিদের সৃষ্টি।
সৌদি আরবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর নাম সৌদি আরব হবে কেন? তারা রসূলের (সা:) অনুসারি হলে এর নাম হবে মোহাম্মদীয়া। কাবা শরীফের দরজাগুলোর নাম বাদশাহদের নামে দেওয়া হয়েছে। কোন সাহাবিদের নামে নয়।
বোরখা এবং হেজাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল গাফ্‌ফার বলেন, এটা হচ্ছে ওয়াহাবিদের সর্বশেষ মতবাদ।
তিনি বলেন, যত দিন আমাদের ভাষা থাকবে, রবীন্দ্রনাথ থাকবে, বঙ্গবন্ধু থাকবে ততদিন বাংলাদেশকে তালেবানরা ধ্বংস করতে পারবে না। আমি বেঁচে থাকবো কি না জানি না, তবে আজকে একটা কথা বলতে পারি আগামী ১৫/২০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে দুটো রাষ্ট্রে বিলুপ্তি হবে। এ দুটো রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান ও ইসরাইল। একটি দেশ দক্ষিণ এশিয়াকে অশান্ত করে রেখেছে, আরেকটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্তির মধ্যে রেখেছে। আমেরিকার পতনের সাথে সাথেই এদের পতন হবে।
শেখ হাসিনার প্রশংসা করে আব্দুল গাফ্‌ফার বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে তারপরেও বাংলাদেশ তার মত ইস্পাতরূপী নেত্রী পেয়েছে। যিনি কিনা মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তাকে ৯ বার হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিলো। আমি হলে ভয়ে চলেই যেতাম কিন্তু তিনি সাহসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন যে বিরোধী দল রয়েছে এটাকে গণতান্ত্রিক বিরোধী দল বলা যায় না, এটা হচ্ছে প্রয়োজনের বিরোধী দল।
আব্দুল গাফ্‌ফার বলেন, পাকিস্তান থেকে বিভক্ত হয়ে আমাদের ভালই হয়েছে। তা নাহলে এতদিন আমাদের দেশে ড্রোন হামলা হতো। মাদ্রাসা এবং মসজিদগুলো তালেবানরা দখল করে নিতো। আমাদের সৌভাগ্য হচ্ছে আমরা আগে বাঙালি তারপরে মুসলমান। যে কারণেই বাংলাদেশ ধ্বংস হবে না, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আমি এবার অনেক দিন পরে আমেরিকায় এসেছি। আমি যতবার এসেছি ততবার আমার সাথে আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট আমিনুল হক বাদশা ছিলেন। তার সাথেই আমি এসেছি। তাকে নিয়ে মূলত: আমি বাইরে যেতাম। তার কাঁদে হাত রেখে আমি হজ্বও করেছি। সেই বাদশাহ আমাদের মাঝে নেই।
আমেরিকার সমালোচনা করে আব্দুল গাফ্‌ফার বলেন, আমেরিকানরা তালেবান সৃষ্টি করে এখন বিপদে পড়েছে। আর বাংলাদেশের জামায়াত দ্বীনে মোহাম্মদী নয়, তারা হচ্ছে দ্বীনে মওদুদী। হিজাব এবং বোরখা হচ্ছে মওদুদীর শেষ মতবাদ। আর জামায়াত এক সময় কোরবানীর গোস্তের চালে (চামড়ার পয়সায়) চলতো। আমেরিকার পতনের সাথে সাথে এদেরও পতন হবে। শুধু শুধু সাদ্দাম এবং গাদ্দাফিকে হত্যা করা হলো ইসরাইলকে নিরাপদ করার জন্য।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আব্দুল গাফ্‌ফার বলেন, আমি জিয়াউর রহমানকে ঘৃণা করি। কারণ তাকে আমি দেখেছি যুদ্ধের সময়। সাবুরা সেক্টরে আমি তার সাথে ছিলাম। সে সারাক্ষণ মাথার চুল চিরুনী দিয়ে আচরাতো আর খবর নিতো কোন রাষ্ট্রদূত আসছে কি না? এখন কী না তাকেই বলা হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ সে একটি মাত্র বাণী পাঠ করেছিলো।
বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বেগম জিয়া আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেন কীভাবে? তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধর্মের বাবা ডেকেছিলেন।
সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি ও মৌলবাদ। মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী একটি মন্তব্য করে কি না বিপদে পড়েছেন। বাংলাদেশের বিচারালয় থেকে শুরু করে সর্বত্রই দুর্নীতিবাজরা গডফাদারে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজদের ফাঁসি দিতে হবে।
আব্দুল গাফ্‌ফার বলেন, বর্তমান সরকার ও আগের সরকারগুলোর মধ্যে প্রার্থক্য হচ্ছে বর্তমান সরকার হচ্ছে মানুষ, আর আগের সরকারগুলো ছিলো রোবট।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button