ইসলামি বিশেষজ্ঞদের অভিমত

গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য চরম মূর্খতা ও ধৃষ্টতাপূর্ণ

AGaffarআল্লাহর ৯৯ গুণবাচক নাম, রাসূল সা: ও হিজাবসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে প্রবাসী কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর দেয়া বক্তব্যকে চরম মূর্খতা ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, যার মধ্যে বিন্দুমাত্র ঈমান আছে তিনি এমন কথা বলতে পারেন না। এই ধরনের বক্তব্যে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার অসৎ উদ্দেশ্য নিহিত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক লেকচার সিরিজে একমাত্র বক্তা হিসেবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। তাতে তিনি বলেন, আল্লাহর ৯৯ গুণবাচক নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিল। এগুলো ইসলাম ‘এডপ্ট’ করে, পরে বাংলা ভাষাও এডপ্ট করে। এগুলো এখন আরবি শব্দ। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন আবু হুরায়রা নামের অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। এভাবে আমরা অনেকে নাম রাখি। তিনি বলেন, সাত শ’ বছর ধরে আমরা ‘নামাজ’, ‘খোদা হাফেজ’ শব্দ বলছি। এখন ‘সালাত’, ‘আল্লাহ হাফেজ’ শব্দে পরিণত হয়েছে। এগুলো ওহাবিদের সৃষ্টি। তিনি রাসূল, হিজাবসহ ইসলাম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেন। গতকাল বাংলাদেশের পত্রপত্রিকাসহ সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রচারিত হলে এতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাসিক মদিনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী যা বলেছেন, তা চরম মূর্খতা। যার মধ্যে বিন্দু মাত্র ঈমান আছে সে এমন কথা বলতে পারে না। আল্লাহর গুণবাচক নামের সাথে মূর্তির নামের মিল থাকার যে কথা তিনি বলেছেন এটা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। রাসূল সা: ও হিজাব নিয়ে দেয়া তার বক্তব্যও ঔদ্ধত্বপূর্ণ।
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী শাহ আবদুুল হান্নান বলেন, লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আল্লাহর ৯৯ গুণবাচক নাম নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি না জেনে কথা বলেছেন। আল্লাহর গুণবাচক নাম কোনো দেব-দেবীর নাম ছিল না। আরবদের দেব-দেবীর নাম ছিল লাত, মানাত, ওজ্জা। তিনি বলেন, নিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে কেন এ ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে তা আমি বুঝতে অক্ষম। আমি তার এই মন্তব্যের নিন্দা করি। দুঃখ প্রকাশ করি।
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তক শাহ আবদুল হান্নান আরো বলেন, ‘আরবি কাফেরদের ভাষা’ এটি অত্যন্ত আপত্তিকর কথা। আরবি হজরত ইবরাহিম আ: এর ভাষা। হজরত ঈসমাইল আ: এর ভাষা। আরবি সৌদি আরব-ইরাকসহ ওই অঞ্চলের মানুষের ভাষা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ভাষা ও রঙ আল্লাহর সৃষ্টি। সব ভাষাই মূলত আল্লাহর। মুশরিকেরা যদিও এ ভাষা ব্যবহার করেছেন। তার পরেও বলি আরবি কুরআনের ভাষা। হাদিসের ভাষা। ইসলামি ঐতিহ্যের ভাষা। এ ভাষাকে কাফেরদের ভাষা বলাটা অতি অন্যায়। এ এক আজব প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আরবদের পুরনো নাম বদলানো হয়নি এ কথা ঠিক। কিন্তু এ কথাও ঠিক রাসূল সা: বলেছেন, তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভালো নাম রাখ। মুসলিম ঐতিহ্য হচ্ছে আল্লাহর গুণবাচক নামের সাথে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখা। যেমন- আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান, আবদুর রহিম প্রভৃতি। আবার রাসূল সা:-এর নামের সাথেও মিল রেখে অনেকেই নাম রাখেন। হজরত আবু হুরায়রা রা:কে নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী সঠিক বলেননি। আবু হুরায়রা রা: তার প্রকৃত নাম ছিল না। তিনি বিড়াল ভালো বাসতেন বলেই তাকে ‘আবু হুরায়রা’ উপাধি দেয়া হয়। সুন্দর নাম রাখা ইসলামি ঐতিহ্য।
তিনি বলেন, হিজাব নিয়ে জনাব চৌধুরী যে মন্তব্য করেছেন এটি অতি অন্যায় ও বাড়াবাড়ি। হিজাব অবশ্যই ইসলামের আইডেনটিটি বহন করে। কুরআন-সুন্নাহ ও বিখ্যাত ইমামদের মতে এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিজাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয়া অন্যায়, বাড়াবাড়ি। হিজাব পরে কেউ প্রেম করলে এর জন্য হিজাব দায়ী হবে কেন? হিজাব কি কাউকে প্রেম করতে বলেছে? নামাজ পড়ে কেউ অন্যায় করলে সে জন্য নামাজ দায়ী হতে পারে না।
শাহ আবদুল হান্নান বলেন, মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য অসার। এর কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। এই উপমহাদেশে ১৮৬৫ সালের দিকে দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৬৫ সালের দিকে আলিয়া পদ্ধতির মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হয়। সেখানে কুরআন, সুন্নাহ, ফেকাহ এবং বর্তমানে অন্যান্য বিষয়েও লেখাপড়া করানো হচ্ছে। এ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অন্যায়। বাংলাদেশের মানুষ তার এ বক্তব্য কখনোই গ্রহণ করবেন না। তার বক্তব্যে অনেক রাজনৈতিক বিষয়ও আছে। এসব নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল ড. খলিলুর রহমান মাদানি বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্য একেবারেই অসত্য এবং চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। তিনি জ্ঞানপাপীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আল্লাহর গুণবাচক নাম, রাসূল ও হিজাব সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। তার পরিচয় মুরতাদ। তিনি বলেন, আল্লাহর কোনো গুণবাচক নাম কোনো মূর্তির নামে নেই। এটি একেবারেই ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং ক্ষমার অযোগ্য বক্তব্য। রাসূল সা: সম্পর্কেও তিনি ক্ষমার অযোগ্য কথা বলেছেন। তার শাস্তি হওয়া দরকার। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কোনোভাবেই তাকে দেশে প্রবেশ করতে দেবেন না। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে তার এই ধরনের বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা। আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করে তাদের রাজপথে নামিয়ে দেশ বিদেশে উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি গাফ্ফার চৌধুরী ইচ্ছাকৃতভাবেই কাজটি করেছেন।
হাটহাজারি মাদরাসার সিনিয়র মুফতি কেফায়েত উল্লাহ বলেন, আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো দেব-দেবীর নাম এমন কথা কোনো মুসলমান বলতে পারেন না। কেউ এমন বিশ্বাস পোষণ করলে তার ঈমানই থাকবে না। তিনি বলেন, কাফের-মুশরেকেরা আল্লাহর সিফাতি নামকে বিকৃত করে কিছু মূর্তির নাম রেখেছিল। যেমন- আল্লাহর গুণবাচক নাম আজিজুন কে বিকৃত করে ওজ্জা রেখেছিল। আল্লাহর নামকে বিকৃত করে লাত রেখেছিল। দেব-দেবীর নাম থেকে আল্লাহর সিফাতি বা গুণবাচক নাম হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, যারা নাস্তিক-মুরতাদ তাদেরতো কোনো কথা বলতে বাধে না। তারা যা ইচ্ছা তাই বলতে পারে। এই সময়ে কোন উদ্দেশ্যে এসব অসত্য ও বিভ্রান্তিকর কথা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন তিনিই ভালো করতে পারেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button