নিজের চাওয়ার প্রতি দৃঢ় থাকলেই লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব : আইরিন খান
মো: আবদুস সালিম: আইরিন খান। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ল অর্গানাইজেশনের ডাইরেক্টর জেনারেল (মহাপরিচালক)। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব। জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সিলেটে। তিনি বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন। কাজ করছেন সেভ দ্য চিলড্রেনসহ আরো অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সাথে। এতে বোঝা যায় শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তার কাজ বা চাকরির পরিধি ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। নিজ পরিবারের সব দিক সামাল দিয়ে সাফল্যের সাথে এত কিছু করা কি সবার পক্ষে সম্ভব?
স্বামী জোসেফ আওয়ার ও মেয়ে সুরাইয়া আওয়ারকে নিয়ে তিনজনের সংসার আইরিনের। থাকেন ইতালির রাজধানী রোমে। প্রায় ৫৯ বছর বয়সেও তার শারীরিক ও মানসিক শক্তিতে যেন এতটুকুও ঘাটতি বা সমস্যা নেই। তার বাড়ি থেকে ২৫-৩০ মিনিট দূরত্বের অফিস হলেও হেঁটেই যান তিনি। হাঁটেনও দ্রুত। তিনি বলেন, এতে আমার ব্যায়াম হয়ে যায়। তাতে কাজ করার শক্তি বা মনোবল বাড়ে। রোমে থাকেন কাজের সূত্রে।
আইরিন ও লেভেল পাস করেন সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স থেকে, যা এখন গ্রিন হেরাল্ড স্কুল নামে পরিচিত। আর এ লেভেল করেন আয়ারল্যান্ডে সেন্ট লুই কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে। এলএলবি পাস করেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে ১৯৭৮ সালে। তারপর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। লক্ষ্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএম অর্জন। প্রথম দিকে আইনে পড়াশোনা করতে খুব একটা মনোযোগী হতে পারছিলেন না। তবে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার পড়ানো হয় একটি সেমিস্টারে। সেটি তার ভালো লাগে। তা থেকে এ নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ে। পরে একটি ফেলোশিপ পান সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকারের ওপর। সেখান থেকে যোগ দেন জাতিসঙ্ঘের হাইকমিশনার ফর রিফিউজিসে লিগ্যাল অফিসার হিসেবে ১৯৮০ সালে। প্রায় দুই দশক পর ওই চাকরি বদলে ফেলেন। হন ডেপুটি ডাইরেক্টর। আইরিন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব হিসেবে যোগ দেন ২০০১ সালে। আর সেখানে চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ২০০৯ সালে। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১-এর হামলার ন্যক্কারজনক ঘটনায় পৃথিবীর মানবাধিকারের ওপর যে প্রচণ্ড আঘাত আসে, সেই সময়ে এসব নিয়ে কাজ করতে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
তিনি শিক্ষকতা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক ল স্কুলে। তিনি বলেন, এ কাজ আমার খুবই ভালো লেগেছে। শিক্ষকতা সম্বন্ধে তিনি বলেন, জীবনের একটা সময়ে আবার শিক্ষকতা করব। কেননা, বইই আমার প্রাণ। বই পড়া ছাড়া আমি থাকতে পারি না। আইরিন খান বলেন, আমার মা উচ্চ শিক্ষিত নন। তার পরও লেখাপড়া, কাজকর্ম, পেশাগত কাজ ইত্যাদি ব্যাপারে তার কাছ থেকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তিনি সব সময় চাইতেন, তার সন্তানেরা স্বাবলম্বী হোক। স্কুলজীবনে আমরা তিন বোন বেশির ভাগ সময় লাইব্রেরিতে থাকতাম। সেখান থেকে বই ধারে এনে বাসায়ও পড়তাম। তিনি আরো মনে করেন, পড়াশোনা বেশি করার কারণে ভাগ্য আমাকে এত ওপরে এনে দিয়েছে, যা অতীতে কল্পনাও করিনি। ইংরেজি সাহিত্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, উন্নয়ন, কুইসাইন (রন্ধন) ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশোনা তার অনেক বেশি ভালো লাগে। এ দেশের নারীদের জীবনের নানা দিক নিয়ে চিন্তাও করেন আইরিন। তার লেখা বইয়ের নাম ‘দ্য আনহার্ড ট্রুথ’।
রান্না করা, কাঁচাবাজারে যাওয়া ইত্যাদি তার খুবই প্রিয়। তিনি মনে করেন রান্নাবান্না একটি ভালো শিল্পও। শুধু বাঙালি নারী বলে নয়, এটা জানা উচিত সব নারীর। এ সম্বন্ধে তিনি বলেন, আমি মানবাধিকারক কর্মী না হলে হয়তো রান্নাবিদ হতাম। এমনকি রান্না নিয়ে বই লেখার ইচ্ছা আছে তার। রাতে ঘুমাতে একটু দেরি হয় বই পড়ার কারণে। এত কিছুর পরও তিনি বলেন, আমি অলস প্রকৃতির নারী। এতে বোঝা যায় মানুষের কতটা ব্যস্ত থাকা উচিত ভালো নানা কাজে।
আইরিন খান বলেন, কাউকে কোনো কিছুতে সফলতা অর্জন করতে হলে তার পরিবার থেকে ব্যাপক সমর্থন ও সহযোগিতা জরুরি প্রয়োজন। আমি এমনটি পেয়েছি। আইরিন মনে করেন জীবনে বড় হতে হলে ব্যাপক পড়াশোনার যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি দৃঢ় হতে হয় নিজের চাওয়ার প্রতি।