কেন আমি ৩২ বিলিয়ন ডলার দান করলাম ?
সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও দুর্যোগকালীন জরুরি ত্রাণসেবাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের জন্য তিন হাজার দুইশ’ কোটি ডলার দান করার ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি আরবের ধনকুবের প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালাল। বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
৬০ বছর বয়সী প্রিন্স তালাল বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। ফোবর্স সাময়িকীর তালিকানুযায়ী তিনি বিশ্বের ৩৪তম শীর্ষ ধনী। বিল ও মেলিন্ডা গেটসের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তালাল।
দান করা এসব অর্থ ‘সাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার উন্নয়নে’, ‘নারীর ক্ষমতায়নে’ এবং ‘জরুরি দুর্যোগ ত্রাণ’সহ অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তালালের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন বিল গেটস। তালালের এই পদক্ষেপে বিশ্বব্যাপী দাতব্য কাজ পরিচালনাকারী সবাই উদ্বুদ্ধ হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রিন্সের নিজস্ব দাতব্য প্রতিষ্ঠান আলওয়ালিদ দাতব্য সংস্থাকে এই সমুদয় অর্থ দেওয়া হবে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটিতে আরো সাড়ে তিনশ’ কোটি ডলার দান করেছিলেন তিনি।
কিন্তু যুবরাজ আল ওয়ালিদ এতো বিশাল পরিমাণ অর্থ দান করে দিচ্ছেন কেন? তিনি কি এখনো ‘ক্যাশ ইজ কিং’ এই ধারণায় বিশ্বাসী? নাহ! আগে হয়তো তিনি এমনটাই ভাবতেন। কিন্তু এখন আর তিনি এমনটা একদমই ভাবেন না। সৌদি আরবের এই ধনকুবের টুইটার থেকে থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত সিটিগ্রুপেও বিনিয়োগ করেছেন। সেই ধনকুবের প্রিন্স আল ওয়ালিদই ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার বা ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দান করে দিচ্ছেন।
তার কি সব ঠিকঠাক আছে? ধারণা করা হয় যুবরাজ আল-ওয়ালিদ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে ২০তম অবস্থানে আছেন। সেই আল ওয়ালিদই বললেন, ‘আরো উন্নতর সহনশীল পৃথিবী গড়া, সমতা ও সকলের জন্য সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই তিনি এই টাকা দান করছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বোঝাপড়ার প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জীবন-মানের উন্নয়ন, নারীদের ক্ষমতায়ন, তরুণদের সক্ষমতা বাড়ানো, দুর্যোগকালীন ত্রাণ সরবরাহ এবং আরো সহনশীল ও পরস্পরকে সহজে গ্রহণে সক্ষম পৃথিবী নির্মাণে ব্যয় হবে এই অর্থ।
প্রথমত সৌদি আরবেই এই অর্থ ব্যয় করা হবে। যুবরাজের কথায়, ‘যেহেতু আমার সম্পদের বেশিরভাগই আমি নিজ দেশ থেকে অর্জন করেছি সেহেতু দানের এই অর্থ ব্যয়ে সৌদি আরবকেই আমি সর্বাগ্রে বিবেচনায় রেখেছি। এরপর বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আমাদের এই মানবপ্রেমি প্রকল্পের বিস্তার ঘটানো হবে।
বিশ্বের অপর দুই শীর্ষ ধনী মার্কিন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটস এর পদাঙ্ক অনুসরন করেই আল ওয়ালিদ এই বিশাল দানের পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই দুই ধনকুবের তাদের বেশিরভাগ সম্পদই দান করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ শীর্ষ ধনী তাদের সম্পদের ৫০ শতাংশই দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার ঘোষণা দিয়েছেন।
কিন্তু এতো বিশাল পরিমাণ সম্পদ দান করে দেওয়ার পর যুবরাজের জীবন-যাপনে কি কোনো পরিবর্তন আসবে? জানা গেছে, তিনি এতোদিন পর্যন্ত ব্যাপক বিলাসবহুল জীবন-যাপনেই অভ্যস্ত ছিলেন। তার একটি ব্যক্তিগত জেট বিমানবহর আছে। এছাড়া রয়েছে ব্যক্তিগত বিলাসবহুল প্রাসাদ ও ২০০ ব্যক্তিগত গাড়ি। কিন্তু এতো বিশাল পরিমাণ সম্পদ দান করে দেওয়া সত্ত্বেও তিনি জীবন যাপনের খরচ কমানোর কোনো পরিকল্পনা করেছেন বলে জানা যায়নি।
এই দান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আগামী কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। স্বয়ং প্রিন্সের নেতৃত্বে গঠিত একটি ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে এই দান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।