গ্রিসে ‘না’ ভোটের জয়জয়কার
দাতাদের কঠোর ব্যয় সঙ্কোচনের শর্ত মেনে ঋণ সহায়তা নেওয়ার পক্ষ-বিপক্ষ যাচাইয়ে গ্রিসে রোববার যে গণভোট হলো তাতে ‘না’ ভোটের জয়জয়কার। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় ভোট শেষ হওয়ার পর সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ৬১ শতাংশ ভোটই পড়েছে ‘না’ পক্ষে।
এরই মধ্যে নিজেদের জয় উদযাপনে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে সিনদাগমা স্কয়ারে জড়ো হয়ে উল্লাস শুরু করেছেন হাজারো মানুষ, যাদের পক্ষগত অবস্থান দাতাদের শর্ত মেনে ব্যয় সঙ্কোচনের বিপক্ষে।
‘না’ ভোটের জয়ের অর্থ হলো- দাতাদের কঠোর ব্যয় সঙ্কোচনের শর্ত মেনে ঋণ সহায়তা (বেইল আউট) নেওয়ার বিরুদ্ধে গ্রিসের নাগরিকরা।
তেইশ বছর বয়সী নিকোস তারাসিস যেমন বললেন, “এই রায় গ্রিসবাসীর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এখন বাকিটা ইউরোপীয়দের বিষয়; তারা এই গণরায়কে সম্মান দেখিয়ে সহায়তার হাত বাড়ায় কি না সেটি তাদের উপরই নির্ভর করছে।”
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গ্রিসের শ্রমমন্ত্রী পানোস কুরলেদিস বলেন, “আজকে এমন একজন গ্রিককে পাওয়া যাবে না যিনি গর্বিত না। কারণ তার দেশের মানুষ সবকিছুর ঊর্ধ্বে গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে।”
“এখন সরকারের পোক্ত জনমত রয়েছে। মধ্যস্ততার ভিত্তি শক্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণে একটি সমঝোতায় পৌঁছার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।”
এর আগে ভোট শেষে প্রকাশিত কয়েকটি জনমত জরিপেও ‘না’ ভোট এগিয়ে থাকার কথা বলা হয়। তবে ওই জরিপ চালানো হয়েছিল ভোটের আগে।
গণভোট সামনে রেখে দেশবাসীর প্রতি ‘না’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানায় সরকার, যদিও সেটা হলে গ্রিসকে ইউরো জোন থেকে বেরিয়ে যেতে হতে পারে বলে হুমকি রয়েছে।
আর্থিক পুনরুদ্ধারে (বেইলআউট) জন্য দাতাদের দেওয়া শর্তগুলো মর্যাদাহানিকর বলে সমালোচনা করে আসছে গ্রিসের ক্ষমতাসীন বামপন্থি সিরিজা পার্টি। গণভোটে শর্তগুলো নাকচ হলে দাতাদের সঙ্গে দ্রুত নতুন চুক্তিতে যেতে সরকারকে সুযোগ করে দেবে বলে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস রোববার বলেছেন, ‘না’ ভোটের বিজয় ‘শুধু ইউরোপে থাকা নয়, ইউরোপে মর্যাদা নিয়ে থাকতে’ গ্রিসের সংকল্পের প্রতিফলন ঘটাবে।
অবশ্য আন্তর্জাতিক দাতারা সতর্ক করেছেন যে, ‘না’ ভোটের বিজয় গ্রিক ব্যাংকগুলোর তহবিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং তা গ্রিসকে একক মুদ্রা ইউরো থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে নিয়ে যাবে।
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়ে একটানা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। এই ভোট সামনে রেখে গ্রিসবাসী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।
‘হ্যাঁ’ পক্ষের সমর্থকদের ধারণা দাতাদের প্রস্তাব মেনে না নিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থার পতনের মধ্য দিয়ে পুরনো ড্রাকমা মুদ্রায় ফিরে যাওয়া তাদের আরও বেশি বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিবে।
অন্যদিকে আরেও ঋণের বিনিময়ে কর বাড়ানো ও পেনশন কাটছাঁটের মধ্য দিয়ে আরও ব্যয়সংকোচন গ্রিসের প্রতি চারজনের একজনকে বেকার বানিয়ে দেবে, এ চাপ গ্রিস নিতে পারবে না।
২০১০ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফ থেকে দুটি বেইল আউটে প্রায় ২৪০ বিলিয়ন ইউরো নেয় গ্রিস। এই অর্থে চলতে থাকে দেশটি, যদিও তার জন্য নাগরিকদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ সময়ে পেনশন, বেতন ও সরকারি সেবায় কাটছাঁট হয় গ্রিসে।
নতুন করে সহায়তার জন্য (বেইল আউট) গ্রিসকে কর বাড়ানোর পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক ব্যয় কমানোসহ কঠিন আর্থিক পুনর্গঠনের শর্ত দেয় ইউরোজোন।
ইউরোজোনের সঙ্গে টানাপোড়েনে মধ্যে সংকট ঘনীভূত হয় গ্রিসে। সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকগুলো বন্ধ রাখে সরকার, পাশাপাশি এটিএম বুথ থেকে দিনে ৬০ ইউরোর বেশি না তোলার বিধান জারি করা হয়।
ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক জরুরি ভিত্তিতে তহবিল না দিলে কয়েকদিনের মধ্যে এটিএম বুথগুলোও টাকার সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।